আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস

‘গো ওয়াইল্ড ফর লাইফ!’ যার ভাবানুবাদ ‘বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ, বাঁচায় প্রকৃতি বাঁচায় দেশ’। এ বছরের পরিবেশ দিবসে এমন প্রতিপাদ্যই নির্ধারণ করেছে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি)।

ইউএনইপি’র সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, পরিবেশ দূষণের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে তিন কিলোমিটার পুরু ধোঁয়াশা জমেছে। এ থেকে হতে পারে অ্যাসিড বৃষ্টি। যা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারে।

ছাই, অ্যাসিড, দাবানল, অ্যারোসল, অনিয়ন্ত্রিত জ্বালানির ব্যবহার, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও কল-কারখানার বিষাক্ত গ্যাস মিলে বাদামি মেঘের আস্তরণ তৈরি হয়। আর এ বাদামি মেঘের জন্যই বৃষ্টিপাত হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত ও দীর্ঘস্থায়ী। ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

আমাদের আশেপাশে তাকালেই চোখে পড়ে পরিবেশ দূষণের শত নমুনা। বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়ে থাকে। নদী বাঁচলে মানুষ বাঁচবে। অথচ ঢাকার নদীগুলোকে নদী না বলে চলমান বর্জ্যস্তূপ বললে ভুল হবে না।

জিনজিরা থেকে হযরতপুর কলাতিয়া এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পানি কালো রূপ ধারণ করেছে। নদীর পানি সকল কাজের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পচা পানির দুর্গন্ধের পাশাপাশি রোগ-জীবণু ছড়াচ্ছে। প্রতিদিন লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, পাগলা, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীতে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানা, শাড়ির ডায়িং, ট্যানারি এবং সার কারখানার শত শত টন তরল বর্জ্য, বৈধ অবৈধ হাজার হাজার কল-কারখানা ও জাহাজের বিষাক্ত বর্জ্য প্রতিদিন বুড়িগঙ্গায় নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীর বর্জ্যও এর পাড়ে ফেলা হচ্ছে। এ কারণে নদীর পানি পচে গিয়ে পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করছে। রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে মানুষের মাঝে।

বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই শোচনীয়। দেশের ভূগর্ভস্থ পানি আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত। দেশের বিভিন্ন এলাকার ধান, চাল, তরকারিসহ খাদ্যচক্রে মারাত্মক আর্সেনিক দূষণ দেখা দিয়েছে। বর্তমান দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬০টি জেলার পানিতেই গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশিমাত্রায় অর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এর ফলে দেশের মোট জন্যসংখ্যার অর্ধেকই আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। রাজধানীতে বসবাসকারী ৩০ লক্ষ মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। রাজধানীতে ৭০ শতাংশ লোকের সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। এর ফলে রাজধানীতে প্রতি বছর ১০ হাজারেরও বেশি শিশু পানিবাহিত রোগে মৃত্যুবরণ করে।

সচেতনতার অভাবেই পরিবেশ এ পরিস্থিতিতে দাড়িয়েছে বিবেচনায় যথার্থ স্লোগানেই সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে পরিবেশ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সভা-সেমিনারসহ শিশু-কিশোরদের মধ্যে আয়োজন করা হয়েছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতাও। সরকারিভাবেই শুধু নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বেশ সোচ্চার বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটির তাৎপর্য ব্যাখ্যায়।

এরই অংশ হিসেবে আজ রোববার (৫ জুন) সকাল ১১ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) নিজ কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণে বন ও বন্যপ্রাণীর ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা এবং বিকেল ৪টায় মিরপুর হযরত শাহ আলী মডেল হাই স্কুলে শিশু-কিশোর চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।

আর সাম্প্রতিক দেশে আঘাত হানা ‘রোয়ানু দুর্যোগ : প্রাণি ও মানুষের উপর প্রভাব’শীর্ষক এক গণ-আলোচনা সভা ডেকেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি), নাগরিক উদ্যোগ, বারসিক, উন্নয়ন ধারা (ঝিনাইদহ), সিডিপি মূল যুগ্ম আয়োজক হিসাবে এবং ইকো সোসাইটি, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, ইউনাইটেড পিপলস ট্রাস্ট, পিস, সিডাস ও বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি সংগঠন। সোমবার (৬ জুন) সকাল সাড়ে ৯ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।



মন্তব্য চালু নেই