অবশেষে ৫ বছর পর কথা বললো ‘বাকরুদ্ধ’ ফারজানা

টাঙ্গাইলের সখীপুরে পাঁচ বছর পর শিক্ষক ও সহপাঠীদের চেষ্টায় অবশেষে কথা বললো জেএসসি পরীক্ষার্থী বাকরুদ্ধ ফারজানা আক্তার (১৩)।

২০১২ সালে তার বাবা প্রবাসে যাওয়ায় সময় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই দিন থেকেই ফারজানা বাকরুদ্ধ ছিল বলে তার মা মমতা বেগম ও বড়চওনা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান তাহের জানিয়েছেন।

ফারজানা উপজেলার দাড়িপাঁকা গ্রামের ওয়াহেদ আলীর মেয়ে ও বড়চওনা গার্লস স্কুলের চলতি জেএসসি পরীক্ষার্থী।

ফারজানার পরিবার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, জন্মের পর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সে পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলাসহ হাসাহাসি এবং স্কুলেও পড়াশোনা করতো।

২০১২ সালের জানুয়ারিতে ফারজানার বাবা ওয়াহেদ আলী একমাত্র আদরের মেয়েকে রেখে প্রবাসে যান। বাবার প্রবাসে যাওয়ার কষ্ট সইতে না পেরে সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চঞ্চলা মেয়েটি হঠাৎ করেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

এরপর পরিবার এবং তার স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গেও সে কথা বলতো না। স্কুলে যেতো ছেলেদের মতো প্যান্ট-শার্ট পরে। ফারজানা শুধু ক্লাসে পড়া শুনেই যেতো বলতে পারতো না। এ নিয়ে শিক্ষকরা প্রায়ই তার ওপর মারমুখী অবস্থান নিতেন। সেই সঙ্গে সহপাঠীরাও বিরক্তবোধ করতো।

কথা না বলার অপরাধে একদিন বড়চওনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তাকে তাড়িয়েও দেয়া হয়। পরে তাকে বড়চওনা গার্লস স্কুলে ভর্তি করেন তার মা। মুখে কোনো কথা কোনো হাসিও নেই। ছেলেদের পোশাক পরে সাইকেল নিয়ে নিয়মিত ক্লাস করতো সে। কেউ কোনো প্রশ্ন করলে সে লিখে জবাব দিতো।

ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বাংলাদেশ টেলিভিশনের গীতিকার ও সুরকার আতিকুর রহমান ফারজানাকে কী করে আগের মতো কথা বলানো যায় এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী ও ফারজানার সহপাঠীদের বিভিন্ন কৌশল শিখিয়ে চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন।

অবশেষে দীর্ঘ ৫ বছর পর শিক্ষক-কর্মচারী ও সহপাঠীদের বন্ধু সুলভ আচরণ ও কথা বলানোর নানা কৌশল অবলম্বনের পর কয়েকদিন আগে সে কথা বলে।

ছেলেদের পোশাক পরিবর্তন করে মেয়েদের পোশাক পরতে শুরু করে। সে আজ চলতি জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।

দীর্ঘদিন পর ফারজানার মুখের কথা শুনে তার মা, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক-কর্মচারী এবং সহপাঠীদের মাঝে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। ফারজানা নিজেও কথা বলতে পেরে সহপাঠীদের সঙ্গে সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারায় শিক্ষক-কর্মচারী ও সহপাঠীদের বন্ধুসুলভ আচরণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

ফারজানার মা মমতা বেগম বলেন, মানুষ গড়ার কারিগর তাহের স্যারের অক্লান্ত পরিশ্রম আর বন্ধুসুলভ আচরণের কারণে আজ আমার মেয়ে ৫ বছর পর কথা বলতে পারছে। তিনিও ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ও সহপাঠীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এ প্রসঙ্গে বড়চওনা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান তাহের বলেন, সব ধরনের কৌশল অবলম্বন ও মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে ৫ বছর পর ফারজানাকে কথা বলাতে সক্ষম হয়েছি। এমনকি চলতি জেএসসি পরীক্ষায়ও সে অংশগ্রহণ করেছে। আশা করি সে ভালো ফলাফলও করবে।



মন্তব্য চালু নেই