দেখুন কি নির্মম হতে পারে মেয়েদের জীবন

“আমার স্তন ও স্বামীর কর্মকান্ড”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।

“আমার জীবনের গল্পটা একটু বড়, এতো কথা কিভাবে লিখবো বুঝতে পারছিনা…আমার স্বামীকে আমি একজন ভালো মনের মানুষ হিসেবে ভাবি, ভালবাসি… তারপরও আমার কিছু কথা রয়েই যায়……..

২০১১ সালে বিয়ে হয়, ছেলের মা আমাকে প্রথম এ দেখে তারপর ছেলের সাথে কথা বলি, বিয়ের আগে ৪ মাস আমি ওর সাথে কথা বলেছি, দেখাও হয়েছে বহুবার। বিয়ে হয়, কিন্তু আমদের মাঝে যেইরকম রোম্যান্টিক সম্পর্ক থাকা উচিৎ এই ব্যাপারে ওর অনেকটাই অনিহা বিয়ের প্রথম দিন থেকেই, আমি কারন জানতে চাইলে বলে… সময় মিলেনা কারন ওর রাতে শিফট এ কাজ ছিল আর আমি চাকুরী করে, MBA ক্লাস করে বাসায় ফিরে ওকে বড়জোর ৪৫ মিনিট পাই।

শারীরিক সম্পর্কই শেষ কথা নয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কতো রকম এর আদর-সোহাগ, খুনসুটি, ভালবাসা থাকে যেগুলো আমি খুব আশা করতাম। এই বুঝি ও আমার হাত টা ধরবে, কাছে টেনে নিবে… কিন্তু ওর দিক থেকে কোন সাড়াই পেতাম না। আমি চেষ্টা করলেও বলতো এখন না, পরে… somehow আমাকে সরিয়ে দিতো। ২ মাসের মাঝে আমি ওদের বাসার পরিবেশ এ হাঁপিয়ে উঠি কারণ পরিবারটা একবারেই family oriented na, সবাই ভীষণ স্বার্থপর, লোভী, ওদের মাঝে কোন পারিবারিক বন্ধন নাই কারো সাথে। সবাই শুধু নিজেরটা নিয়েই ব্যস্ত। পারিবারিক সমস্যা থাকেই, তাই আমি চেষ্টা করি অ্যাডজাস্ট করে নিতে, কিন্তু ওর আমার প্রতি এই দূরে থাকাটা মেনে নিতে পারছিলাম না।(শ্বশুর বাড়ির সব কিছু সহ্য করা যায় যদি husband এর সাথে সম্পর্ক ভালো থাকে) ওদিকে MBA semester final ও চলে আসে, তাই আমি মায়ের বারি চলে আসি। আমার শাশুড়ি বুদ্ধি করে তার ছেলেকেও আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এর মাঝে ব্যাংক থেকে লোণ নিয়ে ওকে গাড়ি কিনে নেই আমার টাকায়। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে এক রকম বাধ্য হয়েই গাড়িটা কিনে দিতে হয়। (এক সময় ওরা খুব ধনী ছিল যা বর্তমানে কিছুই নেই)।

