আকাশে ওড়ার রোমাঞ্চকর পোশাক!

জ্যো রাইডলার প্রায় ৭০০ বার উড়ন্ত উড়োজাহাজ হতে লাফ দিয়েছেন। কিন্তু আজ যখন তিনি এ কাজ করতে যাবেন, তার লক্ষ্য হবে মাটিতে নিরাপদে পৌঁছানোর চাইতে অনেক বেশি কিছু। এটা শুধু উড়ন্ত উড়োজাহাজ হতে লাফানো নয়। বাতাসের মধ্য দিয়ে দ্রুত গতিতে অন্য যে কারোর চেয়ে অনেক দূরে, অনেক সময় জুড়ে উড়ে চলা। তার মানে, নতুন বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করা। বলা হচ্ছে উইংস্যুট চ্যাম্পিয়নশিপ ফ্লাইং প্রতিযোগিতার এক প্রতিযোগির কথা।

জ্যো রাইডলারের মত রোমাঞ্চপ্রিয় এমন এনেকেই উড়াজাহাজ থেকে খোলা আকাশে লাফাবেন। এই প্রতিযোগিতাকে বলা হয় উইংস্যুট রেসিং।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনিসোটার অধিবাসী রাইডলার খোলা আকাশে উড়তে ভালবাসেন সেই ছোটবেলা থেকেই। চোখের ত্রুটিজনিত কারণ সে মিলিটারি ফ্লাইটে যোগ দিতে পারেননি। তাই বলে পাখির মত ডানা মেলে আকাশে ওড়ার স্বপ্নটি থেমে থাকেনি।

আকাশে ওড়ার রোমাঞ্চকর পোশাক২

বেজ জাম্পিং তাকে কৌতূহলী করে তুললেও ঝুঁকিজনিত কারণে এই পরিকল্পনা তিনি বাদ দেন। শুরু করেন উড়ন্ত উড়োজাহাজ থেকে লাফ দেয়া। বাতাসের ভর করে ঘণ্টায় ২০০ মাইল বেগে উড়ে চলার মধ্যে একটা অদ্ভুত শিহরণ রয়েছে। এই শিহরণ মনে জাগায় রোমাঞ্চ।

রাইডলার প্রথম উইং স্যুট ফ্লাইটে অংশ নিয়েছিলেন দু’ বছর আগে। এই ফ্লাইটে তিনি আরও আগেই অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যারাস্যুট অ্যাসোসিয়েশনের কিছু পরীক্ষায় পাশের  বাধ্যবাধকতার কারণে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো। কারণ ২০০টি সফল স্কাই ডাইভ দিতে পারলেই কেবল উইংস্যুট ফ্লাইটে অংশ নেয়ার বিধান রয়েছে সেখানে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যারাস্যুট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা তিনটি বিষয়ের ওপর প্রতিযোগিদের পরীক্ষা নিয়ে থাকে। যা ৩০০০ থেকে ২০০০ মিটারের উচ্চতার উইন্ডোর স্কেলে মাপা হয়। গড় গতি, কাভার্ড দূরত্ব ও আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় সময় কাটানোর ব্যপ্তি পরীক্ষা করে দেখা হয়। প্রত্যেক ফ্লাইয়ার প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে তিনটি জাম্প করার সুযোগ পান। তাদের মাথায় থাকা হেলমেটে যুক্ত জিপিআরএস মডিউল দিয়ে তাদেরকে ট্র্যাক করা হয়।

আকাশে ওড়ার রোমাঞ্চকর পোশাক৩

বক্র রেখা দিয়ে প্রত্যেককে রেট করা হয়। যে প্রতিযোগী সবচাইতে বেশি সময় জুড়ে দ্রুততম গতিতে বেশি দূরত্ব কাভার করতে পারেন, তাকেই কেবল ১০০ আর বাকিদেরকে এর শতকরা হারে নম্বর দেয়া হয়। প্রতিযোগীদের গড় নম্বরের ওপর ভিত্তি করে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়।

উইং স্যুট পরে ফ্লাইং এর বিষয়ে রাইডলার বলেন, আকাশে ওড়ার তিনটি বিষয় যদিও একে অপরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।  তারপরও প্রত্যেকের আলাদা-আলাদা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উইংস্যুট পড়ে উচ্চ গতিতে উড়ে চলা শারীরিকভাবে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। তাছাড়া, প্রতিযোগীদের বাতাসের আচরণের ওপর খেয়াল রাখতে হয়। বৃষ্টি কিংবা বালু-ঝড় যাতে না হয় সেজন্য প্রার্থনা করতে হয়। কখনো উড়ন্ত পাখিও বিড়ম্বনা তৈরি করে।

উইংস্যুট হচ্ছে অতি স্পর্শকাতর একটি ইন্সট্রুমেন্ট। জ্যো রাইডলারর বলেন, প্রতিটি লাফেই আপনি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করবেন।

এটি একটি  ১৫ শ’ থেকে ২ হাজার ডলারের দামি জামাও বটে। এই জামায় আছে হেলমেট, ট্র্যাকিং ও স্পিড মাপার জন্য আছে জিপিআরএস মডিউল এবং একজোড়া গো-প্রো ক্যামেরা। তবে জীবনের দাম তো সবার চাইতে বেশি, তাই না!



মন্তব্য চালু নেই