‘আপনার মেয়ের লাশ মর্গে আছে, নিয়ে যান’

শনিবার রাতে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে স্কুলশিক্ষিকা সৈয়দা ইয়াসমিন রুমার মোবাইলে। তাকে বলা হয় ‘আমি সাগর বলছি, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আপনার মেয়ের লাশ আছে, নিয়ে যান।’ রুমা কিছু বুঝতে না পেরে ঢাকায় থাকা তার ভাই তৌফিক এলাহীকে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। পরে তৌফিক এলাহী বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজখবর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসে তার ভাগনি আফসানা ফেরদৌসীর লাশ শনাক্ত করেন।

সাইক ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী আফসানা ফেরদৌসির মৃত্যুর ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন তার মা। মৃত্যুর চার দিন পার হলেও এখনো এর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। এ ঘটনায় কাফরুল থানার পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে স্বজনরা হত্যা মামলা করবেন।

আফসানা ফেরদৌসির বাবা আখতার হোসেন প্রায় ছয় মাস আগে মারা গেছেন। তার মা সৈয়দা ইয়াসমিন রুমা ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ায় গ্রামের সরদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এক ভাই দুই বোনের মধ্যে আফসানা ছিলেন সবার বড়।

ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও নিহতের মামা তৌফিক এলাহী বলেন, ‘আমার বোনের ফোন পেয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নেই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এই নামে কোনো রোগী ভর্তি হয়নি এবং কোনো লাশও নেই। ইতোমধ্যে অপর একটি অপরিচিত মোবাইল থেকে ফোন করে জানানো হয় ফেরদৌসের লাশ আল-হেলাল হাসপাতালে আছে। পরে আমরা আল-হেলাল হাসপাতালে যোগাযোগ করি।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাফরুল থানায় যোগাযোগ করতে বলে। পরে কাফরুল থানার সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশ দেখে নিশ্চিত হই এটাই আমার ভাগনির লাশ।’

রবিবার আফসানা ফেরদৌসের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁয়ের রুহিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার সকালে লাশ বাড়িতে পৌঁছে। তাকে সুপরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর হত্যা মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

আফসানার মামা জানান, কারো সঙ্গে আফসানার কোনো বিরোধ ছিল কি না এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নন। তবে ধারণা করছেন, এই ঘটনায় আফসানার বন্ধু-বান্ধবরা জড়িত থাকতে পারে।

যে সাগর ফোন করে তথ্য দিয়েছেন তাকেও তারা সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন। এ ব্যাপারে পুলিশকে তথ্য দেয়া হয়েছে। এখন পুলিশের তদন্ত কতদূর আগায় সে দিকে তাকিয়ে আছেন স্বজনরা।

কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শিকদার মো. শামীম হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।’



মন্তব্য চালু নেই