অ্যানাকোন্ডার পেটে তিন ঘণ্টা! (ভিডিও)

আমাজনের দৈত্যাকৃতির সরীসৃপ অ্যানাকোন্ডার উদরে বিচিত্র অভিযান শেষ করে বহাল তবিয়তে ফিরে এসেছেন সাহসী পরিবেশবিদ রোসলি। ব্যতিক্রমী এই ভ্রমণের জন্য ২৫ ফুট দীর্ঘ এবং ৪শ পাউন্ড ওজনের একটি সবুজ অ্যানাকোন্ডাকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। বলাবাহুল্য জীবিত অবস্থায় ভয়াবহ এই সর্পটির অভ্যন্তরে প্রবেশ এবং অবস্থানের গোটা প্রক্রিয়াটি ভিডিও করা হয়েছে। আগামী রোববার সন্ধ্যায় তার এই বিপজ্জনক অভিযান কাহিনীটি প্রচারিত হবে ডিসকভারি চ্যানেলে।

গত গ্রীষ্মে একটি বিশেষ পোশাক পরে অ্যানাকোন্ডার উদরে প্রবেশ করেছিলেন রোসলি। নিজের ওপর এতোটাই আস্থা ছিল তার যে, নিজের চেয়ে সাপটির নিরাপত্তা নিয়েই বেশি চিন্তা ছিল।

রোসলি বলেন, ‘আমি ওকে (সাপটি) খুব বেশি চিন্তায় ফেলতে চাইনি। চেয়েছিলাম, আমাকে গিলে খাওয়ার সময় ওর যাতে একটুও ব্যাথা না লাগে। এজন্য আমি খুব মসৃণ একটি পোশাক তৈরি করিয়েছিলাম। চূড়ান্ত অভিযান শুরু করার আগে আমরা পোশাকের একটি মহড়াও দিয়েছিলাম।’তবে রোসলির অ্যানাকোন্ডা অভিযান নিয়ে বিচলিত ছিলেন পশু অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা। তারা নানাভাবে এর প্রতিবাদও জানিয়েছেন। তাদের ভয় ছিল, রোসালিন সাধারণের চেয়ে একটু বেশিই লম্বা চওড়া পুরুষ এবং তাকে গলধরণ: করতে সাপটির খুব কষ্ট হবে। তবে সবুজ ওই সাপটির কোনো ক্ষতি করা হবে না বলে তাদের কথা দিয়েছিলেন রোসলি। তিনি তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। এছাড়া তার অ্যানাকোন্ডার উদর অভিযানের ওপর সংগৃহিত তহবিলের একটি বড় অংশ পশু রক্ষায় দান করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এই অভিযাত্রী।

নিউইয়র্ক পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম যেটি আমার আশেপাশের মানুষদের প্রচণ্ডভাবে আলোড়িত করে। এর মাধ্যমে আমি আমাজনের জঙ্গলে আসলে কী ঘটে থাকে সে বিষয়ে লোকজনকে সচেতন করারও একটা চেষ্টা করেছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্জি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা রোসলি অনেক দিন থেকেই অ্যানাকোন্ডার অভ্যন্তরে প্রবেশের স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে এক টিমের সঙ্গে পেরুর রেনফরেস্ট আমাজন ভ্রমণে যান তিনি। সেখানে দীর্ঘ ৬০ দিন কাটান। তখনই তার এই ভ্রমণের জন্য উপযোগী অ্যানাকোন্ডার সন্ধান চালান।

পরে তার দলের লোকজন অ্যানাকোন্ডার ওপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালায়। এই সরীসৃপ মূলত চার প্রজাতির হয়ে থাকে। যেমন, ডার্ক স্পটেড অ্যানাকোন্ডা, হলুদ অ্যানাকোন্ডা, সবুজ অ্যানাকোন্ডা ও বলিভিয়ান অ্যানাকোন্ডা। তারা প্রতিটি প্রজাতির ওজন, দৈর্ঘ্য এবং লিঙ্গ পরীক্ষা করে দেখেন। পারদ পরীক্ষার জন্য এটির ত্বকের নমুনাও সংগ্রহ করেছিলেন। দীর্ঘ পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর পরিবেশবিদ রোসলি ও তার দল ২০০৮ সালে একটি স্ত্রী জাতির সবুজ অ্যানাকোন্ডাকে বেছে নেন।

এরপর শুরু হয় অ্যানাকোন্ডার অভ্যন্তরে যাওয়ার প্রস্তুতি। কার্বন ফাইবার দিয়ে এমন একটি বিশেষ পোশাক তৈরি করেন যা তাকে সাপটির ভয়াবহ চাপ এবং পাচক এসিড থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। পোশাকের সঙ্গে আরো সংযুক্ত করা হয় একটি অক্সিজেন ব্যাগ, বাইরের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের যন্ত্রাদি এবং কয়েকটি ক্যামেরা।

সাপটি যাতে তাকে গিলে খেতে আগ্রহী হয় এ জন্য রোসলি তার গোটা শরীরে মেখে নেন শূকরের রক্ত। এরপর জন্তুটির সামনে গিয়ে অদ্ভূত সব অঙ্গভঙ্গি করতে শুরু করেন। আর যায় কোথায়! সাপটি তাকে পেচিয়ে ধরে সোজা উদরে চালান করে দেয়। ভয়াবহ এই জন্তুটির পেটে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে অবস্থান করেন তিনি।

অ্যানাকোন্ডার উদরে তিন ঘণ্টার এই ভ্রমণকে ‘একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন রোসলি। তার ভাষায়, ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যামেজিং।’



মন্তব্য চালু নেই