আজ পবিত্র হজ

আজ হজের দিন। লাখ লাখ হাজির কণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক, আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইক লা- শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা-শারিকা লাক; অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির; আপনার কোনো অংশীদার নেই; নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্যও আপনার; আপনার কোনো অংশীদার নেই।’

আজ রোববার সকাল থেকেই সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কণ্ঠের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে ঐতিহাসিক আরাফার ময়দান। আরবি জিলহজ মাসের ৯ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সে হিসেবে আজ হজের দিন। সকালেই মিনাসহ বিভিন্ন প্রান্ত হতে বিশ্ব মুসলিম একত্রিত হবে এ ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে।

হাদিসের বিধান অনুযায়ী, শনিবার জোহরের পূর্বেই মিনায় এসে অবস্থান করা সুন্নাত এবং তথায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় মুস্তাহাব, যা পালনে অধিকাংশ হাজি শনিবারই মিনায় এসে পৌঁছেছেন। তাঁরাই আজ (১১ সেপ্টেম্বর) হজ পালনের জন্য ফজরের নামাজ আদায় করেই কেউ আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন, আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কেউ কিছুক্ষণের মধ্যেই রওনা হবেন। কারণ, আজ তাদের হজ আদায়ের মূল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

সব বিশ্ব মুসলিমের মুখে একই আওয়াজ-
‘লাব্বাইক, আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইক লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা-শারিকা লাক; অর্থাৎ ‘আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির; আপনার কোনো অংশীদার নেই; নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্যও আপনার; আপনার কোনো অংশীদার নেই।’

সৌদি আরবের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশ ও স্থানীয়সহ প্রায় ১৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের উদ্দেশে শুক্রবার জুমআর নামাজের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত পবিত্র মক্কা নগরী থেকে মিনায় স্থাপিত হাজার হাজার তাঁবুতে এসে অবস্থান নেবেন।

মিনায় তাঁরা নামাজ আদায়, ইবাদত-বন্দেগি ও জিকির-আজকারে শনিবার রাত অতিবাহিত করেছেন। অপেক্ষার প্রহর গুণছেন আল্লাহ তাআলার সঙ্গে প্রেমের সেতুবন্ধ। তাই ফজর নামাজ শেষ হতেই কেউ হেঁটে, আবার কেউ বিভিন্ন যানবাহনে একই গন্তব্য জাবালে রহমতের পাদদেশ ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে হাজির হতে আত্মহারা। লাখো হজযাত্রীর মিছিলে বাংলাদেশ থেকেও হজ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করেছেন ১ লাখ ১ হাজার ৮২৯ জন।

ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন স্মরণ করিয়ে দেয় আদি-পিতা হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও আদি-মাতা হজরত হাওয়া আলাইহিস সালামের পুনঃর্মিলনের ঘটনাকে। এ আরাফা ময়দান সংলগ্ন জাবালে রহমতে নির্মিত হয়েছে তাঁদের পুনঃর্মিলনের ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ। যেখানে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ চুম্বন করেন; দোয়া করেন; ক্ষমা প্রার্থনা করেন; চোখের পানিতে বুক ভাষান। এ পাহাড় রহমতের পাহাড়; যে রহমতের পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থানকারী বান্দাদের আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন।

ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত পুণ্যভূমি আরাফাত ময়দানেই ইসলামের পূর্ণতার কথা ঘোষিত হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণও এ ময়দানেই প্রদান করেছিলেন। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার পরিপূর্ণতার ঐশী ঘোষণা ঘোষিত হয়েছিল- ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম’।

আজ হজে আগত লাখ লাখ মুসলমান দুই টুকরো সাদা কাপড়ে সজ্জিত হয়ে ক্ষণে ক্ষনে প্রকম্পিত করে তোলে আরাফার মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। গোনাহ মাফে কান্নার শব্দ ভেসে বেড়ায় বাতাসে। চোখের পানিতে সিক্ত হয় সফেদ দাঁড়ি ও কণ্ঠ। আল্লাহ তাআলা এ ময়দানেই তাঁদের ক্ষমা করবেন। এটাই হজযাত্রীদের আশা ও বিশ্বাস। এখানেই সকল হাজির সাথে আল্লাহ তাআলার সেতুবন্ধ তৈরি হয়। মুসলিম উম্মাহ হয়ে যায় নিষ্পাপ ‘মা’ছুম’।

হজের তিনটি ফরজের মধ্যে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা বলা হয় আরাফার ময়দানে অবস্থান করাকে। আরাফায় অংশগ্রহণ ছাড়া হজ পরিপূর্ণ হয় না। তাইতো হাজার হাজার হাজি উন্মুক্ত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করেন। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে আরাফার খোলা আকাশের নিচে এক কাতারে মিলিত হয়ে মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে ফরিয়াদ জানান সকাতর কণ্ঠে।

১৯৮১ সাল থেকে আরাফার ময়দানের খুতবা দানকারী সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি দৃষ্টিহীন ইমাম শায়খ আবদুল আজিজ বার্ধক্যজনিত কারণে আরাফার ময়দানের খুতবা প্রদানের দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। যিনি আজ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন, তিনিই হজের খুতবা পাঠ করবেন এবং বিশ্ব মুসলিমের এ মহাসম্মিলনে দোয়া-মুনাজাত করবেন।

তিনি আজ বাদ জোহর আরাফার ময়দানে অবস্থিত মসজিদুল নামিরা হতে খুতবা পাঠ করবেন। খুতবায় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলিম উম্মাহকে একাত্মতা প্রকাশ করার আহ্বান জানাবেন। মুনাজাতের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি, ভ্রাতৃত্ব, সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশ ও অবস্থা বিরাজের দোয়া করবেন।

মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও ঐক্য এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করবেন। জানা-অজানা সব গোনাহ মাফে আল্লাহ তাআলার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা হবে।

অতঃপর ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানেই এক আজানে পৃথক পৃথক ইক্বামাতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন তারা। সন্ধ্যায় মাগরিব না পড়েই রওনা হবেন মুজদালিফার উদ্দেশে।

আল্লাহ তাআলা বিশ্ব মুসলিমের ঐতিহাসিক মহাসম্মিলন আরাফার কার্যক্রমকে কবুল করুন। হজে অংশগ্রহণকারী সকল হাজির হজকে কবুল করুন। বিশ্ব শান্তি স্থাপনে ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানের মহাসম্মিলন হোক মানুষের মুক্তি, শান্তি ও কল্যাণের একমাত্র মাধ্যম। এই প্রত্যাশায়….



মন্তব্য চালু নেই