‘আগে তোর ভাইকে মারবো, পরে তোকে’

ঝিনাইদহে ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম স্কুলছাত্রী পূজাকে প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই বিরক্ত করতো বখাটে লিটু। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মেরে ফেলার হুমকিও দেয় সে। এ ঘটনার পর থেকে পূজা কখনও তার ভাই আবার কখনও তার মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাওয়া-আসা করতো। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বখাটে লিটু পূজাকে হুমকি দেয়, ‘আগে তোর ভাইকে মারবো, পরে তোকে হত্যা করা হবে।’

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে শহরের ‘উপশহর’ পাড়ায় পূজাদের বাড়িতে গেলে তার মা শিখা মজুমদার প্রতিবেদককে এসব কথা জানান। ঘটনার দিন (২৪ অক্টোবর) পূজাকে হত্যার উদ্দেশেই লিটু বাড়িতে প্রবেশ করে বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই লিটু পূজাকে উত্ত্যক্ত করতো। বিষয়টি পূজা তার পরিবারকে জানায়। এরপর থেকে সে একা একা স্কুলে যেতে চাইতো না। এজন্য কখনও তিনি, আবার কখনও তার ছেলে রিপন পূজাকে স্কুলে নিয়ে যেতো আবার নিয়ে আসতো। বিষয়টি স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি এবং বখাটে লিটুর ভগ্নিপতি ও বোনকে জানানো হয়। তারা আশ্বাস দেন লিটু আর পূজাকে বিরক্ত করবে না।

কিন্তু, এরই মধ্যে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে বখাটে লিটু বাড়ির পেছনের প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। সেসময় পূজা বাড়ির ছাদে ফুল গাছে পানি দিচ্ছিল। লিটু গিয়ে তাকে হাত ধরে টেনে বাইরে আনতে চায়। কিন্তু যেতে না চাইলে ছুরি দিয়ে গলায় আঘাতের চেষ্টা করলে পূজা হাত দিয়ে ঠেকালে হাতের তালু কেটে যায়। পরের কোপটি মুখে লাগলে গুরুতর জখম হয় পূজা। এ সময় পাশের বাসার এক বউদি দেখে চিৎকার করলে লিটু পালিয়ে যায়। পরে পূজাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পূজার বাবা বিপুল মজুমদার জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে রিপন কুমার মজুমদার যশোর কাজী নজরুল ইসলাম কলেজে অনার্স পড়ে। মেয়ে পূজা মজুমদার ঝিনাইদহ শহরের মদনমোহন পাড়ার জমিলা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়েকে তো ওই বখাটে মেরেই ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু ভগবান বাঁচিয়ে দিয়েছেন। মেয়েটি বর্তমানে কিছু খেতে পারছে না। মুখের ওপর ২৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।’

তবে ঘটনার দিন রাতেই বিপুল মজুমদার থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান জানান, এ ঘটনায় লিটু, তার দুলাভাই বাবুসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছেন ওই ছাত্রীর বাবা। মামলা দায়েরের পরপরই লিটুর দুলাভাই বাবু, বাবুর বোন রুপা বেগম ও স্বামী রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে লিটুকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিরা পলাতক। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে, গতকাল বুধবার পূজাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়। পরে বৃহস্পতিবার সকালে আবারও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে পুনরায় বাড়িতে আনা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই