“আমার জীবনে দেখা কিছু অমর প্রেম”

হুম।
প্রেম!
প্রেম মানেই কাউকে অসম্ভব ভাল লাগা…প্রেম মানেই জগতপ্লাবিত আবেগ…প্রেম মানেই রঙিন স্বপ্ন…প্রেম মানেই রাত জাগানি ফুসুর ফুসুর…প্রেম মানেই ব্লা ব্লা ব্লা… :পি

স্কুল কলেজ গণ্ডি পেড়িয়ে ভার্সিটি …এই জীবনে “অমর প্রেমকাহিনি” কম দেখিনি…এখনও দেখছি।। সব প্রেম কাহিনি শুরু হয় “যত কিছুই হোক আমরা সারা জীবন এক সাথে থাকব”- এইটাইপ কিছু মধুমাখা বাণী দিয়ে। হুম…হাইলি ইমোশনাল উক্তি বটে !

নিচের প্রতিটি কাহিনির বাস্তব। আমার নিজের দেখা। তবে সবগুলো ছদ্মনাম।


ফারদিপ আর ফারহা । আমাদের ক্লাসের দুইজনই ক্লাসের সেরা ছাত্রছাত্রী। তাদের ঘনিষ্ঠতা প্রেমে রূপ নেবে এটাই স্বাভাবিক। কেউ ই খারাপ চোখে দেখেনি। ফারদিপের ফ্যামিলিতে কিছু ঝামেলা ছিলো সেটা ফারহা মেনে নিয়েছিল। প্রেমে সব বাধা-ই তুচ্ছ। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম এবং ধিরে ধিরে প্রেম থেকে লুতুপুতু প্রেম…মানে “অমর প্রেম” আর কি! । এরপর ফারহা কয়েক মাসের জন্যে ফ্যামিলির সাথে বিদেশে ঘুরতে যায়। ফিরে এসে দেখে ফারদিপ আর আগের মত তাকে কেয়ার করেনা। টাইম দেয়না। আসলে ফারদিপ তার ফ্যামিলির সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ছাত্রজীবনে ফ্যামিলিকে আর্থিক সহযোগিতা করা সহজ ব্যাপার না। ফারহা সব বুঝেও প্রতিদিন ফারদিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় বানাতো। একদিন দুইদিন প্রতিদিন এভাবে চলতে চলতে একসময় তাদের “অমর প্রেম” কাহিনির দি এন্ড।
ফারহা এখন ঢাকায় নামী ভার্সিটিতে পড়ে। দুইদিন পরপর ফেবু তে নতুন নতুন ছেলের সাথে নানান ঢঙের ফুটো প্রো-পিক শেয়ার দেয়। আর ফারদিপ তার নিয়তি নিয়ে ব্যস্ত থাকে।


আমার এক বন্ধু, কৈলাস বুয়েট এ পড়ে। বুয়েট! স্বপ্নের বুয়েটে পড়েও তার আফসোস যে সে সিঙ্গেল :পি মোবাইলে এক স্কুল পড়ুয়া মেয়ের সাথে পরিচয়। মেয়েটি ই কল দিতো। ধিরে ধিরে সেই মেয়ের সাথে যোগাযোগ বাড়তে থাকে। আমরা বন্ধুরাও তাকে পচাতে থাকি… ”দস্ত চালায় যা! বুয়েট থেকে বের হয়ে দুই বছর বেকার বসে থাকলেও সমস্যা নাই!! ” আমাদের পচানিতে সে আরও উৎসাহিত হয়ে “অমর প্রেম” শুরু করে দেয়! কৈলাস সবসময় ব্যস্ত মোবাইলে কথা বলতে অথবা মেসেজ দিতে।
তারপর একপর্যায়ে জানতে পারে সেই মেয়ের এক ছেলের দীর্ঘদিন প্রেম ছিল। ছেলেটা বেসরকারি ভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হওয়ার পর সুন্দরী ক্লাসমেট এর সাথে প্রেম করা শুরু করছে। মেয়ে টা সেটার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে কৈলাসের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। কারণ কৈলাস বুয়েট এ পড়ে!! স্কুল পড়ুয়া মেয়ের মাথায় এতো প্যাচ!!!
অমর প্রেমকাহিনির দি এন্ড।


রাফি আর সায়ানের জিগ্রি দস্তি। এক্কেবারে সেই রকম এর দস্তি।। স্কুল জীবনের শেষ বছরে এসে রাফি রিপার প্রেম এ পড়লো। সদ্য ষোড়শীর আবেগ রাফিকে না করতে পারেনি! আমাদের চোখের সামনে শুরু হলো তাদের “অমর প্রেমকাহিনী”। ফ্যামিলি পর্যায়ে জানাজানি হওয়ার পর অনেক ঝামেলা ঝঞ্ঝার পরেও তারা এক ছিল। আমরা ভাবলাম “কি সুন্দর তাদের প্রেম!!”। স্কুল পেড়িয়ে কলেজেও তাদের লুতুপুতু প্রেম চলতেই থাকলো। অন্যদিকে সায়ান কি বসে থাকবে ?! তার ফ্রেন্ড তার সামনে লুতুপুতু প্রেম চালাবে, সে আর কতদিন সহ্য করবে?! একদিন হুট করে প্রপোজ করে বসে সামিরা কে। তাদেরও “অমর প্রেমকাহিনি” শুরু। অন্যদিকে সায়ান-সামিরা ঝামেলা শুরু হতে বেশি দেরি হয়নি…বরং আর গুরুতর! রীতিমতো দুই ফ্যামিলির ঝগড়া !! …তারপরেও তারা এক। আমরা তাদের চূড়ান্ত প্রকৃতির লুতুপুতু লুতুপুতু দেখি আর ভাবি “আহ! তাদের কি কমিটমেন্ট!!”।

এখানে ছোট্ট একটা টুইস্ট আছে। রিপা ও সামিরার ইগো ঝামেলা ছিল। যে টার প্রভাব পড়ে রাফি-সায়ানের বন্ধুত্বে। তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। দিনে দিনে রাফি-রিপার প্রেমকাহিনির সুর বদলে যায়। এইচএসসি শেষে রিপা সরকারী মেডিকেলে ভর্তি হয় আর রাফি এক বেসরকারী ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। এডমিশনের পরবর্তী সময়ে তাদের “অমর প্রেমকাহিনি”র ইতি ঘটে। অন্যদিকে সায়ান-সামিরা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়ে যায়। তৃতীয় এক মেয়ের সাথে সায়ানের নিয়মিত যোগাযোগ হত। প্রথম দিকে সামিরা কিছু না বললেও ধিরে ধিরে অসহনীয় হয়ে ওঠে। সামিরা যখন সায়ানকে বলল সেই মেয়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করতে…সায়ান উল্টা সামিরার সাথেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো!
হায়রে প্রেম!!

আজ রিপা এক সিনিওর মেডিকেল স্টুডেন্টের সাথে লুতুপুতু করছে , সায়ান এখনও ব্যস্ত সেই তৃতীয় মেয়েকে নিয়ে। আর নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে নানান কেচ্ছাকাহিনির পর রাফি আর সামিরা নতুন করে “অমর প্রেমকাহিনি” শুরু করছে। কমেডি বানানোর জন্য কিনা জানি না তবে রাফি-সামিরা আজ বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড। কমেডি বটে!


আমার বন্ধু কামাল নন-প্রডাক্টিভ কাজের জিনিয়াস। বিশেষ করে ফ্লার্ট করতে এক্কেবারে তুখোর। ফেবুতে তার অন্তত ১০০টা (!) আইডি আছে। ফেবু তেই পরিচয় মাধবীর সাথে। মাধবী এক সরকারি মেডিকেল কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। কামাল ফেইক আইডি থেকে পরিচয় দেয় যে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। কামাল স্বভাববমত প্রোফেসনাল ফ্লার্ট চালিয়ে যায়, কিন্তু মাধবী ধিরে ধিরে তার প্রেমে পড়ে যায়। মেডিকেলের মেয়ে দেখে কামালও এক পর্যায়ে সিরিয়াস হয়ে যায়। ধর্মীয় বিরোধ থাকলেও তাদের কাছে এই বাঁধা খুবই তুচ্ছ মনে হয়। ফেবু থেকে মোবাইলে লুতুপুতু শুরু হয় তাদের। এয়ারটেলের পাওয়ার রিচার্জ এর ৪০০মিনিট টকটাইম এক দিনেই শেষ! কিন্তু এত লুতুপুতুর মধ্যও কামাল তার আসল পরিচয় জানাতে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু কতদিন?! একদিন মাধবী তার মিথ্যাচার ধরে ফেলে। দিনে দিনে একটু একটু করে গড়ে তোলা “অমর প্রেম” এর বাধন কয়েক মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায়। কামাল যথারীতি তার প্রোফেসনে ফিরে যায় । কিন্তু মাধবী অতি শোকে তার ফার্স্ট প্রফের সব কয়টা পরিক্ষা ড্রপ দিলো ।

মাত্র চারটি কাহিনি লিখলাম। বন্ধুমহলে আরও কত কাহিনি আছে!
হাল আমলে প্রেম জিনিসটা রীতিমত ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। আপনার যদি বয়ফ্রেন্ড অথবা গার্লফ্রেন্ড না থাকে তাহলে আপনি আধুনিক নন। ফেবু রিলেশানশিপ ইস্ট্যাটাস সিঙ্গেল রাখতে যেন আপনার ইগোতে লাগে। তথাকথিত প্রেম না করা যেন ব্যাকডেটেড কালচার। প্রেম কি করতেই হবে??
যে সকল বন্ধুগন আফসোস করছেন যে এখনও প্রেম করতে পারলাম না! .,,,,তাদের বলছি.. অনেক সুখে আছেন। সত্যিকারের ভালবাসা জীবনে এক বার ই আসে। আফসোস না করে অপেক্ষা করুন। আপনার ভালবাসার মানুষটিও আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে।

সূত্র: somewhereinblogযান্ত্রিক উন্মাদ ১২৬



মন্তব্য চালু নেই