আবাসিক এলাকার ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে

আবাসিক এলাকায় থাকা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আবাসিক এলাকায় নতুন করে কোনো ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হবে না।

সচিবালয়ে বুধবার (২০ জুলাই) নগর এলাকার রাস্তার পাশে আবাসিক প্লট ও ভবনে রেস্টুরেন্ট, বারসহ নানাবিধ বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনাজনিত সমস্যা নিরসনে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন-বিষয়ক কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক এতে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরানোর বিষয়ে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি সভায় বলেন, ‘আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ি। তারা বলেন, আমাদের ট্রেড লাইসেন্স আছে, কেন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবেন। ইতিমধ্যে অনেকে মামলাও করেছেন। ট্রেড লাইসেন্স বহাল রেখে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।’

এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, ‘আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ আছে। এখন যেসব লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়নি, সেগুলো বাতিল হবে। একই সঙ্গে ওই সব এলাকায় নতুন করে কোন লাইসেন্স ইস্যু করা হবে না।’

স্থানীয় সরকার সচিব বলেন, ট্রেড লাইসেন্স বলবৎ রেখে আমরা কীভাবে উচ্ছেদ করব। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া স্থানীয় সরকারের একটা আয়। কিন্তু এখন আয় দেখার সময় নেই। এখন আমরা বিপন্নপ্রায়। আমাদের এ আয়টা আর দরকার নেই। এখন আমাদের অন্য আয়ের দিকে যেতে হবে।’

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ১২ হাজার ৯৫৭ নোটিশ

সিটি করপোরেশনগুলোর আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিষেবা সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ উঠে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ১২ হাজার ৯৫৭টি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

নোটিসের জবাব পর্যালোচনা করে সংস্থাগুলো এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।

সভায় জানানো হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তিন হাজার ১৫টি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এক হাজার ১৩৭টি এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আবাসিক এলাকার ২ হাজার ৪০০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিয়েছে।

এ ছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশন ২৬টি, গাজীপুর ৩৭৬টি, কুমিল্লা ৪০টি, চট্টগ্রাম ১৫০টি, বরিশাল ৫৮টি, সিলেট ২৬টি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সরে যেতে ৫টি নোটিশ পাঠিয়েছে।

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ৫ হাজার ৫৩৪টি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ১১২টি এবং ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর ১৩টি প্রতিষ্ঠান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ৫১টি বারকে নোটিশ দিয়েছে বলে সভায় জানানো হয়।

সিটি করপোরেশন ও পরিষেবা দেওয়া সংস্থাগুলোর নোটিশ দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে বলেও সভায় জানানো হয়।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, ঢাকার ৩৪টি চার ও পাঁচ তারকার হোটেলের বিষয়ে রাজউকের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সভায় স্থানীয় সরকার সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা আমাদের ছয় মাস সময় দিয়েছে। আমরা ছয় মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চাই। তবে এখনই আমরা ভাঙচুর শুরু করতে চাই না। নোটিশের জবাবে তারা কী বলছেন তা শুনতে হবে, শুনানির প্রয়োজন আছে কি না―তাও দেখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যে যে সংস্থা যে যে আইন দিয়ে এ মহানগরকে রক্ষা করে, আবাসিক এলাকাকে রক্ষা করে, সেই ডিপার্টমেন্টই নিজ নিজ কাজ করবে। সমন্বয় করে আমাদের কাজ করতে হবে। কারো কোনো গ্যাপ থাকলে দোষারোপ না করে বলুন।’

প্রতি মাসেই মন্ত্রিসভায় অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান সচিব।

হোটেল রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স দেয় ঢাকার জেলা প্রশাসন। সভায় জেলা প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধি না ডাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আব্দুল মালেক। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দ্রুত ঢাকার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগর নির্দেশ দেন।

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক থাকায় সভার এক পর্যায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জ্যোতির্ময় দত্তকে সভা পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে সচিব সে বৈঠকে যোগ দিতে চলে যান।

পরে স্থানীয় সরকার সচিব সভার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, আবাসিক এলাকা থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হবে। রাজনৈতিক কার্যালয়ও এ থেকে বাদ যাবে না।



মন্তব্য চালু নেই