আওয়ামী লীগের কমিটিতে আসছেন শেখ রেহানার পুত্র ববি

আসন্ন ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসছেন শেখ রেহানার পুত্র ববি। এছাড়াও বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে ঘিরে নানা আলোচনা চলছে দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতার মধ্যেও। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার মতে, ববিকে কমিটিতে যুক্ত করা হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার সন্তান ববি দীর্ঘদিন ধরে দেশে অবস্থান করে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) নানা কাজের তত্ত্বাবধান করছেন। এসব কাজে তিনি সফলতাও দেখিয়েছেন।

দলীয় একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্প্রতি সত্তরে পা দিয়েছেন। এখন বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্মকে ধীরে ধীরে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় করা প্রয়োজন। শেখ হাসিনার একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। তিনি এখন সে কাজেই বেশি ব্যস্ত। মা প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় তিনি সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হতে এবং দেশে থাকতে চান না। নিজেকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতেই তাঁর এমন মনোভাব। এ ক্ষেত্রে দেশে অবস্থানরত ববিকে দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত করা হতে পারে।

ববির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা যায়, সরাসরি দলীয় রাজনীতি এবং জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ববি এখনো নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত বলে মনে করেন না। বিভিন্ন সময়ে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের এমনটা জানিয়েছেন। তবে তিনি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বনানী ও গুলশান নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে আগামী নির্বাচনেই যে তিনি অংশ নেবেন সেটি নিশ্চিত নয়।

আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নিজের সন্তান ও বোনের সন্তানদের সমান দৃষ্টিতে দেখেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্ররা কে কখন কোথায় কী কাজ করবেন। তাঁদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে একমাত্র নেত্রীই (শেখ হাসিনা) ভালো জানেন। তবে জয় বা ববি যখনই সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হবেন, আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তাঁদের স্বাগত জানাবে।’

এদিকে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে সভাপতিমন্ডলী ও সম্পাদকমন্ডলীতে এসব পরিবর্তন আসবে। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীতে নতুন ৯ জন সদস্য যুক্ত হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া সম্পাদকমন্ডলীতে অন্তত ১৫টি পদে পরিবর্তন আসতে পারে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সংখ্যা ১৫। এর মধ্যে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদাধিকার বলে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। সম্মেলন সামনে রেখে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনের লক্ষ্যে গঠিত সাব-কমিটি সূত্রে জানা যায়, আগামী সম্মেলনে সভাপতিমন্ডলীর সদস্যসংখ্যা ৪টি বাড়িয়ে ১৯ করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনের পর গঠিত কমিটিতে সভাপতিমন্ডলীর দুটি পদ শূন্য রাখা হয়েছিল। আর সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন মারা গেছেন। ফলে বর্তমান কমিটিতে সভাপতিমন্ডলীর তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া আগামী কাউন্সিলে সভাপতিমন্ডলীর দুজন সদস্য বাদ পড়তে পারেন। ফলে সব মিলিয়ে সভাপতিমন্ডলীতে নতুন অন্তর্ভুক্ত হবেন ৯ জন।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীতে নতুন করে যাঁদের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাঁদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই ও সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। এই তিনজনই বর্তমানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য। এ ছাড়া সভাপতিমন্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা আছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং দলের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও দীপু মনির। সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, আসাদুজ্জামান নূর, নুরুল ইসলাম নাহিদেরও সভাপতিমন্ডলীতে স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভূমিমন্ত্রী ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরিফ ডিলুকেও দেখা যেতে পারে সভাপতিমন্ডলীতে।



মন্তব্য চালু নেই