অপুষ্ট শিশুদের জন্য বিশেষ খাদ্য তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে

বাংলাদেশে মারাত্মক অপুষ্টির কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর সঠিকভাবে চিকিৎসা না হওয়ায় এসব শিশুদের অনেকের প্রাণহানিও ঘটতে পারে। তবে অপুষ্টি থেকে এখন শিশুদের জন্য বিশেষ খাদ্যের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য দিয়েছে।

প্রতিবেদনে ১১ মাস বয়সী শিশু সালমার কথা বলা হয়। এ বয়সের একটি শিশুর ওজন থাকার কথা আনুমানিক ৮ কেজি। কিন্তু সালমার ওজন ছিল মাত্র ৪ কেজি। সম্প্রতি তাকে ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অবস্থায় রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআরবি’র হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সালমার এ অবস্থাকে অপুষ্টিতেজনিত কারণ হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকরা। বলছেন, এমন ভয়াবহ অপুষ্টিতে শিশুদের প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সালমার বাবা স্বল্প উপার্জনের একজন রিকশাচালক। পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি ঘনঘন ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগের সংক্রমণ শিশুটির ওজন কম থাকার কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

শিশুটিকে জটিল ধরনের মারাত্মক তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত রোগী হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং সে অনুসারে চিকিৎসা দেয়া হয়।

প্রায় কুড়ি দিন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার পর শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠে। হাসপাতাল ছাড়ার সময় তার ওজন ২ কেজি বাড়ে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এই চরম অপুষ্টিতে সালমার মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারতো। কারণ একটি সুস্থ বাচ্চার তুলনায় মারাত্মক তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ১০ গুন বেশি।

আর অনেক শিশুর মস্তিষ্কের গঠন অপুষ্টির কারণে তীব্রভাবে ব্যাহত হয়।

মারাত্মক অপুষ্টির শিকার শিশুদের জন্য উদ্ভাবন

প্রতিবেদনে জানানো হয়, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ৬ লাখ শিশু মারাত্মক তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। বাংলাদেশেও বহু শিশু এমন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। ধীরে ধীরে তাদের পাকস্থলী ছোট হয়ে যায়। মূলত দরিদ্র বাবা-মায়েদের সন্তানেরা বাংলাদেশে এধরনের মারাত্মক তীব্র অপুষ্টির শিকার।

এইসব শিশুদের রোগ শনাক্ত করতে এবং চিকিৎসা দেয়ার উদ্দেশ্যে ঘরে বসে ব্যবস্থা নেয়া যায় এমন পদ্ধতি জরুরি।
আর এই লক্ষ্যেই আইসিডিডিআরবির পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা কেন্দ্রের পরিচালক ডক্টর তাহমীদ আহমেদ এর নেতৃত্বে আইসিডিডিআরবির পুষ্টিবিজ্ঞানীরা মারাত্মক তীব্র অপুষ্টিতে ভূগছে এমন শিশুদের জন্য দুটো বিশেষ খাবার তৈরি করেছেন।

এর একটি চাল ও ডাল দিয়ে তৈরি। অন্যটি ছোলা দিয়ে তৈরি। উদ্ভাবকরা বলছেন, কোনও জলীয় পদার্থের উপস্থিতি না থাকায় এগুলো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে না।

খাবার দুটোর নাম দেয়া হয়েছে ‘স্বর্ণালী ১’ ও ‘স্বর্ণালী ২’। বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাসপাতাল ও বেসরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে এগুলো পাঠানো হবে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের মাঝে এই খাবার বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।

চাল, ডাল ও ছোলা দিয়ে তৈরি হওয়ায় ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়াসহ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের জন্যও এটি উপযোগী হবে, বলছেন আইসিডিডিআরবির গবেষকরা।

সোমবার থেকে শুরু হওয়া দুদিনের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আইসিডিডিআরবি এসব তথ্য তুলে ধরে।



মন্তব্য চালু নেই