আউজুবিল্লাহ পাঠের ফজিলত অনেক

‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ পাঠের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। তবে আউজুবিল্লাহ পাঠের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সবাই সমানভাবে জানেন না। আউজুবিল্লাহ পাঠের ফজিলত অনেক। শয়তান শব্দটি শাতানুন থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এর অর্থ হলো দূর হও। বালা, আপদ ও মুসিবত দূর হও। রাজিম শব্দটি মারজুম শব্দের অর্থ প্রকাশ করে। মারজুম শব্দের অর্থ বিতাড়িত, অভিশপ্ত ও নাফরমান।

আল্লাহর হুকুম অমান্য করার ফলে শয়তান সেদিন জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের বলেছেন, ‘তোমরা বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো।’

পবিত্র কুরআনের সূরা নাসের ৫-৬ নম্বর প্রার্থনামূলক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘(আমি আশ্রয় চাই) যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়, জিনের মধ্য থেকে ও মানুষের মধ্য থেকে হোক।’ শয়তান দুই ধরনের- ১. বাতেনি শয়তান, ২. জাহেরি শয়তান।

বাতেনি শয়তান শরীরের রগে রগে, পশমের গোড়ায় ও অন্তরে প্রবেশ করে খারাপ কাজের জন্য কুমন্ত্রণা দেয়। জাহেরি শয়তান, অর্থাৎ শয়তানের সক্রিয় বন্ধু মানুষরূপী শয়তান দুনিয়ার ভোগবিলাসের প্রতিযোগিতা করতে উৎসাহিত করে। পরনারী-পরপুরুষ বেহায়াপনা-বেলেল্লাপনার দিকে মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়। মানুষরূপী শয়তান হলো বাতেনি শয়তানের প্রকৃত বন্ধু।

শয়তানের বন্ধু সম্পর্কে সূরা নাহলের ১০০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তার (শয়তানের) আধিপত্য তো তাদের ওপরই, যারা তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে।’ শয়তান ও তার মানুষরূপী বন্ধুদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বহু মানুষ কুরআনি জিন্দেগি ভুলে গিয়ে পথভ্রষ্ট হয়েছে। আখেরাতকে ভুলে গিয়ে শুধু দুনিয়াবি কাজ, বাড়ি-গাড়ি, কাড়ি কাড়ি টাকা আহরণে ব্যস্ত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সূরা ইয়াসিনের ৬২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে, তবুও কি তোমরা বোঝনি?’ সূরা ইউসুফের ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘শয়তান অবশ্যই তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’

নবী করিম (সা.) যখন উচ্চস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করতেন, তখন শয়তানও উচ্চস্বরে তা পাঠ করত। শয়তান নিজ থেকে আয়াতের সাথে কিছু কথাবার্তা মিলিয়ে নিত। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করত। শয়তান কুরআন তেলাওয়াতকারীদের এক প্রকার বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছিল।

সূরা নাহলের ৯৮-৯৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তোমরা যখন কুরআন পড়তে শুরু করবে তখন বিতাড়িত শয়তানের (কুমন্ত্রণা) থেকে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাও। যারা ঈমান আনে এবং প্রভুর ওপর ভরসা করে, তাদের ওপর শয়তানের কোনোই আধিপত্য নেই।’

শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম পাঠ করা হলো মুমিনের বড় হাতিয়ার। আউজুবিল্লাহ পাঠে পাঁচটি উপকার লাভ হয়। যথা- ১. ধর্মে সুদৃঢ় থাকা যায়, ২. শয়তানের প্রেরণা ও ক্লেশ প্রদান থেকে রক্ষা লাভ করা যায়, ৩. আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়, ৪. শান্তিপূর্ণ বা আরামপ্রদ স্থানে থাকা যায়, ৫. পয়গাম্বর, সিদ্দিকিন ও শোহাদাদের সাহচর্য লাভ করা যায়।

যেদিন শয়তান জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়েছিল তখন আল্লাহ শয়তানকে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিয়েছিলেন। আর শয়তান বলেছিল, আমি তোমার বান্দাদেরকে সম্মুখ, পেছন ও ডান-বাম থেকে ধোঁকা প্রদান করব। আল্লাহ বলেছিলেন, ‘আমার ইজ্জতের কসম, আমি আমার বান্দাদেরকে আউজুবিল্লাহ পাঠের নির্দেশ দান করব। যখন আমার বান্দা আউজুবিল্লাহ পাঠ করবে, তখন আমি এভাবে তাদের রক্ষা করব যে, ডান দিক থেকে আমার হেদায়েত, বাম দিক থেকে আমার অনুগ্রহ, পেছন দিক থেকে আমার পাহারা এবং সামনে আমার সাহায্য ও করুণা থাকবে।’

নবী কারীম (সা.) বলেন, ‘আউজুবিল্লাহ পাঠের মাধ্যমে তোমরা পাপের দরজা বন্ধ করো এবং বিসমিল্লাহ পাঠ করে জান্নাতের দরজাগুলো খোলা রাখবে। হজরত উমর (রা.) সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, হে উমর! তুমি যেই জঙ্গলে যাও শয়তান সে স্থান থেকে ভয়ে অন্য জঙ্গলে চলে য়ায়।’ শয়তান হজরত উমর (রা.) কে দেখলে ভয়ে পালিয়ে যেত। যে পথ দিয়ে হজরত উমর (রা.) হাঁটতেন, সে পথ ধরে শয়তান হাঁটত না।



মন্তব্য চালু নেই