তারপর ৪ মাস আমি বাবার বাড়িতে থেকেই অফিস আর ক্লাস চালিয়ে যাই। এর মাঝেও ও আমার কাছে আসতে চায় না। আমি ওকে বুঝিয়ে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যেতে চাই যে কোন শারীরিক সমস্যা থাকলে এখন তো ডাক্তার আছে। যতটা সম্ভব বুঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ও কিছুতেই ডাক্তার এর কাছে যাবেনা। ওদের বাড়ি ফিরে যেতে বলে, আমি রাজী হই, কিন্তু ২ মাস এর শর্ত দেই যে ও যদি ২ মাস এ ডাক্তার দেখিয়ে নিজেকে ঠিক না করে তাহলে আমি একবারেই চলে আসব। ফিরলাম… ১ মাস চলেও গেলো, অনেক চেষ্টা করেও আমি ওকে ডাক্তার এর কাছে নিতে পারলাম না, আশা ছেরেই দিলাম, হয়ত এখানেই জীবন থেমে যেত।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস… চলে আসার ১৫ দিন আগে ফেব্রুয়ারীতে আমার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ল। ২ ভাই আর আমি একমাত্র মেয়ে, কষ্টে বাবা মাকে বলতে পারলাম না কিছুই। শুধু বললাম একটা টিউমার হয়েছে অপারেশান করলেই ঠিক হয়ে যাবে যাই হোক এরপর অপারেশান হল বিয়ের পর প্রথম ভ্যালেন্টিন ডে ১৪ই ফেব্রুয়ারী তে, তারপর ক্যমোথেরাপী, রেডিওথেরাপী একে একে সব শেষ করতে লাগলাম, মাঝে কন্ডিশন এতটাই খারাপ হয়ে গেলো যে,ডাক্তার আশাই ছেড়ে দিলো। একদিকে ক্যান্সার এবং আমার প্রতি ওর এই দূরে থাকা দিন দিন আমাকে মৃত্যুর এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সবার দোয়ার বরকত এ এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম। ট্রিটমেন্ট এ র নাম মাত্র কিছু ওদের পরিবার থেকে হেল্প পেয়েছিলাম। বাকি ৯০ % ই আমার অফিস কলিগ, রিলেটিভ দের কাছ থেকে পেয়েছি। আমার অফিস এর ড্রাইভার পর্যন্ত আমাকে হেল্প করেছে।

এর মাঝে আমি ওকে একটা ভালো চাকুরীও দিলাম। দিনের পর দিন আমি অপেক্ষা করতাম এই বুঝি ও আমার কাছে আসবে, একটু আদর করবে। কিন্তু আমার কান্না ও শুনেও না বোঝার ভান করতো, উল্লেখ্য ওর কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক নেই, বিয়ের আগে যা ছিল আমি সব জানি। তারপর আমি আবিষ্কার করলামও একজন মাদকাসক্ত। আমি ওর মা বোনের সাহায্য চাইলাম ওকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে। পেলাম না কারন ওরা বিয়ের পর আমার থেকে সংসার খরচ আশা করেছিলো কিন্তু আমি তেমন একটা দেইনি, পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম ও অনেক বছর যাবত ড্রাগস নেয়, যেটা ওর পরিবার আমাদের কাছে গোপন রেখেছিল বিয়ের সময় থেকেই। অনেক চেষ্টা করেও ওকে ওই পথ থেকে ফেরাতে পারলাম না, কোন একটা ডাক্তার এর নিয়ে যেতে পারলাম না, দিন দিন সম্পর্কটা খারাপ হতে লাগলো। তাই চলে এলাম একা থাকার জন্য। মনে মনে বিশ্বাস ছিল ও আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। বিয়ের শুরু থেকে যেইভাবে আমি ওকে মেন্টাল এবং ফিনান্সিয়াল হেল্প করছিলাম অন্য কোন মেয়ে টা করতো না এতোটা অবহেলা পাবার পরও। ৮ মাস একা থাকলাম, ও আমাকে বুঝায় আবার ওর বাসায় নিয়ে গেলো যে সব ছেরে দিবে। আমি বিশ্বাস করে ফিরলাম। ও হয়ত চেষ্টা করেছে, কিন্তু বন্ধুদের কল আসলেই ও অস্থির হয়ে ওখানে যায়। এভাবে আরো ১১ টা মাস থাকার পর আমি আবার আলাদা হয়ে গেলাম গত জুলাই মাসে। এখানে ৭০ % ওর জন্য আর ৩০ % ওর মায়ের জন্য ওই বাসা ছেড়েছি, কারন ওইটা আমার কাছে একটা হোস্টেল মনে হয়, যেখানে কারো প্রতি কারো কোন দায়িত্ব নেই। এখন ও মাঝে মাঝে আমার বাসায় আসে।
ও কোনদিন আমার ভরন পোষণ এর দায়িত্ব নেয়নি, নিবেও না, উল্টো বাসা ভাড়া সহ সব খরচ দিয়ে ওকে রাখতে হবে। ও যা আয় করে তার কিছুটা মাকে দেয় বাকিটা নিজে খরচ করে। আমি যব করি বলে আমাক কোনদিন কিছু কিনেও দেয়নি, উল্টো আমার কাছে এইটা ওইটা আবদার করে চেয়ে নেয়, কিছুটা শিশুসুলভ আচরণ ও করে।

