অন্যরকম কিছু উপত্যকার গল্প

উপত্যকার কথা শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে ঢেউ মেশানো ভূমির কথা। যেগুলো না পাহাড়ের মতন বড়, না সমতলের মতন সমান। অনেকেই অবশ্য উপত্যকা আর পাহাড়কে গুলিয়ে ফেলেন মাঝে মঝে। কিন্তু তাও তো উপত্যকা নামটি শুনলে কিছু একটার ছবি মাথায় ভেসে ওঠে আপনার। কিন্তু এবার এমন দুটো আজগুবী উপত্যকার কথা বলব আপনাকে এগুলোর নাম শুনলেও মোটেও সেগুলোকে কল্পনায় আনতে পারবেননা আপনি। আর শেষমেশ যদি কল্পনয় আনতেও পারেন তবুও সেটা বাস্তবের ধার-কাছ দিয়েও যে যাবেনা সেটা খুব সহজেই বলে দেওয়া যায়। দেখতে চান আজগুবী সেই উপত্যকাগুলোকে? চলুন, দেখে আসি।

১. বলে মোড়া উপত্যকা

পশ্চিম কাজাকিস্তানের শেটপি শহরের কাছেই, পশ্চিম কারাতাওয়ের উত্তর চূড়ায় অবস্থিত বিস্তীর্ণ এক প্রান্তর সেটা। কী আছে সেখানে? পাললিক শিলা আর মাটি দ্বারা তৈরি গোলাকৃতির বলকে খুঁজে পাবেন আপনি এই প্রান্তরে। ভাবছেন, এটা আবার এমন কি? এমন পাললিক শিলার বলতো পৃথিবীর আরো অনেক স্থানেই রয়েছে। এইতো, নিউজিল্যান্ডের মোইরাকি বোউল্ডার্সইতো তার সবচে বড় উদাহরণ। হ্যাঁ, তা ঠিক। এমন পাথর পৃথিবীতে অনেক স্থানেই আছে বটে। তবে সেগুলোর থেকে অনেকটাই আলাদা কাজাকিস্তানের টরিশ বা বলের উপত্যকাতে এলে আপনি দেখতে পাবেন হাজার হাজার এমন বল। তার কোন কোনটা আবার প্রচন্ড বিশালাকৃতির! এক কথায়, এই ভ্যালি অব বলস বা বলের উপত্যকায় মার্বেল আকৃতির পাথরের বল থেকে শুরু করে গাড়ির মতন দেখতে বলও খুঁজে পাবেন।

ব্যাসার্ধে গড়ে ৩-৪ মিটারের এই বলগুলো এক ধরনের শক্ত পাথুরে খনিজ দ্বারা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হয়। বেশিরভাগ বলের আকৃতিই গোল হলেও মাঝে মাঝে এদের ভেতরে একটু আলাদা আকৃতির ছোঁয়াও দেখতে পাওয়া যায়। এমন একটি স্থানে এতগুলো বল কীভাবে এল সেটা জানার চেষ্টা করেছেন আজ পর্যন্ত অনেকেই। তবে খুব ভালো কোন গবেষণা করা হয়নি। মনে করা হয় অগ্ন্যুত্পাতের ফলে তৈরি হওয়া প্রচন্ড শক্ত কোন গোলাকৃতির পিন্ডকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে জমাট বেধেছে মাটি, পাললিক শিলাসহ আরো অনেক খনিজ। আবহাওয়ার নানারকম উপাদান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে একানে। আর জমাট বাঁধা এই পদার্থগুলো তৈরি করেছে একটি বা দুটি নয়, অসংখ্য বলকে।

এই উপত্যকায় বেড়াতে আসতে চাইলে গাড়ি হতে পারে আপনার জন্য একটা চমত্কার মাধ্যম। বিশাল বিশাল সব পাথরের মাঝ দিয়ে গাড়ি যাওয়ার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে এখানে। এছাড়াও পাশের শেরকালা উপত্যকা থেকেও খুব সহজেই ভ্যালি অব বলসকে দেখতে পারেন আপনি।

২. স্ফটিকের উপত্যকা

নীচে অগণিত এবড়ো-খেবড়ো স্ফটিক পাথরের সারি আর উপরে নীল আকাশে উড়ে যাওয়া সাদা মেঘের ভেলা! মাঝে মাঝে সেখান থেকে এসে পড়ছে খানিকটা সূর্যের সোনালি আলো। স্ফটিকের উপত্যকার গায়ে সেগুলো খানিক পরপরই এঁকে দিয়ে যাচ্ছে নানারকম মায়াবী গল্প। উপত্যকার পাশে থাকা খালগুলোতে সূর্যের খানিকটা রশ্মি চমকে উঠছে মাঝে-মধ্যেই। অদ্ভূত এক আলোড়ন তুলে দিয়ে যাচ্ছে সেই বিকিরণ পাথরের শরীরে। মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছে পাথর আর পানির ওপরে পড়া পাথরের ছায়া। কী ভাবছেন? স্বর্গের কোন বর্ণনা দিচ্ছি বুঝি? না! স্বর্গ নয়। পৃথিবীরই এক অংশ এটি। আর অদ্ভূত মায়াবী প্রাকৃতিক এই স্থপনার নাম হচ্ছে গ্রানাইট ডেলস।

আজ থেকে প্রায় ১.৪ কোটি বছর আগে অ্যামেরিকাতে অবস্থিত অ্যারিজোনার প্রেসকটে একটু একটু করে গড়ে উঠতে থাকে এই অসামান্য স্থাপনাটি। যদিও সেসময় এর গভীরতা ছিল ২ থেকে ৩ কিলোমিটার। তবে সে অনেক আগের কথা। এরপর থেকেই প্রকৃতি একটু একটু করে খুব যত্ন নিয়ে সাঁজিয়ে তুলতে থাকে গ্রানাইট ডেলসকে। ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবার সামনে একটু একটু করে জেগে উঠতে থাকে এটি। কোথাও গোলাকার, কোথাও উদ্ভট কোন আকৃতি নিয়ে শেষ অব্দি পুরোপুরি সবার সামনে নিজেকে মেলে ধরে গ্রানাইট স্ফটিকের উত্যকার পাথরগুলো খুব তাড়াতাড়িই।

তবে শুধু উপত্যকাই নয়, প্রেসকটের উত্তরে অবস্থিত গ্রানাইট ডেলসে রয়েছে অসামান্য সৌন্দর্যের অধিকারী দুটো জলাধার- ওয়াটসন খাল ও উইলো খাল। রয়েছে পিভেইন ন্যাশনাল রিক্রিয়েশন ট্রেইল। যেটা কিনা প্রেসকট আর ফোনিক্স রেলওয়েকে অনুসরণ করে সোজা এগিয়ে গিয়েছে গ্রানাইট ডেলসের মাঝ দিয়ে।

তবে কি গ্রানাইট ডেলস কেবলই প্রকৃতি আর সৌন্দর্যকে দেখবার পক্ষে আদর্শ? না! এখানে এসে প্রকৃতিকে দেখার সাথে সাথে আপনি উপভোগ করতে পারবেন হাইকিং, বনভোজন, নৌকা ভ্রমণ কিংবা পাখি দর্শনও! খুব বড়সড় পশু না থাকলেও হরিণ, এলক, বন্য শূকরসহ ছোটখাটো বেশকিছু পশু রয়েছে এই এলাকায়। মোটকথা, যেকোন পর্যটকের মন পুরোপুরি ভরিয়ে দেওয়ার মতন জায়গাই বটে স্ফটিকের এই উপত্যকা!



মন্তব্য চালু নেই