আবারো আলোচনায় বিচিত্র সেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল

বিশ্বের রহস্যময় স্থানগুলোর অন্যতম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল।তবে কিছু প্রকৃতিগত ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য ছাড়া এই ট্রায়াঙ্গল অন্য সব এলাকার মতোই স্বাভাবিক। এখন পর্যন্ত এখানে যত রহস্যময় দুর্ঘটনার কথা শোনা গেছে, অন্য কোথাও এত বেশি এরকম দুর্ঘটনা ঘটেনি। এ জন্যে স্থানীয় অধিবাসীরা এ এলাকাটির নামকরণ করেছে পাপাত্মাদের ত্রিভুজ।

তিনটি প্রান্ত দিয়ে সীমানাবদ্ধ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অবস্থান হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগরে। তিনটি প্রান্তের এক প্রান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, একপ্রান্তে পুয়ের্টো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুদা দ্বীপ অবস্থিত। ত্রিভুজাকার এই অঞ্চলটির মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর অংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।

jakia..barmuda 2_85863_1
এ অঞ্চলের রহস্যময়তার একটি দিক হল, কোনও জাহাজ এই ত্রিভুজ এলাকায় প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই বেতার তরঙ্গ প্রেরণে অক্ষম হয়ে পড়ে। উপকূলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। একসময় দিক নির্ণয় করতে না পেরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। এ অঞ্চলে হারিয়ে যাওয়া জাহাজ এবং বিমানগুলোর কোনো ধ্বংসাবশেষও খুঁজে পাওয়া যায় না।

মার্কিন নেভির সূত্র অনুযায়ী, গত ২০০ বছরে এ এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং ২০টি বিমান চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৮ সালের মে মাসে হারিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ডুবোজাহাজের ঘটনাটি সারা বিশ্বে সবচাইতে বেশি আলোড়ন তুলেছিল।

সম্প্রতি হারিয়ে গেছে আরেকটি বড় আকারের মালবাহী জাহাজ।এল ফারো নামে ৭৯০ ফুট বৃহৎ ওই জাহাজটি ফ্লোরিডা এবং পুয়ের্তো রিকোর মধ্যবর্তী কোনো এক অংশে ঝড়ের কবলে পড়ে এবং নিখোঁজ হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডাতে জাহাজটি ঘূর্ণিঝড় জোয়াকুইনের কবলে পড়ে। এর পর এটি সান জুয়ানের অভিমুখে চলতে শুরু করে। এর আগেই পুয়ের্তো রিকোকে জাহাজের পক্ষ থেকে জানানো হয় তাদের জ্বালানি এবং পানীয় শেষ হয়ে এসেছে। সমুদ্রে সেই সময়ে ২০ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতায় ঢেউ উঠছিল।

১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্টে পাঁচটি বোমারু বিমান প্রশিক্ষণ চলাকালীন হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাবার মুহূর্তে বৈমানিকদের একজন অতি নিম্ন বেতার তরঙ্গ পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার এই বেতার বার্তাতে বারবার একটি কথাই বলা হচ্ছিল, ‘সামনে প্রচণ্ড কুয়াশা। আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় যাচ্ছি তাও বুঝতে পারছি না। আমাদের উদ্ধার করো।’

 

000_85863_2

এ বার্তা পাওয়ার পরপরই মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি উদ্ধারকারী টিম এ অঞ্চলের দিকে রওনা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তারাও নিখোঁজ হয়ে যায়। এভাবে এ এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে মনে করা হয়। সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হল, হারিয়ে যাওয়া এসব যানগুলোর কোনও ধ্বংসাবশেষ পরবর্তীকালে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায়নি। এর রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন সময়ে বেতার তরঙ্গের অনুপস্থিতির কথা বলা হলেও কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। মার্কিন সামরিক বাহিনী এ এলাকায় বেশ কিছু গবেষণা চালিয়েও তেমন কোনও তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি।

অনেকে মনে করেন, নাবিকদের ভাষ্য অনুযায়ী এ এলাকায় মাঝে মাঝে বেতার তরঙ্গ হয়তো হারিয়ে যায়, তবে তা সবসময়ের জন্য নয়। কারণ পৃথিবীর কোনও এলাকায় স্বাভাবিক বেতার তরঙ্গের প্রবাহ হারিয়ে যেতে বা নিশ্চিহ্ন হতে পারে না। তাহলে সারা পৃথিবীর বেতার সিস্টেমই ধ্বংস হয়ে যাবে।

গবেষকরা হারিয়ে যাওয়া যানের ধ্বংসাবশেষ না পাওয়ার যে ব্যাখ্যাটি দিয়ে থাকেন তা হল, আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে একটি অন্যতম গভীর স্থান হচ্ছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এমনকি আধুনিক ও প্রশিক্ষিত ডুবুরি সরঞ্জাম দিয়ে এই অঞ্চলে উদ্ধার কাজ চালানো এখনও অসম্ভব। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির কারণে ধ্বংসাবশেষ কোথায় আছে তা হয়তো জানা সম্ভব, কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করা ততটাই কঠিন। ফলে এ এলাকায় কোনও ধ্বংসাবশেষ নাও পাওয়া যেতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই