অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত রায়হান

Ctg Raozan Raihan pic (1)কে.এম জাহেদ, চট্টগ্রাম : গ্রামের সুষ্ঠ, শান্ত, বিনয়ী, ভদ্র, মিশুক ছেলে রায়হান। মানুষের হৃদয়কে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেল একটি দূর্ঘটনায়। নিজ জন্মস্থান রাউজানের নদীমপুরে রাত ঠিক যখন ২টা তখন কানে শোনা যায় এম্বুলেন্সের শব্দ। এই শব্দে ভারী হয়ে উঠে চারপাশের পরিবেশ। নেমে আশে শোকের মাতম।

সন্তান হারা মায়ের বুকফাটা আহাজারীতে কান্নার স্রোতে পরিণত হয় পুরো বাড়ী, শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো এলাকায়। ‘য়ারে মা ডাকিবো হনে, য়ার যাদুরে তোরা মাফ গরি দিস’ (আমাকে মা ডাকবে কে, তোমরা আমার ছেলেকে ক্ষমা করে দিবেন) বলে বুকফাটা আহাজারী করছে মা।

এক নজর দেখতে ছুটে আসে দূর-দূরান্ত থেকে শতশত মানুষ। সবার মুখে কথা হয় ছেলেটা ভাল ছিল, ছিল ভদ্র আর মিশুক। গ্রামের ছোট-বড়, পুষুষ-মহিলা সবার সাথে রায়হানের ছিল সু-সর্ম্পক। প্রাণ খুলে মিশত সবার সাথে। কারো সাথে ছিলনা কোন ঝগড়া-বিবাধ, দিধা-দন্ধ।

রায়হান বাগরুদ্ধ হওয়ার পরও সবার সাথে মিশত সাধারণ মানুষের মত। ব্যবহার করত মোবাইল, ফ্রেসবুক, ওয়ার্টসআপ। মৃত্যুর আগের দিন ফ্রেসবুকে নিজের প্রোফাইলের ছবি পরিবর্তন করে রায়হান। এই ছিল বায়হানের শেষ পরিবর্তন, আর হবেনা পোষ্ট, হবেনা সুষ্ঠুমি, হবেনা দেখা, হবেনা টেইলার্সের অলটার কাজ, মারা হবেনা জমিয়ে আড্ডা। সবাইকে কাঁদিয়ে আলোচনার ঝড় তুলে চিরনিদ্রায় শায়িত হল রায়হান। এখন শুরু সবার হৃদয়ে স্মৃতিই হয়ে থাকল রায়হান।

এদিকে ৬ মাস আগে রায়হানের বড় ভাইয়ের চাকরীর সুবাদে রায়হানকে খুলনার দৌলতপুরের একটি বোরকার দোকানে কাজ দেয়। গত ১০ জুন শুক্রবার সকাল ৯ টায় খুলনার দৌলতপুর রেলক্রসিংয়ের পাশ দিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে খুলনা হয়ে ঢাকাগামী সুচিতা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে মৃত্যু হয় মো: রায়হান আলম (২৪)। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।

গত ১০ জুন শুক্রবার দিবাগত রাতে গ্রামে রায়হানের মরদেহ আনার পর শতশত নারী-পুরুষ এক নজর দেখতে ভিড় জমায়। দেখতে আসা সবাইকে কাঁদাল বাধভাঙ্গা অশ্র“জলে। পরদিন ১১ জুন শনিবার সকাল ১০ টায় জানাজার নামাজে মানুষের ঢল নামে। জানাজা শেষে রায়হানকে অশ্র“সিক্ত ভালোবাসায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই