অবশেষে অব্যাহতি পেলেন হাজি সেলিম

অবশেষে ধানমন্ডিস্থ সরকারি সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেন ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও মদিনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাজি মো. সেলিম।

রাজধানীর ৫ গ্রিন স্কয়ারের ধানমন্ডিস্থ সরকারি সম্পত্তি দখল করে ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ করেছেন হাজি সেলিম, এমন অভিযোগের সত্যতা পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাই দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে কমিশন বৈঠকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি নথিভুক্তির (অব্যাহতি) মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গতকাল সোমবার দুদক সচিব মো. মাকসুদুল হাসান সাক্ষরিত এক আদেশনামা সূত্রে একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এর মাধ্যমে প্রায় দুই বছরের অনুসন্ধান শেষে সাংসদ হাজি সেলিম সরকারি সম্পত্তি দখলের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন। এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে দুদেকর অনুসন্ধান কর্মকর্তা কমিশনের কাছে অভিযোগটি নথিভুক্তির (অব্যাহতি) সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ধানমন্ডির ৫ গ্রিন স্কয়ার, গ্রিন রোডে অবস্থিত ভবনটির স্বাধীনতার বহু পূর্বে (তৎকালীন ৬/২ গ্রিন স্কয়ার) ডিএস এবং এসএ খতিয়ানমূলে মালিক ছিলেন সৈয়দ কাসেম আলী। পরবর্তী সময়ে সৈয়দ কাসেম আলীর কাছ থেকে তার একমাত্র কন্যা সৈয়দা নাহিদা কাসেম আলী ওয়ারিশসূত্রে মালিকানা অর্জন করেন। উক্ত সম্পত্তিতে অবস্থিত ভবনটি পাকিস্তান আমলে এলডিএল নামের প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়ছিল।

স্বাধীনতার পর ভবনটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। পরবর্তী সময়ে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১৯৮৬ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে।

দুদক সূত্রে আরো জানা গেছে, স্বাধীনতার অনেক পরে ভবনটির মালিকানা স্বত্ব দাবি করে ১৯৯২ সালে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করে ঢাকার আজমল রোডের বাসিন্দা মো. শফিকুল্লাহ। তার দাবি ছিল, নাহিদা কাসেম তার কাছে সম্পত্তি বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু টাকা নিয়েছেন। কিন্তু জমিটি বুঝিয়ে দেননি। তাই আদালতের কাছে সম্পত্তি বুঝে পাওয়ার আবেদন করেন।

সূত্র জানায়, পরবর্তী সময়ে সহকারী জজ আদালতের মাধ্যমে সৈয়দা নাহিদা কাসেম আলীর কাছ থেকে মো. শফিকুল্লাহ সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করেন। যদিও নাহিদা কাসেম আলীকে খুঁজে পাননি আদালত। আদালতের রায় ও ডিক্রির মাধ্যমে সম্পত্তিটির পরিপূর্ণ মালিকানা অর্জন করেন শফিকুল্লাহ। পরবর্তী সময়ে মো. ইব্রাহিম মিয়া নামের এক ব্যক্তি মো. শফিকুল্লাহর পক্ষ থেকে আমমোক্তার নিযুক্ত হন। আমমোক্তারনামায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. ইব্রাহিম মিয়া ১৯৯৮ সালের ২৭ মে সম্পত্তিটি প্রায় ৩ কোটি টাকায় (জমির দলিলে বিক্রয়মূল্য ৪০ লাখ টাকা) হাজি মো. সেলিমের নিকট বিক্রি করেন। ফলে তিনি ক্রয় সূত্রেই সম্পত্তির মালিক হন। এই জমির পুরোনো ভবন ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করে হাজি সেলিমের প্রতিষ্ঠান মদিনা গ্রুপ। যেখানে বর্তমানে হাজি সেলিম নিজস্ব অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন।

সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক সম্পত্তি দখলের অভিযোগ ওঠে। পরে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে দুদকের উপপরিচালক মো. বেনজীর আহম্মদকে অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য কমিশন নিয়োগ দেন। অনুসন্ধানকালে হাজি সেলিম ছাড়া অন্য কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেননি দুদক কর্মকর্তা। কারণ হিসেবে দুদক সূত্রে জানা গেছে, মো. শফিকুল্লাহ বর্তমানে সপরিবারে কানাডায় অবস্থান করছেন। আর মো. ইব্রাহিম মিয়া ২০১৪ সালের প্রথম দিকে মারা যান। ফলে কাউকেই দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। অনুসন্ধান পর্যায়ে একবার প্রতিবেদন জমা দিলেও বেশ কিছু কোয়ারি দিয়েছিল কমিশন। সেই কোয়ারির উত্তরসহ পুনরায় প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

এদিকে হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দুদকের দায়ের করা মামলায় ১৪ কোটি ৬৫ লাখ ৬২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ৮ কোটি ৭০ লাখ ৯ হাজার ৭০০ টাকার সম্পদ গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। ওই মামলায় হাজি সেলিমের ১৩ বছর কারাদণ্ড, তার স্ত্রী ও ছেলের ৩ বছর কারাদণ্ড হয়েছিল, যা আপিলের পর ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট বাতিল করেন। পরবর্তীতে দুদকের আপিলের প্রেক্ষিতে খালাসের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে আপিল শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।



মন্তব্য চালু নেই