আত্মহননের আগে ধর্ষিতার চিঠি

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মেয়ে ক্যাসিডি ট্রেভান। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল সে। এরপর ২২ মাস সে নিজের সঙ্গে, চারপাশের পরিস্থিতির সঙ্গে যুদ্ধ করে। কিন্তু, হেরে যায়। ১৫ বছর বয়সে আত্মঘাতি হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। কিন্তু যাওয়ার আগে অন্যদের জন্য লিখে রেখে যান একটি মর্মস্পর্শী চিঠি।

তার স্কুলেরই দুই টিনএজার ছেলে তাকে ধর্ষণ করে। এখানেই শেষ নয়। এরপরও তারা মেয়েটির পিছু ছাড়েনি। নানাভাবে তাকে নিয়মিত উত্যক্ত করতে থাকে। সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ভুলতে চাইলেও বার বার ফিরে আসতে থাকে নতুন করে। পরে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাবধান করতে চিঠিটি লিখে আত্মহননের মতো পথ বেঁছে নেয় মেয়েটি। মর্মস্পর্শী সেই চিঠিটি ‘সুইসাইড নোট’ হিসেবে ভাইরাল হয়ে গেছে। মৃত্যুর পর তার মা লিন্ডা এই চিঠি খুঁজে পান মেয়ের কম্পিউটারে।

”আমার নাম ক্যাসিডি ট্রেভান, এবং আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। আমি… স্কুলের (নাম প্রকাশ করা হয়নি) শিক্ষার্থী ছিলাম। আমাকে ধর্ষণ করেছিল একই স্কুলের ছেলেরা যারা এখনো স্কুলে নিয়মিত আসে। অন্যদের সাবধান করাই আমার উদ্দেশ্য (বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের এবং বাবা-মায়েদেরও)। তারা এ কাজ আমার সঙ্গে করতে পারলে অন্যদের সঙ্গেও করতে পারে। অন্তত এসব করার চেষ্টা করবে তারা। কেউ যদি তোমার সঙ্গে এসব করতে আসে, তো আমাকে বিশ্বাস করো, তোমাকে কেবল যুদ্ধ করতে হবে। যদি তা না করো, তবে আমার মতো বাকি জীবন কেবল অনুতাপেই ভুগতে হবে। সাবধান হও। নিরাপদ থাকো। ”

আত্মহত্যার কারণ হিসেবে মেয়েটি আরো লিখেছে, ”যে শিক্ষার্থীরা আমাকে ধর্ষণ করেছে, এ কাজের পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং ধর্ষণের পর হুমকি দিয়েছে তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতেই আমি এ কাজ করছি। ধর্ষণের পর তা নিয়ে পরেও আজে-বাজে কথা বলেছে তারা। কারো মনোযোগ আকর্ষণের জন্য আমি এই চিঠি লিখছি না। আমি লিখছি কারণ, এই স্কুলে প্রতিবছর ৭-১২ বছর বয়সী ১৫০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। আমার মনে হয়েছে তাদের সাবধান করে দেওয়া উচিত। ”

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ড্যান্ডনং পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়। ধর্ষণের সময় এবং তারপর তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকিও দেওয়া হয়। লিন্ডা এবং মেয়ে ক্যাসিডি এই ঘটনা নিয়ে ২০ বারেরও বেশি পুলিশের কাছে গেছেন। কিন্তু প্রমাণের অভাবে মামলাটি ধোপে টেকেনি।

ক্যাসিডির লেখা চিঠিটি শেষ হয়নি বলেই মনে করেন তার মা। তিনি বাকিটুকু লিখেছেন। ফেসবুক এবং সংবাদমাধ্যমে শেয়ার করেছেন এই চিঠি। তিনি লিখেছেন, ‘হুমকি-ধামকি আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। এইসব দানবদের কারণে আমার মেয়েকে ২২ মাস ভুগতে দেখেছি আমি। তারা আমার মেয়ের ফোন নম্বর এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল খুঁজে বের করে। এমন ঘটনার পরও তারা পিছু ছাড়েনি। সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি তার জীবনে আবারো ফিরে আসতে থাকে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, দুঃস্বপ্ন, ইনসমনিয়া, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা, প্যানিক অ্যাটাক, পিটিএসডি এবং ক্রমশ অবনতির দিকে যাওয়া মানসিক অবস্থা নিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সে। আমি নিজে রাগী বা প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষ নই। কিন্তু তোমাদের মতো ছেলেরা যা করেছে… আমার আশা তোমরা কোনদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না এবং কোনদিন ক্যাসিডি ট্রেভান নামটি ভুলে যাবে না। যতদিন বেঁচে থাকবে তোমরা ততদিন তোমাদের হাতে রক্ত লেগে থাকবে। ” সূত্র: ইন্টারনেট



মন্তব্য চালু নেই