অরক্ষিত ৪৬টি হাওড়: ১৫শ কোটি টাকার ফসল নিয়ে আতঙ্কিত কৃষকরা

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ থেকে: সুনামগঞ্জের হাওড় গুলোতে ফসল রক্ষা বেরী বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সামন্য বৃষ্টিতেই জেলার ১১টি উপজেলার বিভিন্ন হাওড়ের বাঁধের মাটি দেবে গেছে। আর সামন্য পাহাড়ী ঢল আসলে বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি ডুকে যাবে। যার জন্যে জেলার ছোট-বড় মোট ৪৩টি হাওরের উৎপাদিত কোটি কোটি টাকার ফসল নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে লক্ষ লক্ষ কৃষক। জেলার উল্লেখযোগ্য বৃহৎ হাওড়গুলো হলো-শনির হাওর,মাতিয়ান হাওর, লোভার হাওর,বলদার হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, চাপাতি হাওরের বৈশাকী বাঁধ, তুফান খালি, মাছুয়ারাখারা, সুরাইয়া বিবিয়ানা, জোয়াইরা সহ মোট ছোট-বড় ৪৩টি। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে এই উপজেলার সব কয়েকটি হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও ৪০ভাগ কাজও ভাল ভাবে করে নি। এসব হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হলেও দেখার কেউ নেই।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়,এ জেলার আবাদী জমির পরিমান ৩৭,৯২১৬ হেক্টর, আবাধ জমি-২৭,৬৪৩৪ হেক্টর। তার মধ্যে প্রায় ১৯হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিভিন্ন প্রকার ধান চাষ করা হয়েছে। আর বাকি জমিতে অন্যান্য ফসল। আর হাওরের বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এডিপি প্রকল্পের অধীনে জেলার ৪৬টি হাওড়ের দু-শত ৩০কিলোমিটার বাঁধ নিমার্ন ও মাটি ভড়াটের ১৪কোটি টাকার কাজ পায়। উৎপাদিত ধানের মধ্যে রয়েছে-হাইবিট,স্থানীয় ও বাকি জমিতে অকশি জাতীয় ধান চাষ করা হয়েছে। এসব জমিতে প্রতি বছর উৎপাদিত ধান থেকে ৯লক্ষ মেঃটন ফসল উৎপন্ন হয়। যার মূল্য ১৫শ কোটি টাকা।

কিন্তু প্রতি বছরই হাওড় গুলোতে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির মধ্য দিয়ে ফসল রক্ষা বেরী বাঁধ নির্মাণ করার ফলে পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জেলার কৃষকরা তাদের কষ্ঠার্জিত ফসল হারিয়ে হয়ে যায় নিঃস্ব।

হাওরের কৃষকরা জানায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জেলার ছোট-বড় ৪৬টি হাওর অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। সামন্য বৃষ্টিতেই উপজেলার কয়েকটি হাওরের বাঁধের মাটি দেবে গেছে। কারণ প্রতিটি ফসল রক্ষা বেরী বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের কারণে দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। হাওরে নির্মিত বেরী বাঁধ কৃষকদের ফসল রক্ষার্থে কোন উপকারে না আসলেও বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পকেট ভারী হয়েছে। পাউবোর ঠিকাদার ও পিআইসিরা বাঁধের উপর থাকা গাছ-পালা কেটে পরিস্কার না করেই, বাঁধের দুই পাশ থেকে মাটি উত্তোলন করে কোন রকম দায় সারা ভাবে ফসল রক্ষা বাঁধের ওপর মাটি দিয়ে বেরী বাঁধ নির্মান করছে। নিদির্ষ্ট দূরত্ব থেকে মাটি এনে বেরী বাঁধ তৈরি করার পর,বস্তায় মাটি ভড়ে,বাঁশ দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ দেওয়া নিয়ম থাকলেও এখানে তা কেউ শুনে নি।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার ও পিআইসি জানান,বেরী বাঁধ নিমাণের বরাদ্ধ আনতে গিয়ে পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে সংশ্লিষ্ট কাজে ১৫ভাগ ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় অর্থ সময়তো বরাদ্ধ না পাওয়ার কারণে বাঁধের কাজ সঠিক ভাবে শেষ করতে সময় লাগছে।

জেলার শনি ও মাতিয়ান সহ বিভিন্ন হাওরের কৃষক,সালাম মিয়া,কাদির মিয়া,আলী আহমদ,জামাল উদ্দিনসহ আরো অনেকেই বলেন,নিজেদের আখের গোছানোর জন্যেই সময় মত বাঁধ নির্মাণ না করে অনিয়ম করেছে। তাছাড়া দূর্নীতির কারণে প্রতি বছরই ৪০ ভাগ কাজ হয় নি। ফলে সামান্য পাহাড়ী ঢলের পানিতে বাঁধগুলো ভেঙ্গে হাওর গুলো ডুবে যাবার আশংকায় আতঙ্কের মাঝে আছি।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন,হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণে আমাদের কোন পরামর্শ না নিয়েই মনগড়া ভাবে কাজ করা হচ্ছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন-আমি সরেজমিন বিভিন্ন হাওরে গিয়ে দেখেছি সামান্য বৃষ্টিতে হাওরের কয়েকটি বাঁধ দূর্ভল হয়েছে। ফলে হাওরবাসী আতংকের মধ্যে রয়েছে। আমি বাঁধের যেখানে সমস্যা পাচ্ছি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন-আমি সরেজমিন বিভিন্ন হাওরে গিয়ে দেখেছি, সঠিক ভাবে নির্মাণ না করার কারণে হাওরের প্রতিটি বাঁধ খুবই ঝুকিপূর্ণ। বাঁধ নির্মানের দায়িত্বে থাকা লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরোদ্ধে ১৫ভাগ কমিশনের অভিযোগ করেছেন। এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরোদ্ধে ও বাঁধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন,কমিশনের বিষয়টি আমার জানা নেই,তবে হাওর থেকে দেড়িতে পানি নামা ও বাঁধ নির্মান কমিটি গঠনে পদ নিয়ে জঠিলতায় সময় লেগেছে। এজন্য বেরী বাঁধ নির্মাণের সাথে জড়িত পিআইসিরা তাদের নির্ধারিত কাজ শেষ করতে দেড়ি হয়ে ছিল।



মন্তব্য চালু নেই