আখের রসের অজানা তথ্য!

গরম কালের অতি সাধারণ একটা দৃশ্য হলো, রাস্তার মোড়ে মোড়ে আখের রসের দোকান। অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকরভাবে আখের রস মেশিন থেকে বের করা হলেও এর ক্রেতার সংখ্যা কিন্তু কম নয়! রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে বড় অফিসের কর্তা – সবাইকে দেখা যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আখের রস পান করতে।

আখ শব্দের উৎপত্তি `ইক্ষু` থেকে। অঞ্চলভেদে একে গেণ্ডারি বা কুশারও বলা হয়। আখ বাঁশ ও ঘাসের জাতভাই। এর ইংরেজি নাম হলো Sugarcane এবং বৈজ্ঞানিক নাম হলো Saccharum officinarum। আখের রস দিয়ে চিনি ও গুড় তৈরি করা হয় বলে এর চাষ করা হয়। সাধারণত আখের কাণ্ডের একটি টুকরা দুই-তৃতীয়াংশ মাটিতে পুঁতে দিয়ে এর চাষ করা হয়। তবে বর্তমানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণাগারে টিস্যু কালচারের মাধ্যমেও এর চাষের প্রসার ঘটছে। আখ বা ইক্ষু এই মৌসুমেই বেশি পাওয়া যায়।

আখের রস সম্পর্কে আমাদের সমাজে অনেক ইতিবাচক ধারণা প্রচলিত আছে। অথচ পুষ্টিবিদদের ভাষ্যমতে আখের রসে কোনো উন্নত পুষ্টিমান নেই! অন্যদিকে ভেষজবিদ, কবিরাজ ও আয়ুর্বেদীয় মতে, এটি খুবই উপকারী এবং রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম আখের রসে রয়েছে –

খাদ্যশক্তি- ৩৯ ক্যালরি, আমিষ- ০.১ গ্রাম, চর্বি- ০.২ গ্রাম, শর্করা- ৯.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ১০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস- ১০ মিলিগ্রাম, আয়রন- ১.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ- ১০ আইইউ, ভিটামিন বি- ০.০৪ মিলিগ্রাম।

তবে এই পুষ্টিমান আখের জাত ও উত্পাদনের স্থানের ওপর নির্ভরশীল।

আখের রস প্রস্রাব বৃদ্ধি ও পরিষ্কার করে বলে অনেকের ধারণা। অনেকের ধারণা এটা জন্ডিস ভালো করে। এ ধারণাটি ভুল। আখের রস যতটা স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর ভাবা হয়, আসলে ততটা নয়। বরং আখের রস পান আপনার ওজন বৃদ্ধিতে একটা মারাত্মক ভূমিকা রাখতে পারে। একই সাথে অতিরিক্ত চিনির কারণে দাঁতেরও ক্ষতি হয় অনেক।

তাই বলে একেবারেই যে এর কোনো উপকারিতা নেই, তা কিন্তু নয়। আখের মধ্যে যে শর্করা বা ফ্রুকটোজ রয়েছে সেটা উপকারী। বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন তাদের জন্য উপকারী। বাড়ন্ত শিশুদের জন্যও আখ উপকারী। কারণ এতে রয়েছে ১৫ শতাংশ প্রাকৃতিক চিনি, খনিজ লবণ ও ভিটামিন। কিন্তু একজন সাধারণ পূর্ণ বয়স্ক মানুষের আখের রস দৈনিক পান না করাই উত্তম।

যে উপকারের আশায় পান করবেন সেগুলো কিছুই মিলবে না। বরং বাড়তি চিনি গ্রহণ ক্ষতি বৈ লাভ কিছু করবে না। এছাড়াও আমাদের দেশে যে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আখের রস তৈরি করে বিক্রি করা হয়, সেগুলো পান না করাই ভালো।



মন্তব্য চালু নেই