আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরাতে সময় ৬ মাস

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য নগরীর আবাসিক এলাকা থেকে অননুমোদিত যেকোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আগামী ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে। না হলে এসব প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমনকি আবাসিক এলাকায় এখন যেসব অনুমোদিত স্কুল, কলেজ, গেস্টহাউসসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানও পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নিতে হবে।

সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ সংক্রান্ত কমিটির চার সুপারিশের ভিত্তিতে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল আবাসিক এলাকা গড়তে দেশের নগরগুলোর আবাসিক এলাকা থেকে অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আগামী ছয় মাসের মধ্যে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো।

তিনি বলেন, নগর এলাকার রাস্তার পাশে আবাসিক প্লটে কোনো ভবনে রেস্টুরেন্ট, বারসহ নানাবিধ বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনাজনিত সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আজ মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়। গত বছরের ৮ জুন মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ বিষয়টিকে (আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পূর্ত মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে বহুদিন সভা ও পরিদর্শন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করেছে।

প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ করা হয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভার নির্দেশনা অনুযায়ী সিটি করপোরেশন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সমন্বিতভাবে এ সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে। প্রয়োজনে তারা মানুষকে বুঝিয়ে ও তাদের সহযোগিতা নিয়েই স্থাপনা সরানোর কাজ শেষ করবে।

শফিউল আলম বলেন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার তারিখ (৪ এপ্রিল) থেকে ছয় মাসের মধ্যে নগরীর আবাসিক এলাকা থেকে অননুমোদিত বাণিজ্যিক স্থাপনা সরাতে হবে। অন্যথায় সিটি করপোরেশন, রাজউক, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য সংস্থা সম্মিলিতভাবে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেবে।

চার সুপারিশের কথা তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সকল অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে, ইউটিলিটি সেবা (গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন) বন্ধ করে দেওয়া হবে, প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে কোনো প্রকার বৈধতার সুযোগ না নিতে পারে এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ট্যাক্স, ভ্যাট আদায় বন্ধ রাখা হবে।

তিনি বলেন, আবাসিক এলাকার কোনো প্লটের বেসমেন্ট বা ভূতলের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা শুধু পার্কিং কাজে নিশ্চিত করা হবে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হলে তা উচ্ছেদের লক্ষ্যে রাজউক ও সিটি করপোরেশন যৌথভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করবে। রাজধানীর বাইরের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থা একত্রে কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

আবাসিক এলাকায় বার লাইসেন্স বাতিলকরণ ও অপসারণের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন করে কোনো লাইসেন্স প্রদান না করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তিনি আরো বলেন, আবাসিক এলাকায় রেস্ট হাউজ ও আবাসিক হোটেল বন্ধ করা হবে। রাজউক ও সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্লট মালিককে নিজ উদ্যোগে স্থাপনা অপসারণের জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হবে। ব্যর্থতায় পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সকল রেস্ট হাউজ অপসারণ করা হবে।

আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনার অনুমোদন পাওয়ার কথা নয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি কেউ অনুমোদন পেয়ে থাকেন। তাদের হয়ত বুঝিয়ে সরাতে সময় একটু বেশি লাগতে পারে।

শফিউল আলম বলেন, ‘আবাসিক এলাকাকে আবাসিক চরিত্রে নিয়ে আসতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে আমরা পরিকল্পিত নগরায়নের দিকে যাব।’



মন্তব্য চালু নেই