আইএসের ভিডিওতে এক জঙ্গি সাবেক নির্বাচন কমিশনারের পুত্র

‘হুমকি বার্তা’ সম্বলিত আইএসের কথিত ভিডিওতে তিন বাঙালি তরুণদের একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার শফিউর রহমানের ছেলে তাহমিদ রহমান শাফি বলে শনাক্ত করেছেন তার পরিচিতজনরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক জন ‘নিশ্চিত’ করেছেন এই তরুণই একটি বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সঙ্গীত বিষয়ক একসময়ের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ক্লোজআপ ওয়ানের তাহমিদ।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার শফিউর রহমান ২০১৪ সালে মারা যান। তিনি ২০০০ সালের জুন থেকে ২০০৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বেও ছিলেন। তাহমিদের আরো দুই ভাই ও এক বোন আছে বলেও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

বেশ কয়েকজন উল্লেখ করেন, তাহমিদ ২০০০-২০০১ সালে নটরডেম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এরপর ২০০২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে তাহমিদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে পড়াশুনা করেছেন। এরপরে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে কিছু দিন চাকরিও করেন।

সহকর্মীদের মধ্যে হাসিখুশি এবং সঙ্গীতপ্রিয় হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। ক্লোজআপ ওয়ানের প্রথম সিজনে সেরা ১৫ জনের মধ্যেও স্থান হয়েছিল তার। রবীন্দ্রসঙ্গীতটাকে খুব ভালোবাসতেন। আর এই সঙ্গীত নিয়েই পিএইচডি করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন।

‘ওটা (গুলশানের রেস্টুরেন্টে হামলা) ঝলক মাত্র… বারবার ঘটবে।’ নতুন ভিডিওতে বাংলাদেশকে আইএস জঙ্গিরা আবারো হুমকি দেয়। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, তিন তরুণকে বাংলায় কথা বলতে। তাদের মধ্যে একজনের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। অন্যজনের মুখভর্তি দাড়ি।

ভিডিওতে শাফিকে বলতে শোনা যায়, ‘শেখ আদনানির’ নির্দেশে তারা ‘খ্রিস্টান, ইহুদি ক্রুসেডার ও তাদের মিত্রদের’ বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ করছে এবং তা কোনোভাবেই ‘কৌতুক নয়’।

তিনি বলছেন, ‘বাংলাদেশের তাগুত সরকার, এদের সমর্থক ও এদের কর্মচারীদের উদ্দেশে, আমি তোমাদেরকে প্রশ্ন করতে চাই কেমন করে তোমরা ডেমোক্রেসিকে (গণতন্ত্রকে) সাপোর্ট করো? ডেমোক্রেসি নামক এই শিরকি মতবাদকে তোমরা কিভাবে সাপোর্ট করো?’

ওই জঙ্গি আরো বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের তাগুত (সীমালঙ্ঘনকারী বা আল্লাহদ্রোহী) সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, যে জিহাদ আজ বাংলাদেশে এসেছে, যে জিহাদ তোমরা প্রত্যক্ষ করছো, এরকম জিহাদ তোমরা এর আগে কখনও দেখো নাই। এই জিহাদ হচ্ছে সেই জিহাদ যার প্রতিশ্রুতি রাসুল্লাহ (সা.) দিয়ে গিয়েছিলেন, সুতরাং তোমরা কখনওই এই জিহাদকে বন্ধ করতে পারবে না।’

জিহাদ সফল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে ওই জঙ্গি বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা জয়ী হই এবং তোমরা পরাজিত হও এবং সারাবিশ্বে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত না হয়। একে তোমরা কখনওই রুখতে পারবে না, সুতরাং এ চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।’

হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তোমরা এখন যা দেখছো তা জিহাদের একটি ঝলক ছাড়া আর কিছু নয়…বাংলাদেশে যা দেখেছো সেটা রিপিট, রিপিট এবং রিপিট হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত শরিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়… আমরা শেষ পর্যন্ত তোমাদের সাথে লড়ে যাব, হয় আমরা বিজয়ী হব, অথবা শাহাদাৎ লাভ করব।’

এরপর দ্বিতীয় জঙ্গি বাংলাদেশের সব সরকারকে দোষারোপ করে বলেন, ‘আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই তবে এই ভূমিতে সমস্ত সরকার আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে মানবরচিত আইন দ্বারা পরিবর্তন করেছে। যার ফলে তারা তাগুত হয়ে যায়; তারা কাফের হয়ে যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ অর্থাৎ সশস্ত্র কিতাল করা ফরজে আইন হয়ে যায়।’

তৃতীয় জঙ্গি জিহাদিদের উদ্ধুব্ধ করে গুলশানে হামলার দিকে ইঙ্গিত করে বলে, ‘বাংলাদেশে যে কাজটি তারা করেছেন, সেটি চমৎকার একটি কাজ।’

উল্লেখ্য, ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে শুক্রবার (১ জুলাই) রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল সসস্ত্র জঙ্গি ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে রেস্টুরেন্টটি নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী।

অভিযানে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার এবং ২০ জনের জবাই করা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি। বাকিরা বাংলাদেশি।

এছাড়া জঙ্গিদের প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান।



মন্তব্য চালু নেই