আগ্রহ বেড়েছে ব্যাংক শেয়ারে

প্রায় ৪ বছর পর চলতি বছরের শুরু থেকে আবারও ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। শেয়ার বাজারে বিগত ধসের পর দাপট কমতে শুরু করে ব্যাংক খাতের। বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকায় শেয়ার বাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত ব্যাংক খাতের প্রভাব ধারাবাহিকভাবে কমে ২০১২ সালের পর তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

কিন্তু এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে চলতি বছরের শুরুর দিক থেকেই। বর্তমানে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট লেনদেনের একটি বড় অংশজুড়েই থাকছে ব্যাংক খাতের শেয়ার।

প্রায় প্রতিদিনই লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্থান করে নিচ্ছে ব্যাংক খাতের একাধিক কোম্পানি। তবে মোট লেনদেনে ২০০৯-১০ সালের তুলনায় ব্যাংক খাতের অবদান এখনও বেশ কম।

২০১০ সালে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩০ শতাংশের উপরে অবদান ছিল ব্যাংক খাতের। কিন্তু ২০১০ সালে শেয়ার বাজারে ধস ও ২০১২ সালের ব্যাংক কেলেঙ্কারির পর থেকে শেয়ার বাজারে ব্যাংকের প্রভাব কমতে থাকে।

২০১১ সালে ডিএসইর মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদান ছিল ২৫ শতাংশ। ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২২ শতাংশে। এরপরের বছরগুলোতে তা আরও কমে যথাক্রমে ২০১৩ সালে ১৫ শতাংশে, ২০১৪ সালে ১০ শতাংশে, ২০১৫ সালে ১০ শতাংশে ও ২০১৬ সালে কমে আসে ৯ শতাংশে।

চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয় ৩৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকের শেয়ারের অংশ ৫ হাজার ৮ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

পরের মাস ফেব্রুয়ারি জুড়ে লেনদেন হয়েছে ১৯ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ হচ্ছে ব্যাংকের শেয়ারের অংশ।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা এবি আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের একটি বড় অবদান রয়েছে। ব্যাংক খাতের শেয়ারের লেনদেন বৃদ্ধি পুঁজিবাজারের জন্য ভালো লক্ষণ। কারণ ব্যাংক খাতের লেনদেন বাড়লে তার একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ার বাজারেও।

‘সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বেড়েছে ২০১৬ সালে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফাও। তবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখনও বেশি। খেলাপি ঋণ কমানোর কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে,’ বলেন তিনি।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের দেশের বড় বড় ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধ না করার এক ধরনের কালচার রয়ে গেছে। আইনের বাস্তবায়ন না থাকায় তাদের মধ্যে এ প্রবণতা দেখা দেয়। আবার একশ্রেণীর পরিচালক রয়েছেন, যারা নিজের ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের অনৈতিকভাবে ঋণ দেন এবং নিজে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবেও কিছু ঋণ দেওয়া হয়। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

বিএসইসি-এর আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিনিয়োগকারীরা সাধারণত সেই খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন, যে খাত থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। ২০১০ ও ২০১১ সালে ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের যে লভ্যাংশ দিয়েছিল তা পরবর্তীতে ধরে রাখতে পারেনি।

‘এছাড়া একের পর এক ব্যাংক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হয়েছে, সেইসঙ্গে শেয়ার বাজারেও মন্দা বিরাজ করছিল। যে কারণে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আগ্রহ কমে। তবে ২০১৬ সালে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।’

এদিকে, ডিএসইর মাসভিত্তিক লেনদেনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লেনদেনের শীর্ষ স্থান দখল করেছে ওষুধ খাত। মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ২২ শতাংশই এ খাতের। আগের মাস জানুয়ারিতে মোট লেনদেনে ওষুধ খাতের আবদান ছিল ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ২৭টি।

ওষুধ খাতের পরেই রয়েছে প্রকৌশল খাত। ফেব্রুয়ারিতে মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জানুয়ারিতে প্রকৌশল খাত লেনদেনে শীর্ষে ছিল।

লেনদেনে তৃতীয় স্থানে থাকা জ্বালানি খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ১৮টি। ফেব্রুয়ারিতে মোট লেনদেনে এ খাতের অংশ ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। জানুয়ারিতে লেনদেনে জ্বালানি খাতের অংশ ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

বাকি খাতগুলোর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে বস্ত্র খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশে, যা জানুয়ারিতে ছিল ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর্থিক খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশে, জানুয়ারিতে এটা ছিল ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। বিবিধ খাতের অবদান জানুয়ারিতে ছিল ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে কমে ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া বাকি সবকয়টি খাতের অবদান ফেব্রুয়ারি মাস শেষে ৩ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর মধ্যে সেবা ও আবাসন খাতে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ২ দশমিক ২১ শতাংশ, খাদ্যের ২ দশমিক ১৯ শতাংশ, বিমার ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ট্যানারির ১ দশমিক ৫০ শতাংশ, সিরামিকসের ১ দশমিক ৪২ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, টেলিযোগাযোগের ১ দশমিক ২০ শতাংশ, ভ্রমণের দশমিক ৯৭ শতাংশ, আইটির দশমিক ৮৩ শতাংশ, কাগজ ও মুদ্রণের দশমিক ১২ শতাংশ, পাটের দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং বন্ডের দশমিক শূন্য ১ শতাংশ মোট লেনদেনে অবদান রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই