খালের দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে ছড়াচ্ছে রোগ জীবানু

আগৈলঝাড়ায় দু’টি বাঁধের কারনে পানি পাচ্ছেনা কৃষক

বরিশাল প্রতিনিধি ॥ ব্রিজ নির্মানের জন্য ঠিকাদারদের দেয়া দু’টি বাঁধের কারনে বিস্তৃর্ণ এলাকার খালের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়ানোর সাথে সাথে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগের জীবানু। একইসাথে ব্যাহত হচ্ছে চলতি বোরো মৌসুমের চাষাবাদ। জনগনের দাবির প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের সভায় একাধিবার বাঁধ দুইটি অপসারনের দাবি জানানো সত্বেও অদৃশ্য কারণে অদ্যবধি কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছেনা প্রশাসন। ঘটনাটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের।
স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী, কৃষক, জনপ্রতিনিধিসহ ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলা সদরের গোডাউন রোডে এলজিইডির অর্থায়নে একটি ব্রিজ নির্মান করার জন্য গত ছয় মাস পূর্বে সমগ্র খালে বাঁধ নির্মান করে ঠিকাদারের শ্রমিকরা। ওই ব্রিজ নির্মান অনেক আগেই শেষ হলেও সেই বাঁধের মাটি অপসারণ না করায় উপজেলা সদরের পূর্ব পার্শ্বের খালে পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ওই বাঁধের পাঁচ শ’ গজ দুরত্বে থানা কোয়ার্টারের সামনে সদর বাজারে প্রবেশের জন্য এলজিইডি বিভাগ থেকে একটি ব্রিজ নির্মানের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গত ছয় মাস আগে ওই ব্রিজ নির্মানের সময় সমগ্র খালে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দেয় ঠিকাদার। পানি প্রবাহ বন্ধের ফলে গত বর্ষা মৌসুমে রাজিহার ও বাকাল ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকায় বর্ষার পানিতে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়ে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়। ফলে অসংখ্য মাছের ঘের, পান বরজ ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে বিনস্ট হয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিসাধিত হয়।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সভায় রাজিহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইলিয়াস তালুকদার, বাকাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিপুল দাস ও গৈলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোয়েব ইমতিয়াজ লিমন কৃষকদের স্বার্থে গোডাউন রোডের বাঁধের মাটি অপসারণ ও থানা কোয়ার্টারের ব্রিজের বাঁধ কেটে দিয়ে পানি চলাচল নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি করেন। কিন্তু অদ্যবর্ধি কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
যে কারণে বর্তমান সেচ মৌসুমে উপজেলা সদর থেকে পূর্ব ও উত্তর দিকে বিশেষ করে রাজিহার, বাকাল ও গৈলা ইউনিয়নের সেচের জন্য পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিনের স্রোত বন্ধ থাকা খালের পানির সাথে সদর হাট বাজারের ফেলা ময়লা ও বর্জের স্তুপ পানিতে পচে দূর্গন্ধ ও জীবানুবাহী রোগ ছড়াচ্ছে। ভরাট হয়ে গেছে খাল। সুবিধামতো সময়ে ওই পানি ধোঁয়া মোছার কাজে ব্যবহহৃত হচ্ছে হোটেল রেস্তোরাসহ চায়ের দোকানেও। চাষীদের দাবির মুখে সম্প্রতি কোয়ার্টারের সামনে নির্মানাধীন ব্রিজের জন্য দেয়া বাঁধের কিছু অংশ কেটে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। বাঁধের ওই কাটা অংশ দিয়ে সেচ মৌসুমে জোয়ারের সময় যেটুকু পানি প্রবেশ করে এলাকার চাষাবাদের প্রয়োজনে তা খুবই কম।
ভরা সেচ মৌসুমে বাঁধের কাটা অংশ দিয়ে উত্তর দিকে প্রবেশ করা পানির স্বল্পতায় রাজিহার ও বাকাল ইউনিয়ন এবং গৈলা ইউনিয়নের বড় অংশে বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হয়ে উৎপাদন কমের আশংকা রয়েছে।
উপজেলা সদরের খালে দুর্গন্ধযুক্ত কালো জীবানুবাহী পানি চলাচল নিস্কাসনের রাখার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন, এলজিইডি বিভাগ, উপজেলা কৃষি বিভাগ, স্যানিটেশন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চাষীদের চাষাবাদ সচল রেখে ও জীবানুবাহী পানি অপসারণ করতে কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী তারিক সালমন বলেন, চাষীদের কথা চিন্তা করে ঠিকাদারকে দিয়ে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে তা যে পর্যাপ্ত নয়, তা তাকে কেউ জানায়নি। তিনি আরও বলেন, কৃষি কর্মকর্তাকে নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই