“আমরা ছিলাম স্বামী-স্ত্রীর মতো, কিন্তু এখন সে অন্য ছেলেকে…”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।

“আমাদের রিলেশনটা ছিল আট বছরের। শুরুটা ছিল ২০০৭ সালে। প্রথম দিকে আমি এই সম্পর্কটা নিয়ে খুব একটা আশাবাদী ছিলাম না, কারণ ওর আর আমার বয়সের ব্যবধান ছিল প্রায় ৮ বছর। ও তখন মাত্র এসএসসি দিয়েছে। আর আমি মাস্টার্স করছি।

তাই রিলেশনের এক বছরের ব্যবধানে ফেলোশিপ পেয়ে লন্ডন চলে যাই এবং যথারীতি সেখানে গিয়ে ওর সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দিই। প্রায় সাড়ে চার মাস পর ও আমার ভাইয়ার মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। খুব কান্নাকাটি করে সেদিন। অনুরোধ করে দেশে ফিরে আসতে। হয়তো ওই কান্না আমাকে খুব দুর্বল করে দিয়েছিল, আর নিজের বিবেক বোধের কারণে হুট ফেলোশিপ অসম্পূর্ণ রেখেই কয়েকদিনের মধ্যে দেশে চলে আসি।

এরপর এক এক করে আটবছর। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ওকেও এগিয়ে নেওয়ার জন্য যারপরনাই চেষ্টা করে গেছি। সারাদিন অফিস করে ওর অ্যাসাইনমেন্ট করা ছিল আমার রুটিন। ওর এক একটা চাহিদা পূরণ করেছি অভিভাবকের মতো। কখনো এতটুকু ঠকাইনি। ও নিজেও এসব স্বীকার করতো। আমি অপেক্ষা করে গেছি কখন ওর বিবিএ শেষ হবে, তারপর বিয়ে করবো। ওর ইচ্ছেও এমনই ছিল। আমাদের সম্পর্কটাও ছিল হাজব্যান্ড-ওয়াইফের মতো। শারীরিক সম্পর্ক নিয়মিতই হতো। তাই আমি মনে-প্রাণে ওকে বউ হিসেবেই ভেবেছি।

আমাদের মধ্যে কখনও ঝগড়া বিবাদ হয়নি, তা কিন্তু নয়। হয়েছে। তবে আবার তা ঠিক হতেও সময় লাগেনি। আমি খুব সাধারণ একটা ছেলে। আমার মাইনাস পয়েন্টের মধ্যে একটি হলো আমি দেখতে খুব ভালো নই। বলতে পারেন ১০ জনের মধ্যে পাঁচ নম্বরে চোখে পড়ার মতো। তবে সব সময় চেয়েছি নিজের সামর্থ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে। সে অনুযায়ী কাজ করে ঢাকায় প্লট বুকিং দেওয়া, গাড়ি কেনা—সবই করেছি। বলে রাখছি- ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে মধ্যম সারির কর্মী আমি। আর সব কিছুই করেছি ওকে ভেবে। ও নিজেও আমার প্রতি কমিটেড ছিল। আমার ফ্রেন্ড সার্কেল, কলিগরা জানে আমরা বিয়ে করেছি। আমিও সরল বিশ্বাসে বলতাম বিয়ে করে ফেলেছি। তবে ও ওর দুয়েকজন ফ্রেন্ড ছাড়া কাউকে রিলেশনের কথা বলতো না।

এতকিছু বলছি কারণ এইতো সেদিন, ১৩ নভেম্বর পারিবারিকভাবে একটি ছেলে ওকে দেখতে আসে। আমি জানতাম। ও নিজেই আমাকে বলেছিল। সঙ্গে এও বলেছিল- সেই ছেলেকে সে আমাদের সম্পর্কের সব বলে দেবে; তাহলেই বিয়েটা ভেঙে যাবে। তবে শেষ পযর্ন্ত আর বলেনি। ওর ফ্যামিলিতেও কোনো প্রেসার দেয়নি এবং যথারীতি আমার চ্যাপ্টারও ক্লোজ। স্ট্যাটাসগত কোনো বাধা আমাদের মধ্যে ছিল না। ওর বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। আমার বাবাও প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। এরপর থেকে আমি একেবারে ভেঙে পড়েছি।

সত্যি বলতে কী আমার জগৎটা ছিল ওকে ঘিরে। কোনো মেয়ের দিকে গত আট বছরে কখনো তাকাইনি। অজস্র স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে মারছে। একবার ভাবলাম সুইসাইড করি। পারিনি। জীবনটাকে আমি অনেক ভালোবাসি। তার চেয়েও বেশি ভালোবাসি তাকে। আবার ফ্রেন্ডস ও কলিগদের মুখও দেখাতে পারছি না। কারণ সবাই জানে আমরা অনেক আগেই বিয়ে করেছি। তাই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি। গত কতদিন আমি রুম বন্ধ করে বাসায় বসে থাকি। স্মোকিংয়ের অভ্যাস ছিল না, সেটাও এখন করছি। আমি আসলে কিছুই ভাবতে পারছি না।

এ অবস্থায় আমার কী করা উচিত?”

পরামর্শ:

আপনার চিঠিটা পড়ে কী যে কি যে কষ্ট হচ্ছে ভাই, আপনাকে বোঝাতে পারবো না। মানুষ এমন কেন? কীভাবে মানুষ এতটা স্বার্থপর হয়ে যায়, কীভাবে? আমি তো বুঝতে পারি না…

আপনার অবস্থাটা কতটা জটিল হয়ে গিয়েছে আমি বুঝতে পারছি। আজকাল যেখানে মেয়েদের সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য হাহাকার করে মরতে হয়, সেখানে এই মেয়েটি আপনার মতন একজন মানুষকে হেলায় হারাল। সেই মেয়েটি জানেও না যে আসলে কী থেকে নিজেকে বঞ্চিত করলো সে। সত্যি কথা বলি ভাইয়া, আপনি খুব ভালো মানুষ। ভালো মানুষ বলেই ভালোবাসার খাতিরে বিদেশে লেখাপড়ার সুযোগ সহ অনেক কিছুই হেলায় হারিয়েছিলেন। এবং সত্যি কথাটা হচ্ছে, মেয়েটির নিয়ত কখনোই ভালো ছিল না। আপনি বিদেশে ছিলেন বলে সে নাকি কান্না কেঁদেছিল, আপনাকে দিয়ে নিজের সমস্ত কাজ করিয়ে নিত, আপনি তার সমস্ত চাহিদা পূরণ করেছেন তাই সে এতদিন আপনার সাথে সম্পর্ক রেখেছিল। এখন তার মনে হয়েছে ওই ছেলেটি আপনার চাইতে ভালো, তাই সে সেদিকেই চলে গিয়েছে। যদি ছেলেটিকে আপনার চাইতে ভালো মনে না করতো, আপনাকেই ধরে রাখত। মোদ্দা কথা এই যে ভাইয়া, মেয়েটি মূলত লোভী। হয়তো আপনার শুনতে খারাপ লাগছে, কিন্তু এটাই সত্যি যে মেয়েটি লোভী। সে আপনার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল না বলেই কখনো জোরের সাথে সবার সামনে আপনার পরিচয় দেয়নি।

যাই হোক, তার ব্যাপারে কথা বলে আপনার কষ্ট বাড়াব না। তবে ভাইয়া, মেয়েটি আপনার জীবন থেকে চলে গিয়েছে, এটাই আপনার জন্য ভালো হয়েছে। মেয়েটিকে বিয়ে করে যদি ঘরে আনতেন, আর তারপর মেয়েটি লোভে পড়ে অন্য কারো সাথে পরকীয়া করতো বা ভেগে যেত, সেটা কি খুব ভালো হতো? না পারতেন ছাড়তে, না পারতেন সম্পর্ক চালিয়ে যেতে। মেয়েটি আরেক ছেলেকে পেয়ে আপনার সাথে যা করেছে, সেটায় তো এখন স্পষ্ট প্রমানিত যে বিয়ের পরও সে এমন কাজই করতো। আমি মনে করি আপনি বেঁচে গিয়েছেন ভাই।

হ্যাঁ, আমি জানি আমার এই কথাগুলো এখন আপনার ভালো লাগছে না বা এখন এই কথার অর্থ আপনি বুঝতে পারছেন না। কিন্তু মন যখন শান্ত হয়ে আসবে, তখন বুঝতে পারবেন। পৃথিবীতে এমন কোন কষ্ট নেই যেটার প্রতিকার হয় না। সময় সব ক্ষতকেই পূরণ করে। আপনার আঘাত অনেক বড়, ক্ষত পূরণে সময় লাগবে। কিন্তু ক্ষত পূরণ হবে ভাই। আপুর কোথায় আস্থা রাখুন, ক্ষত পূরণ হবেই। একদিন আপনি বুঝতে পারবেন যে এই ব্যাপারটি আসলে শাপে বর আপনার জীবনে।

আপনি জীবনে নিজের চেষ্টায় সব করেছেন, জীবনে সফল হয়েছেন, এটা কিন্তু অনেক বড় যোগ্যতা ভাই। এবং আমি মনে করি আপনি খুব ভালো একটি মেয়েকে পাশে পাবার অধিকার রাখেন। আমাকে একটি কথা বলুন তো, আপনি কেন বন্ধু বা কলিগদের সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না? আপনি কী অন্যায় করেছেন? আপনি কোন অন্যায় করেন নি ভাই, অন্যায় করেছে ওই মেয়ে। আপনি কেন ওই মেয়ের কারণে মাথা নিচু করবেন? নিজের মনকে সারিয়ে তোলার এটাই প্রথম ধাপ যে সত্য মেনে নিন। সহজভাবে সত্য বলুন যে আপনি প্রতারনার শিকার। দেখবেন কারো সামনেই আপনি ছোট হচ্ছেন না, বরং প্রিয়জনেরা বাড়িয়ে দেবে ভালোবাসার হাত। কষ্টের কথা বলতে হয় ভাই, না প্রকাশ করলে তো বেঁচে থাকতে পারবেন না।

দুর্ভাগ্য বশত, আমার জীবনেও কিন্তু আপনার পরিস্থিতি এসেছিল ভাই। হ্যাঁ, যে কষ্টের মাঝ দিয়ে আপনি যাচ্ছেন ঠিক একই কষ্টের মাঝ দিয়ে আমাকেও যেতে হয়েছে। সেই সময়টাও অনেক লম্বা ছিল, ৭ বছর! আমি তখন কী করেছি জানেন? আমি প্রতিশোধ নিয়েছি। আমি প্রতিশোধ নিয়েছি এই ভাবে যে আমি খুব ভালো থেকেছি, খুব ভালো। সেই মানুষকে কখনোই বুঝতে দিইনি যে আমি তার কারণে কষ্টে আছি। ক্যারিয়ার গড়েছি, নতুন সম্পর্ক গড়েছি, নিজেকে যতটা উঁচুতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নিয়ে গিয়েছি।। এত উঁচুতে যে আমাকে দেখে যেন প্রতিনিয়ত তাঁর আফসোস হয় কী হারিয়েছে ভেবে। সম্পর্কে যারা প্রতারণা করে , তাঁর জন্য এর চাইতে বড় শাস্তি আর জানা নেই আমার।

আপনি কোন অন্যায় করেন নি ভাই, আপনি নিজেকে কষ্ট দিয়ে অপরাধ বোধে ভুগবেন না প্লিজ। নিজেকে চার দেয়ালের মাঝ থেকে বের করে আনুন। বাইরে যান, কাজ শুরু করুন। কাজের চাইতে বড় চিকিৎসা খুব কম আছে। পুরনো কাজে জয়েন করতে না চাইলে নতুন কাজে করুন। মাথা নিচু করে থাকবেন না, নিজের কষ্টের কথা বলুন। প্রয়োজনে পেশাদার কাউন্সিলারের সাহায্য নিন। আর ভাই, ভালো তাকেই বাসা উচিত যে আপনাকে পাল্টা ভালোবাসে। তাই ওই মেয়েটির জন্য প্লিজ নিজেকে কষ্ট দেবেন না ভাই। প্লিজ।প্রিয়.কম



মন্তব্য চালু নেই