অবিস্বাশ্য ভাবে হুইলচেয়ারে থেকেও এভারেস্ট জয় করলেন যিনি!

এভাবেও ফিরে আসা যায়! কী বলবেন একে! মিরাকল? না, কিছুতেই নয়। গল্পটা শুনলে মিরাকল মনে হলেও, এটা কিছুতেই মিরাকল নয়। অদম্য মানসিক জোর? স্রোতের প্রতিকূলে এগিয়ে চলার চ্যালেঞ্জ? না, এই শব্দচয়নগুলোও খুবই সামান্য কেন্টন কুলের কৃতিত্বের কাছে।

ব্রিটেনের কেন্টন কুল। মারাত্মক দুর্ঘটনায় দুটো গোড়ালি চুরচুর হয়ে গিয়েছিল। কেন্টনকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ডাক্তাররা বলে দিয়েছিলেন, আর কোনওদিন পাহাড়ে চড়তে পারবেন না কেন্টন। কিন্তু পাহাড় যে কেন্টনের ধমনীতে, নেশায়, মজ্জায়-মজ্জায়। নিজেকে ২০টা বছর সময় দিয়েছেন। এখন এভারেস্টের অভিযাত্রীদের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ও দক্ষ গাইড কেন্টন কুল। কয়েক হাজার ফিট পাড়ি দেওয়া এখন তার কাছে ছেলেখেলার সামিল। এতটাই, যে একই সপ্তাহে দু-দু’বার এভারেস্টের চূড়োয় চড়া, স্কি-তে প্রথম ব্রিটিশ হিসেবে একের পর এক রেকর্ড করা এগুলো এখন তার বাঁ হাতের খেল।

ছোটবেলা থেকেই পাহাড় টানে কেন্টনকে। তার বয়স যখন ২২, তখনই তার জীবনে নেমে আসে এক বিপর্যয়। নর্থ ওয়েলসে একটি খাদের ধার থেকে প্রায় ১৫ ফিট নীচে পড়ে গিয়ে, দু’টো গোড়ালি গুঁড়িয়ে যায়। কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ডাক্তাররা। আর পাহাড়ে নয়। সেই সময় ঠিকমতো হাঁটতেও পারতেন না কেন্টন। কিন্তু, তাতে কী? পাহাড় যে তার ধ্যান-জ্ঞান, চালিকাশক্তি। সেদিনই কেন্টন নিয়ে নেন মারাত্মক কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। ‘আমায় সবাইকে ভুল প্রমাণ করতে হবে। আমাকে আবার পাহাড়ে চড়তে হবে।’

এরপর পেরিয়ে যায় দু’দশক। কঠিন পরিশ্রম ও কষ্ট সহ্য করে আজ আবার স্বমহিমায় কেন্টন কুল। এভাবে ফিরে আসার পর তার জীবনপঞ্জি শুনলে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয়। কেন্টনই প্রথম ব্রিটিশ, যিনি এ পর্যন্ত ১১বার এভারেস্টে চড়েছেন। ২০০৬ সালে তিব্বতের চো ইউ পর্বতশৃঙ্গের ৮,০০০ মিটার উচ্চ চূড়া থেকে স্কি করে নেমে আসেন কেন্টন। এই কৃতিত্বও আর কোনও ব্রিটিশের নেই।

৪২ বছর বয়সে এসে কেন্টন কুল হলেন এভারেস্টের সেলিব্রিটি গাইড। তার তত্ত্বাবধানে থাকা ৮০% অভিযাত্রী সফলভাবে এভারেস্টের চূড়োয় উঠতে পেরেছেন। যারা অপেশাদার অভিযাত্রী, পাহাড়ের টানেই এভারেস্ট অভিযানে আসেন, তাদের থেকে মার্কিন ডলারে ছ অঙ্কের পারিশ্রমিক নেন কেন্টন। তার চোখে, ‘পাহাড় একটা দারুণ জিনিস। পাহাড় সেলিব্রেট করার জন্য। আমি চাই মানুষ ইতিহাস জানুক আর অভিযাত্রীদের শ্রদ্ধা করুক।’
নেপালি বন্ধু দোরজে জিলজেনের সঙ্গে সাতবার এভারেস্টের উচ্চতা মেপেছেন কেন্টন। ছ ফিট উচ্চতার কেন্টন লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভৌগেলিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। সেইসময়ই ১৯৯২ সালে প্রথম হিমালয় অভিযান করেন তিনি। প্রথমবারেই নেশা ধরে যায়। সেই শুরু। নর্থ ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও আল্পসে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

এরপর থেকে পাহাড়কে নতুন করে আবিষ্কার করতে শুরু করেন কেন্টন কুল। ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা-বিপত্তি, ঘটনা-দুর্ঘটনা – কোনও কিছুই পাহাড়ের থেকে দূরে রাখতে পারেনি কেন্টনকে। স্ত্রী ও সন্তানদেরও সময় দেন। বছরে ছ মাস।

এখনও মাঝে মাঝে পিঠে, হাঁটুতে ও গোড়ালিতে প্রবল যন্ত্রণা হয়। জেগে ওঠে পুরনো চোট। হামাগুড়ি দিয়ে উঠতে হয় বাড়ির কয়েক ধাপ সিঁড়ি। কিন্তু, যখনই আবার পাহাড়ের ডাক আসে, সবকিছু ভুলে আকাশ ছুঁতে পাড়ি দেন কেন্টন কুল। এরপরেও এঁকে আসল ক্যাপ্টেন কুল না বলে পারা যায়? হ্যাটস অফ।



মন্তব্য চালু নেই