আপন বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক সেই ছেলে যা বললেন

আপন বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক সফুর প্রশ্ন তুলে ধরে বলেন, নিজের বোনকে কি কেউ কখনো ধর্ষণ করতে পারে? ওরা আমাকে মারধর করেছে, ইলেকট্রিক শক দিয়েছে তার পরেও আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিতে পারেনি। পরে আমার মাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে।

দুই হাতে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলছিল রাঙ্গুনিয়ার কিশোর তাসফিক উদ্দিন সফুর। আপন বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়ে শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছে সফুর।

কিশোর সফুর যখন সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিল, তখন তার আট বছরের ছোট ভাইটি পাশে বসেই দেখছিল। কিন্তু ভাইয়ের কান্না দেখে তার মুখেও নেমে শ্রাবণের অন্ধকার। পাশে বসা মা, বাবা আর সাংবাদিকদের সারিতে বসা ধর্ষিতা বোনটিও কাঁদতে থাকলে সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সফুরের মা নুর নাহার বেগম বলেন, আমার মেয়ে শাহ আলমের বাসায় বিভিন্ন সময় যেত। এর কোনো এক সময় শাহ আলম তাকে ধর্ষণ করে। পরে শাহ আলমের পরিবার থেকেই খবর পেয়ে আমি ৯ মে শাহ আলমের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করি।

রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই মুজিবুর, ওসি হুমায়ুন কবির ও চেয়ারম্যান মো. আলী শাহের চক্রান্তে ওই অভিযোগ তারা নেয়নি।

‘উল্টো আমাকে এবং আমার মেয়েকে থানায় আটকে আমার ছেলেকে মারধর করে স্বাক্ষর নিয়েছে। পরে তাকে নিজের বোনকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ আদালতে প্রেরণ করে। আমরা গরিব বলে কি আমারা কোনো বিচার পাব না?’

এর আগে শুক্রবার গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগার থেকে জামিনে ছাড়া পায় সফুর। গত রবিবার চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুন্যাল-২ এর বিচারক মো. সেলিম মিয়া তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ৫৫ বছর বয়সী শাহ আলম নামে এক ধর্ষককে বাঁচাতে চলতি বছরের ১০ মে কিশোর সফুরের প্রকৃত বয়স লুকিয়ে তাকে নিজের বোনের ধর্ষণকারী বানিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়। শুধু তাই নয়, প্রকৃত আসামিকে আড়াল করে পুলিশ মিথ্যা এজাহার দাখিলের মাধ্যমে আপন বোনের ধর্ষক সাজিয়েছে কিশোর সফুরকে। তার কাছ থেকে জোরপূর্বক ১৬৪ ধারার জবানবন্দি আদায়ও করেছে। ফলে আদালতকে প্রভাবিত করে গত ১০ মে থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি হয়ে জেলহাজতের বাসিন্দা হতে হয়েছে নির্দোষ কিশোর সফুরকে।

আপন ছোট বোনকে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে ওই কিশোরের জেলে যাওয়ার ঘটনাটি তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়। এরপর উচ্চ আদালতে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মূল অভিযুক্ত শাহ আলমকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ আসে। একইসঙ্গে মিথ্যা এই মামলাটি কেন বে-আইনি ঘোষণা করা হবে না এ বিষয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে পুলিশ শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়। সেই শাহ আলম এখন রয়েছেন জেল হাজতে।



মন্তব্য চালু নেই