ক্রমেই বাড়ছে পারিবারিক দ্বন্দ্ব

অভাবের সংসারে কিরণমালার ছোবল

ঈদ বলে কথা। নিজের জন্য কিছু কিনুক আর নাই কিনুক তাতে কিছুই আসে যায় না বাবা-মায়ের। শুধু চান, সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে। এজন্য তাদের চেষ্টারও কোনো ত্রুটি থাকে না। সাধ্যমতো চেষ্টা করেন ঈদের জন্য অন্তত একটি পোশাক কিনে দিতে। কিন্তু সন্তানের পছন্দের পোশাকটি যদি হয় সাধ্যের চেয়ে অনেক বেশি দামের তবে কি আর সম্ভব হয়?

হ্যাঁ পাঠক, গেলো বছর যে ‘পাখি’ নামের পোষাক কিশোরী-তরুণীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল তা ছাড়িয়ে এবার ‘কিরণমালা’ নামের পোশাকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়ছে তারা। এতে ধনী-গরিব নেই অধিকাংশ পরিবারের মেয়েদেরই পছন্দ যেন ভারতীয় সিরিয়ালের কিরণমালা চরিত্রের নামে নামকরণ করা পোশাকটি। এ সুযোগে বিক্রেতারাও চড়া দামে বিক্রি করছেন এসব পোশাক।

এদিকে, ধনী পরিবারের কিশোরী-তরুণীরা দেদারসে এ পোশাক কিনলেও বিপাকে পড়েছেন অভাবী আর অস্বচ্ছল বাবা-মায়েরা। কিরণমালা কিনে দেয়ার বায়না ধরছে অস্বচ্ছল পরিবারের কিশোরী-তরুণীরাও। কিন্তু দাম সাধ্যের মধ্যে না থাকায় ওই পোশাক সন্তানকে কিনে দিতে পারছেন না তারা। এতে রাগে, অভিমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে কিশোরী-তরুণীরা।

এমনই এক ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে। যেখানে অন্ধ বাবার দরিদ্র পরিবারেও ছোবল মেরেছে কিরণমালা নামের ওই পোশাক।

স্থানীয় সূত্র জানায়, চন্ডিপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাবিনা (১৪) অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। সাইফুল ইসলাম অন্ধ। কোনো কাজ করতে পারেন না। সাইফুলের স্ত্রী অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালায়। ঈদ উপলক্ষ্যে কিশোরী-তরুণীদের মাঝে কিরণমালার যে প্রভাব পড়েছে সেই প্রভাব আঘাত হানে অন্ধ সাইফুলের ঘরেও। স্কুলপড়ুয়া মেয়ে সাবিনা বায়না ধরে কিরণমালা কিনে দিতে। স্কুলের সহপাঠী-বান্ধবীদের দেখে সেও কিরণমালা জামার আবদার জানায় বাবা-মায়ের কাছে।

কিন্তু অভাবী মা-বাবার পক্ষে এতো দাম দিয়ে জামা কিনে দেয়ার সম্ভব ছিলনা বলে কিনে দিতে পারে নি। কিন্তু মেয়েকে ওই পোশাক কিনে দেয়ার সামর্থ নেই বোঝাতেও পারছিলেন না তারা। অন্যদিকে মেয়েও বায়না ধরেই আছে তাকে কিরণমালা কিনেই দিতে হবে। অবশেষে পরিবারের অক্ষমতা বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে সাবিনার মা সাবিনাকে বকাঝকা করে। আর এই ক্ষোভে, অভিমানে ৫ জুলাই রোববার রাত ৮টার দিকে সাবিনা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের অভিনয়ের নামের অনুসরণ করে নামকরণ করা এসব পোশাক বাংলাদেশের তরুণ তরুণীদের ওপর এমন নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও ক্রমাগতই বাড়ছে এর চাহিদা।

তবে গত বারের পাখি নামের পোষাকের চাহিদা এবার কিছুটা কমে গেছে বগুড়ার ঈদ মার্কেটে। এর জায়গা দখল করেছে স্বপ্নপুরীর রাণী কিরণমালা নামের পোশাক। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত কিশোরী এবং তরুণীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে কিরণমালা।

বগুড়া শহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে ক্রেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, এবার কিরণমালা জামা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি পাখি জামার চাহিদা থাকলেও গেলো বছরের মতো নেই।

তারা আরও জানায়, স্যাটেলাইটের কল্যাণে এদেশীয় মেয়েদের মগজে কিরণমালা এতটাই জায়গা দখল করেছে যে, কিরণমালা জামা না পেলে জীবনটাই যেন ব্যর্থ! তাই তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এসব পোশাকে।

ঈদ মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, কিরণমালা জামা সেট বিভিন্ন দামের রয়েছে। এ কারণে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের লোকজনও তাদের সন্তানের জন্য কিরণমালা কিনতে ঝুঁকে পড়ছেন।

সর্বনিম্ন ২৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে কিরণমালা। তবে শহরের অভিজাত বিপণীবিতানগুলোতে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা মধ্যে মিলছে কিরণমালা। আর অন্যান্য মার্কেটে ২৫০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই