অবশেষে ওসামা বিন লাদেনের সন্ধান পাওয়া গেল!

আল-কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু এবং তাঁর বিরুদ্ধে চলা আভিযান নিয়ে মার্কিন প্রশাসন সঠিক তথ্য দেয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী বিখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক সিমুর এম হার্শ। লন্ডন রিভিউ অব বুকসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সিমুর লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে নেভি সিলদের অভিযানে লাদেন নিহত হওয়ার যে গল্প হোয়াইট হাউজ শুনিয়েছে, সেটা লুইস ক্যারোলের রূপকথার গল্পের মতোই।’ নিবন্ধে তিনি জানিয়েছেন, বিন লাদেনের লাশ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়নি, বরং তাকে আফগানিস্তানে কবর দেওয়া হয়েছে।

প্রকাশের পরই হার্শের প্রবন্ধটি তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক পত্রিকাতেই তাঁর এই আলোচিত লেখাটি প্রকাশিত হয়। নিবন্ধটি সম্পর্কে লন্ডন রিভিউ অব বুকসের নির্বাহী এডওয়ার্ড লাইগে রয়টার্সকে জানান, হার্শের লেখাটি প্রকাশ হওয়ার পর ওয়েবসাইটে এত পরিমাণ ট্রাফিক বেড়ে যায় যে, চাপ সামলাতে না পেরে সাইটটিই সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

আমেরিকা ও পাকিস্তানের সাবেক এক উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে নিবন্ধে তথ্যগুলো জানিয়েছেন হার্শ। তবে তিনি ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার পরিচয় জানাননি। তিনি জানান, লাদেনের অ্যাবোটাবাদে থাকার কথা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টিলিজেন্স (আইএসআই) জানত এবং তারা লাদেনের খবর সার্বক্ষণিক মার্কিন কর্মকর্তাদের দিত। লাদেনকে ধরার অভিযানে তারা একে অপরকে সহায়তা করেছে।আর এতে জড়িত ছিলেন উভয় রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের মাত্র কয়েকজন কর্মকর্তা। অ্যাবোটাবাদে মার্কিন অভিযান সম্পর্কে পাকিস্তান জানে না বলেও যে তথ্য প্রচার করা হয় তাও সত্য নয় বলে নিবন্ধে জানান হার্শ।

লাদেনকে গোপন অভিযানে হত্যার বিষয়টিকে হার্শ তাঁর নিবন্ধে বারবার ‘নাটক’ বলে অভিহিত করেন। নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১১ সালে উত্তর পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে যে বাড়িতে বিন লাদেনকে দুর্ধর্ষ অভিযানে মারা হয়েছিল সেটি ছিল একটি সাজানো নাটক। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পাঁচ বছর ধরেই সেই বাড়িতে লাদেনকে বন্দি রেখেছিল। সেদিন মার্কিন নেভি সিলরা যেখানে অভিযান চালিয়েছিল সেখানে কোনো বন্দুকযুদ্ধ হয়নি। সেদিন যে কয়টি গুলি ছোড়া হয়েছিল সেগুলো ছিল শুধু লাদেনকে হত্যার জন্য ছোড়া গুলি। এ ছাড়া কোনো গোলাগুলি সেখানে হয়নি। সিমুর হার্শ আরো জানান, ওই বাড়িতে পাঁচ বছর ধরে লাদেনের রক্ষণাবেক্ষণে অর্থায়ন করেছে খোদ সৌদি আরবের রাজপরিবার।

নিবন্ধের শেষভাগে তিনি জানান, বিন লাদেনের লাশ সাগরে ফেলে দেওয়ার কথাটিও ছিল অসত্য। মার্কিনিদের সাথে ঘনিষ্ঠ তাঁর পরিবারের কয়েক সদস্যের অনুরোধে তাঁকে আফগানিস্তানে দাফন করা হয়। এক কথায় হার্শের বক্তব্য অনুযায়ী আলোচিত ওই অভিযান নিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে মার্কিন এবং পাকিস্তানের সবাই প্রায় সবকিছু নিয়েই মিথ্যা বলেছেন।

হার্শের এই নিবন্ধ প্রকাশের পর আজ মঙ্গলবার লন্ডন রিভিউ অব বুকসে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক পিটার বার্গেনের একটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি সিমুর হার্শের যুক্তি ও দাবিগুলো খণ্ডন করেছেন। তিনি বলেন, লাদেন অভিযান নিয়ে সিমুর হার্শের বক্তব্য আবোল তাবোল অর্থহীন কথাবার্তা। নিরাপত্তা বিশ্লেষক পিটার তাঁর যুক্তির সপক্ষে ওই নেভি সিল অভিযানের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।



মন্তব্য চালু নেই