আইন মানছে না ৫৫০০ ইটভাটা, ঘটছে বায়ুদূষণ

সেই টাস্কানি যুগ থেকে মানুষ তার প্রয়োজনে বিশাল দৃষ্টিনন্দন ভবন ও অবকাঠামো তৈরি করে আসছে। বর্তমানে তা বেড়ে গেছে কয়েক হাজার গুণ। সে সময় পাথর ও পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি হলেও এখন তাতে ব্যবহার হচ্ছে কংক্রিট, অ্যালুমিনিয়াম সিট, প্লাস্টিক, কাচ ফাইবার, স্টিল এবং ধাতব বস্তু। কিন্তু বাংলাদেশসহ বহু স্বল্পোন্নত দেশে প্রধানত ব্যবহার হচ্ছে মাটির তৈরি ইট।

আর এই ইট তৈরির প্রক্রিয়াটি হচ্ছে অত্যন্ত নিম্নমানের এবং সনাতন পদ্ধতিতে। যার করণে পরিবেশ ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে। আজকের এই আধুনিক বিশ্বে ইটের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু নিয়ম না মেনে এই প্রয়োজনীয় বস্তু তৈরিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ, মানুষের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস, স্বাস্থ্য, উর্বর মাটি এবং অতি অপরিহার্য বায়ু।

২০১৪-১৫ সালের পরিবেশ অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৬৯২৭টি। এর বাহিরেও রয়েছে অসংখ্য অনিবন্ধিত ইটভাটা। তবে এই বৈধ ভাটারগুলোর মধ্যে আইন অমান্য করে সনাতন প্রযুক্তির চিমনি ব্যবহারের মাধ্যমে তিন হাজার ৪৪০টি ভাটায় ইট উৎপাদন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ইট তৈরি করছে আরও এক হাজার ৯১১টি ভাটা।

ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকা বিভাগে রয়েছে দুই হাজার ৫৯৮টি ভাটা। এছাড়া রাজশাহীতে এক হাজার ৫২০টি, চট্টগ্রামে এক হাজার ৪৩১টি, খুলনায় ৮০৩টি, বরিশালে ৩১০ এবং সিলেট বিভাগে ২৬৫টি ইটভাটা রয়েছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুসারে বর্তমানে সনাতন প্রযুক্তির ১২০ ফুট চিমনিবিশিষ্ট ইটভাটাতে ইট উৎপাদন নিষিদ্ধ।

ইউএনডিপি এর মতে, বাংলাদেশে ১ লাখ ইট প্রস্তুত করতে ২৩ টন কয়লা পোড়ানো হয়, যেখানে চীন ৭.৮ থেকে ৮ টন কয়লা ব্যবহার করেই একই পরিমান ইট প্রস্তুত করে। ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিশেষ করে আশেপাশের দশটি জেলায় গতানুগতিক ধারার ইট ভাটাগুলোতে থেকে প্রতি বছর ২৩,৩০০ টন (পার্টিকুলেটেড মেটার) ২.৫, ১৫,৫০০ টন সালফার ডাইঅক্সাইড, ৩০২,০০০ টন কার্বন মনোঅক্সাইড, ৬,০০০ টন ব্ল্যাক কার্বন এবং ১.৮ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হচ্ছে শুধুমাত্র ৩.৫ বিলিয়ন ইট প্রস্তুত করতে। জ্বালানির উপর নির্ভর করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সালফারের এবং নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ এর পাশাপাশি বায়ুতে ভারী ধাতুরও নিঃসরণ ঘটে।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশ কয়েকবারই আইন পরিবর্তন করেছে। কিন্তু সে আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে হয়নি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সংগঠন (বেলা)। বায়ুদূষণ ও এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বেশ কয়েকবার মামলাও করেছে বেলা।



মন্তব্য চালু নেই