আবারও ভাড়াটিয়াদের তথ্য যাচাই-বাছাই

নতুন করে ভাড়াটিয়াদের তথ্য ফরম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। গত ২৪ ডিসেম্বর আশকোনা এলাকার একটি বাসায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশকোনার ওই বাসার মতো মিথ্যা পরিচয়ে জঙ্গিরা এর আগেও উত্তরা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল। তদন্তে এসব বিষয় উঠে আসার পর নতুন করে ভাড়াটিয়াদের তথ্য ফরম আলোচনায় আসে।

জানা গেছে, গুলশানের হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার পর ভাড়াটিয়াদের তথ্য ফরম পূরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফরমের সঙ্গে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপিও জমা নেওয়া হয়। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২০ লাখ ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম বিতরণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ এসব ফরম যাচাই-বাছাই করে। সবশেষ ২৩ জুন পর্যন্ত পুলিশ প্রায় ১৮ লাখ তথ্য সংগ্রহ করে। এসব তথ্য পুলিশের ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, ভাড়াটিয়াদের তথ্য যাচাই-বাছাই পুলিশের একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি মূলত জননিরাপত্তার জন্য। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন সুষ্ঠু থাকে এজন্য পুলিশ এই উদ্যোগ নিয়েছে। ভাড়াটিয়াদের সব তথ্য গোপন রাখবে পুলিশ। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ঢাকাবাসী পুলিশকে সহযোগিতা করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে আলোচিত বেশকটি হত্যার ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যারা ভাড়াটিয়া হিসেবে বিভিন্ন বাড়িতে উঠেছিল। এছাড়া জঙ্গিরা ছদ্মনামে ও মিথ্যা পরিচয়ে বিভিন্ন বাসায় অবস্থান করছিলো। গুলশানের ক্যাফেতে হামলার পর জঙ্গিদের বিভিন্ন বাসায় মিথ্যা পরিচয়ে অবস্থানের তথ্য পাওয়া যায়। জঙ্গিদের ঠিকানা সংগ্রহ না করার অপরাধে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ির মালিককে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া কল্যাণপুরের জাহাজ ভবনে মালিকের স্ত্রীকেও একই অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসব ঘটনার পর ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে নিজ উদ্যোগে তথ্য ফরম আদায়ের তোড়জোর শুরু করে বাড়ির মালিকরা। কিন্তু গত ২৪ ডিসেম্বর আশকোনার ওই বাসায় অভিযানের পরে আবারও জঙ্গিদের মিথ্যা পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেওয়ার তথ্য বেরিয়ে আসে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পুলিশকে প্রথমে বেগ পেতে হয়। অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত তথ্য দিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন। হয়রানি বা অন্য কোনো মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পারে- এমন আশঙ্কার কারণে তারা তথ্য দিতে চাচ্ছিলেন না। অনেকেই ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তথ্য দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে পুলিশের সদস্যরা ওইসব ভাড়াটিয়াদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর ভাড়াটিয়ারা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য দিতে রাজি হয়েছেন। রাজধানীতে ২৮৭টি বিট পুলিশের মাধ্যমে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। এরআগে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

পুলিশের পক্ষ থেকে সরবরাহকৃত ফরমে বাড়িওয়ালার নামসহ ব্যক্তিগত তথ্য এবং এক কপি ছবি চাওয়া হয়। যেসব নাগরিক ফরম জমা দিয়েছেন তারা ওই ফরমে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে পুলিশের কাছে ওই ফরম জমা দিয়েছেন। ওই ফরমে বাড়ির গৃহকর্মী এবং গাড়ি চালকের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশ বাড়ির মালিকদের বলে দিয়েছেন যেসব লোক বাড়ি ভাড়ার জন্য আসবেন তাদের যেন বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়। কারও চালচলনে সন্দেহজনক হলে যেন সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এতে করে অপরাধীরা আগের মতো যেখানে-সেখানে বাড়িভাড়া নিতে পারে না বলে জানা গেছে।

কল্যাণপুরের একটি ভবনের তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া আবুল হোসেন বলেন, প্রথমে পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের একটি ফরম সরবরাহ করা হয়েছিল। ওই ফরমে আমাদের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিল পুলিশ। তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে শঙ্কা ছিল। তবে বিষয়টি ভালোভাবে জানার পর নিজ থেকেই ফরম পূরণ করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অভিযানের সময় দেখা গেছে, দুর্বৃত্তরা বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় বাড়ির মালিককে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল। দুর্বৃত্তরা ওই বাসায় বসে বিভিন্ন অপরাধের পরিকল্পনা করেছিল। ওই বাসাগুলো অধিকাংশ ছিল মেস। কেউ ১ মাস অথবা কেউ ১০ দিন আগে ওই বাসাগুলোতে উঠেছিল। তারা ওইসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বা গোলাবারুদ রেখে সেখান থেকে পালিয়ে গেছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে জটিলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে এবং দুর্বৃত্তদের দ্রুত চিহ্নিত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারপরও মিথ্যা পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেওয়া থেমে নেই। গত ২৪ ডিসেম্বর আশকোনার ওই বাসায় জঙ্গিরা মিথ্যা পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছিলো। নিয়ম অনুযায়ী তারা ভাড়াটিয়ার তথ্য ফরমও পূরণ করে। পুলিশ বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের এক পর্যায়ে জঙ্গি অবস্থানের বিষয়টি উঠে আসে। এরপর পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।



মন্তব্য চালু নেই