আগামীতে দলীয় প্রতীকেই লড়বেন পৌর-ইউপি প্রার্থীরা

স্থানীয় সরকার নির্বাচন আর নির্দলীয় থাকছে না। দলীয় প্রতীক নিয়েই দলের পছন্দের প্রার্থীরা লড়বেন নির্বাচনে। আগামী পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকেই এই পদ্ধতি চালুর চিন্তা করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন যতদ্রুত সম্ভব এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সরকারের একাধিক নির্ভরযোগ্য নিশ্চিত করেছে।

সরকারের নীতি নির্ধারণী একটি সূত্র আরও জানায়, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছেন। দলীয় প্রতীক নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চালু করা গেলে নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণও আরও বাড়বে। তবে এজন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন সংশোধন করতে হবে। যতদ্রুত সম্ভব এটি করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মুখে মুখে নির্দলীয় বলা হলেও কার্যত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীরা দলীয়ভাবেই অংশগ্রহণ করে। জাতীয় নির্বাচনের মতো রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন দেয়া না। কিন্তু দলের সমর্থন দেয়া হয়। তাহলে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে দোষ কোথায়?’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। দেশে এই পদ্ধতি চালু করা গেলে রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণবিধি ভাঙার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ কমে আসবে। তবে আইন পরিবর্তন করেই এটি করতে হবে। এ ব্যাপারে শিগগির নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করবো।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এখন আইন পরিবর্তন করতে হলে সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ওই সময় বর্তমান পৌর মেয়র এবং ইউপি চেয়ারম্যানরাই দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিএনপিও। জানতে চাইলে দলটির কেন্দ্রীয় স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘এটা খুবই ভাল একটা সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল। এখন এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণ প্রতীক চিনে ভোট দেয়। যদি জাতীয় নির্বাচনের মতো এখানেও প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয় তাহলে ভোটারদের মধ্যে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় তা দূর হবে।’

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ অবশ্য মনে করেন, সরকার জাতীয় নির্বাচনের আদলে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চায় তাহলে সেটি বেশি অর্থবহ হবে। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে আগে সংসদ সদস্য নির্বাচন হয়। যেই দল এতে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় তারা সরকার গঠন করে। একইভাবে যদি সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে সদস্য নির্বাচন করতে হবে। যেই দল সদস্য নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন, তারাই মেয়র বা চেয়ারম্যান গঠন করবে।’

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নেতারা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে করার মনোভাব জানিয়েছেন। এনিয়ে জাতীয় সংসদেও কথা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভাবমূর্তি আরও বেড়ে যাবে।’ ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই