আইএসের খিলাফতে বাঁচতে হলে যে নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক

ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল এলাকা দখলে নিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে সুন্নি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

আইএস দখলকৃত ওই সব এলাকায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ বসবাস করছে। তাদের জীবনযাপনে স্বাধীনতা খুবই কম। আইএসের কঠোর বিধি-নিষেধ ও নিয়ম-রীতির মধ্যে দিয়ে চলতে হয় তাদের।

এ সব বিধি-নিষেধের চুন থেকে পান খসলেই জনগণের ওপর নেমে আসে অত্যাচারের নির্মম খড়গ। সম্প্রতি এমনই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ব মিড়িয়ায়। সেটা হলো- রমজান মাসে দিনের বেলায় খাবার খাওয়ায় দুই কিশোরীকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আইএস।

সপ্তম শতাব্দীতে জারিকৃত ইসলামী নিয়ম-নীতি সেখানে পুর্ণমাত্রায় বাস্তবায়ন করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তারা।

আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসবাস করতে হলে কোন কোন বিধি-নিষেধ ও রীতি-নীতি মেনে চলতে হবে তার একটি তালিকা টাঙিয়ে দিয়েছে জঙ্গিসংগঠনটি। ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্টের সাংবাদিক প্যাট্রিক ককবার্ন শুক্রবার সেই নিয়মগুলো তুলে ধরেছেন।

১. মুসলিম হতে হবে
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসবাস করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সুন্নি মুসলিম হতে হবে। শিয়া বা ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের লোক হলেও তাদের এখান বসবাসের অধিকার নেই। আইএসের খিলাফত আইনে খ্রিষ্টান, শিয়া ও ইয়াজিদি বা অন্য ধর্মের লোকদের ‘মুরদাত বা মুশরিক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এদের হত্যা ও ক্রীতদাস করে রাখা যেতে পারে বলে খিলাফত আইনে উল্লেখ রয়েছে।

২. নারীরা জিনস প্যান্ট পরতে পারবেন না
নারীদের জিনস প্যান্ট পরা নিষিদ্ধ। তাদের অবশ্যই বোরকা ও আবায়া (আলখাল্লা) পরতে হবে। মেক-আপ করা যাবে না।

৩. ধূমপান নিষিদ্ধ
সিগারেট, হুঁকাসহ যাবতীয় মাদকদ্রবগ্রহণ নিষিদ্ধ। এর শাস্তি ৪০ দোররা। কিন্তু একই অপরাধ যদি বার বা্র করে তাহলে মৃত্যুদণ্ডও বিধানে রাখা হয়েছে।

৪. ‘ডায়েশ’ শব্দ নিষিদ্ধ
আইএসের আরবি প্রতিশব্দ ডায়েশ। কিন্তু এ নামে তাদের ডাকা যাবে না। কেউ যদি ভুল করেও আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শব্দটি ব্যবহার করে তাহলে ৭০ দোররা মারার বিধান রয়েছে।

৫. নারী পরিচালিত দোকান বন্ধ করতে হবে যদি…
নারী পরিচালিত কোনো দোকানে একজন পুরুষ প্রবেশ করলেও সেটা বন্ধ করতে হবে। হেয়ারড্রেসিং শপ ও কাপড় সেলাইয়ের দোকানগুলোতে সাধারণত নারীরা থাকেন।

৬. স্ত্রীরোগবিদ্যা (গাইনোকোলজি)
স্ত্রীরোগবিদ্যার মতো বিষয়গুলোতে শুধুমাত্র মেয়েরা পড়েবেন। নারীরাই স্ত্রীরোগ বিষয়ে চিকিৎসা দেবেন।

৭. জনসমক্ষে নারীদের চেয়ারে বসার অনুমোদন নেই
নারীরা জনসমক্ষে, বাজারে বা দোকানে গিয়ে চেয়ারে বসতে পারবেন না। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে কী শাস্তি দেওয়া হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি।

৮. নামাজের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না
আজান দেওয়ার পর সবাইকে নিজেদের কাজ বন্ধ রেখে নামাজে যেতে হবে। দোকান বন্ধ করে নামাজ যেতে হবে। নামাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

৯. জনস্বার্থের জন্য হুমকি তৈরি করা যাবে না
জনস্বার্থমূলক বিঘ্নিত হয় এমন কাজ করা যাবে না। উদাহরণ- কোনো চালক যদি যাত্রীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট ভাড়ার বেশি নেন কিংবা যাত্রীকে নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় ফিরিয়ে আনতে অর্থ দাবি করলে ‘জনস্বার্থ ব্যাহত কাজ’ হিসেবে গণ্য হবে। এর শাস্তি অঙ্গচ্ছেদ বা শিরশ্ছেদ। ইরাকের ফালুজায় এই অপরাধটি একটি সাধারণ বিষয়।



মন্তব্য চালু নেই