অজ্ঞান পার্টির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না পুলিশও

এই মূহূর্তে রাজধানীতে সবচেয়ে বড় যন্ত্রণার নাম অজ্ঞান পার্টি। এদের পাল্লায় পড়ে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। এদের হাত থেকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত কয়েকদিনে কয়েকজন র‌্যাব-পুলিশের সদস্য অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েছেন।

যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ, ফেরিতে, হকার কিংবা সহযাত্রী-বন্ধু সেজে সাধারণ মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে এই অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।

রাজধানীতে সম্প্রতি এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটে। আর পুলিশ বলছে, এদের দৌড়াত্ম্য থামাতে পুলিশের একটি বিশেষ দল মাঠে কাজ করছে। অনেককে ধরে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে তাদের কোনোভাবেই নির্মূল করা যাচ্ছে না। এমনটাই জানালেন ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ক্যাম্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২৪ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়েছেন র‌্যাবের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল হালিম। এ সময় তার কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল সেট নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।

ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে হালিমকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন রমনা থানা পুলিশ ও র‌্যাবের আরেক সদস্য। পরে তার পাকস্থলী পরিষ্কার করা হয়।

র‌্যাব-১০ এর এক কর্মকর্তা জানান, হালিম র‌্যাব-১০ এর ধলপুর ফাঁড়িতে কর্মরত আছেন। পাবনায় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য সকালে অফিস থেকে বের হন। ধারণা করা হচ্ছে সায়েদাবাদ থেকে বাসে উঠে গাবতলী যাওয়ার পথে কিছু খাইয়ে কিংবা নাকে কিছু শুঁকিয়ে অচেতন করা হয় তাকে। এরপর তাকে রমনা থানার পাশে ফেলে যায় সংঘবদ্ধচক্রের সদস্যরা। তার কাছে থাকা নগদ ৩৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট নিয়ে যায় ওই চক্রের সদস্যরা। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে।

গত বছরের ৬ ডিসেম্বর আব্দুস সালাম নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক সদস্য অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে সব হারান। পরে তাকে শাহবাগ থানার এসআই সফিয়ার রহমান অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। আইডি কার্ডের সূত্র ধরে আব্দুস সালামের পরিচয় মেলে।

ওই এসআই জানিয়েছিলেন, পল্টন ইউবিএল ক্রসিংসংলগ্ন ফুটপাতে আব্দুস সালামকে পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা পুলিশকে খবর দিলে তাকে উদ্ধার করা হয়। তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য। তার মোবাইল ফোন ও পকেটে থাকা মানিব্যাগ না থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তার এ অবস্থা হয়েছে।

একই দিন প্রায় একই সময়ে গুলিস্তান থেকে অজ্ঞাত (৪০) এক ব্যক্তিকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আব্দুল খালেক নামের একজন পথচারী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। ঢামেক পুলিশের ক্যাম্প ইনচার্জ মোজাম্মেল হক জানান, ধারণা করা হচ্ছে তিনিও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের খপ্পরে পড়েছিলেন।

২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কামাল আজাদের গ্যানম্যান লুৎফর রহমান (৩৫) অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়েন। এসময় তার কাছে থাকা ১০ হাজার টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইলটিও খোয়া যায়। পরে খবর পেয়ে রমনা থানার এএসআই আলাউদ্দিন তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করান।

তিনি জানান, ওইদিন সন্ধ্যার আগে লুৎফর রহমান পার্কে হাঁটতে গিয়েছিলেন। সেখানে ডাবের পানি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার এ অবস্থা হয়।

এর আগে গত বছরের ২৪ মে রাজধানীর মহাখালীতে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন রকিবুজ্জামান নামে পুলিশের এক কনস্টেবল। এসময় তার কাছে থাকা ৭০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোনটিও খোয়া যায়। রকিবুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। একটি কাজে ঢাকায় আসার পথে তার এ অবস্থা হয় বলে জানান তেজগাঁও থানার এসআই নজরুল ইসলাম।

এছাড়া গত কয়েকদিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও একাধিক ব্যক্তি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাদের অনেকেই এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কারো ব্যবসার টাকা, কারো জমি বিক্রির টাকা আবার কারো বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা তুলে নিয়ে ফেরার পথে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সবকিছু খোয়া যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, এই চক্রের সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম রাজধানীতে কাজ করছে। প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো চক্রকে পাকড়াও করা হচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু আদালত থেকে তারা জামিন নিয়ে বেরিয়ে আবারও একই কাজ করছেন। রাজধানীতে প্রায় ২৫টির মতো অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় চক্র কাজ করছে। এদের সব সময় ধরাছোয়ার বাইরে থাকে। তাদেরও ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, যেকোনো যানবাহনে ভ্রমণের সময় অপরিচিত কারো এবং কোনো হকারের দেওয়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কাউকে সন্দেহ হলে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে হবে। জনগণ রাস্তায় যাতে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে সে ব্যাপারে ডিএমপির প্রচেষ্টা সব সময় রয়েছে বলে জানান তিনি।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই