আজব এক শহর: যেখানে জনসংখ্যা কমতে কমতে প্রায়ই শূন্যের কোঠায়

জাপানের ইউবারি শহর। যেখানে জনসংখ্যা কমতে কমতে বর্তমানে প্রায় শূন্যের কোঠায়।

স্বাভাবতই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি শহরের লোকসংখ্যা ক্রমেই বাড়ে। কিন্তু ৫০ বছরে জাপানের ইউবারি শহরের জনসংখ্যা কমেছে ৯০ শতাংশ! শহরে বসবাসরত বাসিন্দাদের বেশির ভাগই বুড়োবুড়ি। শিশু নেই বলে বন্ধ হয়ে গেছে সেখানকার পাঠশালা! আজব এই শহরের ব্যতিক্রমি খবরটি দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

একসময় জাপানের কয়লার রাজধানী হিসেবে পরিচিত শহরটির বেশির ভাগ দালানকোঠাই এখন পরিত্যক্ত। শহরের পথঘাটে স্বাধীনভাবে চড়ে বেড়ায় বুনো হরিণেরা। এই দেশটির সবচেয়ে উত্তরের দ্বীপ হোক্কাইডুতে অবস্থিত ইউবারি। শিল্পোন্নত বিশ্বের খুব কম শিল্প-শহরের সঙ্গেই তুলনা করা চলে ইউবারিকে।

১৯৬০ সালের কথা। এই বছরের একেবারে শেষের দিকে এই শহরের জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজারের মতো। কয়লার শেষ খনিটাও বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯০ সালে বাইরের খনিশ্রমিকেরাও চলে গেলেন। তখনই জনসংখ্যা নেমে আসে মাত্র ২১ হাজারে। পরবর্তী দুই দশকে জনসংখ্যা নেমে আসে অর্ধেকে, মাত্র ১০ হাজার জনসংখ্যা দাঁড়ায়।

ইউবারি শহর বলা হয়ে থাকে বয়স্কদের শহর। পরিসংখ্যান দেখতে গেলে অনেক হিসাবেই সবার ওপরে উঠে আসতে পারে এই শহরের নাম। ইউবারিই এখন জাপান এবং এক কথায় বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্কদের শহর। ২০১০ সালে এই শহরের বাসিন্দাদের গড় বয়স ছিল মাত্র ৫৭ বছর। ২০২০ সালের মধ্যে এই গড় চলে যাবে ৬৫ বছরের উপরে। তখন ৪০ বছরের চেয়ে কম বয়সীদের তুলনায় ৮০ বছর বয়সীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠবেন এই শহরটিতে। এভাবে ইউবারি তখন বিশ্বের একমাত্র পেনশনভোগী সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরে পরিণত হয়ে উঠবে এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে।

শহরটিতে কোনো শিশু নেই। আর তাই নেই পাঠশালাও! শহরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা আসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রমাগতভাবে বুড়িয়ে যেতে শুরু করে ইউবারি। এখানকার তরুণ-তরুণীরা কর্মের তাগিদে বা খোঁজে পাড়ি জমিয়েছেন অন্যদেশে। ছেলেমেয়েরা না থাকলে বাড়িঘর আগলে থাকা বুড়োবুড়িদের সংসারে নাতি-নাতনীইবা থাকবে কোথা থেকে? আর তাই এই শহরের প্রতি ২০ জনের মাত্র একজনের বয়স এখন ১৫ বছরের নিচে।

এর মূল কারণ হলো একটি শিশু জন্মাতে জন্মাতে অন্তত এক ডজন মানুষ মারা যান এই ইউবারিতে। অথচ জাপানের অন্যসব শহরের মতোই ইউবারিতেও একসময় অনেক স্কুল-কলেজ ছিল। কিন্তু এখন মাত্র একটা স্কুলেই চলছে শিশু, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম তাও নামমাত্রে।

আর সে কারণে জন্ম ও মৃত্যুহারসহ জনসংখ্যার নানান পরিসংখ্যানে ইউবারি শহরকে পুরো জাপানের একটি ছোট্ট সংস্করণ হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে- এমনটিই মনে করেন অনেকেই। দেউলিয়াত্বের শিকার এই শহরের শেষ হাসপাতালটিকে সংক্ষিপ্ত করে এনে একটা ক্লিনিকে পরিণত করার সময় খ্যাতনামা চিকিত্সক তোমোহিকো মুরাকামিও এমন ধরনের মন্তব্য করেছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই