আইন প্রয়োগ করা পুলিশের দায়িত্ব, ক্ষমতা নয়

আইন প্রয়োগ করা পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব; এটা ক্ষমতা নয়। এ দায়িত্ব পালন ইবাদততুল্য। আইনভঙ্গকারীদের ছাড়া যাবে না, ভদ্রভাবে থানায় নিয়ে আসতে হবে। গরীব, নিরীহ ও অসহায় মানুষকে প্রয়োজনীয় আইনি সেবা দিতে হবে।

রোববার বিকেলে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শহীদ এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আয়োজিত এক বিশেষ মতবিনিময় সভায় অফিসার এবং ফোর্সদের আইজিপি একেএম শহীদুল হক এ নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

সভায় আইজিপি বলেন, ‘সাধারণ জনগণের সাথে যারা ঔদ্ধত্ব্যপূর্ণ আচরণ করে, সমস্যা পীড়িত মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করে না; তাদেরকে থানায় পোস্টিং দেয়া যাবে না। যারা বেপরোয়া আচরণ করবে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পুলিশ প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের অনেক অর্জন রয়েছে। দু’চারটা মানুষের জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হবে এটা মানা যায় না। কারো ব্যক্তিগত আচরণে যদি পুলিশ বাহিনী ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার দায়-দায়িত্ব ওই ব্যক্তিকেই বহন করতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশ তার দায়ভার নেবে না।’

আইজিপি বলেন, ‘থানায় জিডি করতে যাওয়া সাধারণ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে। থানায় আসা সাহায্য প্রার্থী বিপদগ্রস্থ মানুষকে মূল্যায়ন করতে হবে। তাদেরকে আইনি সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে আশ্বস্ত করতে হবে। কোনোভাই তাদের সাথে রূঢ় আচরণ করা যাবে না।’

সাংবাদিক এবং পুলিশের কাজের ধরন প্রায় একই। উভয়ই দেশের জন্য জনগণের কল্যাণে নিবেদিত। তিনি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে পারস্পরিক পেশাগত সম্পর্ক বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করারও পরামর্শ দেন।

অনুষ্ঠানে সাব-ইন্সপেক্টর, থানার অফিসার ইনচার্জ এবং উপ-পুলিশ কমিশনারগণ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এক সাব-ইন্সপেক্টর তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘আজ আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা ঝড়-বৃষ্টি, রোদ-শীত উপেক্ষা করে দিন-রাত মানুষকে সেবা দিই। অথচ মাত্র কয়েকটা কুলাঙ্গারের জন্য আমাদের আজ অপবাদ সইতে হচ্ছে। তাদের কারণে স্ত্রী-সন্তানদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখী হচ্ছি। দেড় লাখ পুলিশ সদস্যের তিন লাখ মা-বাবা অপবাদের সম্মুখীন হচ্ছেন।’ এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে সকল পুলিশ সদস্যকে দায়দায়িত্ব নিয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে। দায়িত্ব পালনকালে কোন ধরনের অপেশাদার আচরণ করা যাবে না। ফোর্সকে নিয়মিত মটিভেশন করতে হবে, সুপারভিশন এবং কো-অর্ডিনেশন বাড়াতে হবে, যাতে সকলে মিলে টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করে পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধি করতে পারে।’

ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি (অপারেশন) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শেখ মো. মারুফ হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন কোরায়শী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সকল উপ-পুলিশ কমিশনার, সকল থানার অফিসার ইনচার্জ, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর এবং এএসআইরা।



মন্তব্য চালু নেই