আমার পরিবার চায় আমি ওকে ডিভোর্স দেই, নতুন করে জীবনটা শুরু করি। কিন্তু আমি তা ভাবতে পারিনা। আমি একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষ(যদিও চাকুরী, সংসার সব এ করতে পারছি আল্মাদুলিল্লাহ) কিন্তু এই সত্য যেনে কেও আমার দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে করতে আসবে না। একা থাকতেও পারবো না তাই মাঝে মাঝে মনে হয় যদি কোন ভালো মানুষ আমার সব জেনে আমাকে বিয়ে করতে চায় আমি হয়ত রাজী হয়ে যাবো।

বাবা-মা মারা গেলে আমাকে কে দেখবে? কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না, ভাইদের কাছেও না। তাই আপাতত কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। অপেক্ষায় আছি এই ভেবে ও হয়ত কোন একদিন ঠিক হবে, আমার সাথে ডাক্তার এর কাছে যাবে মাদক মুক্ত হবার জন্য। আমি ওর কাছে আদর সোহাগ কিছুই চাই না, শুধু চাই ও পথ থেকে ফিরে আসুক। আমি কি করবো……এখন সব উপরওয়ালার হাতেই ছেড়ে দিয়েছি। দেখি জীবনের আরে কোন কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারি। জানিনা ওকে ডিভোর্স না দিয়ে ঠিক করছি কিনা।”

পরামর্শ:

আপনার দীর্ঘ চিঠিটি পড়ে অসম্ভব কষ্ট পেলাম আপু। কষ্ট পেলাম এই কারণে যে, কোন দোষ না করেই ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাসে আমরা জড়িয়ে যাই। তবে আজ আমি আপনাকে পরামর্শ দেয়ার আগে আমার বান্ধবীর কথা শোনাব। প্রায় আপনার মতই অবস্থা ছিল ওর, কেবল ক্যান্সারের অংশটুকু বাদ দিয়ে। নিজে উপার্জন করে চলে, স্বামীর অনাগ্রহ ও দূরে থাকা, স্বার্থপর শশুরবাড়ি, ছেলেমানুষ স্বামী যার সমস্ত দায়িত্ব আমার বান্ধবীকেই বহন করতে হতো। বাড়তি দায় হিসাবে ছিল স্বামীর পর্ণগ্রাফি আসক্তি। আমার বান্ধবী এখন ডিভোর্স নিয়েছে। ৮ বছর সংসার করার পর সে বাধ্য হয়েছে ডিভোর্স নিতে। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ি যেমনই হোক না কেন, ডিভোর্স নেয়ার সময় অনেক অশান্তি হয়েছে। ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল থেকে শুরু করে হুমকি ধামকি, কিছুই বাদ যায়নি। না, এই ভেবে সে ডিভোর্স নেয়নি যে আবারও বিয়ে করবে। বরং এই ভেবে নিয়েছিল যে একটু স্বস্তিতে বেঁচে থাকবে। আপনি জানলে খুশি হবেন না, আমার সেই বান্ধবীর সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে। একজন খুব ভালো মানুষ ধরেছে তার হাত। এবং তাঁরা খুব ভালো আছে।

দেখুন আপু, আমি আপনার স্থানে হলে বুকে পাথর বেঁধে হলেও ডিভোর্স নিতাম। বুঝতেই পারছি যে আপনি খুব মায়াবতী, স্বামী যেমনই হোক তার জন্য আপনার মায়া প্রবল। কিন্তু আপু, স্বামীকে দেখার জন্য তার পরিবার আছে। আপনার কিন্তু কেউ নেই। আপনি মাদকাসক্ত নন, আপনি একজন স্বাভাবিক মানুষ। আপনার কিছু শারীরিক মানসিক চাহিদা আছে, কিছু ইচ্ছা আর কিছু স্বপ্ন আছে, মা হবার আকাঙ্ক্ষা আছে। আপনি কেন সব বিসর্জন দিয়ে এভাবে বেঁচে থাকবেন? জীবন তো একটাই আপু, মরে গেলে কি জীবন আর ফিরে আসবে? আরও বড় কথা আপু… আপনার কি সত্যিই মনে হয় স্বামী আপনাকে ভালোবাসেন? না আপু, আমার সেটা মনে হয় না। ভালবাসলে নিজের জন্য না হলেও আপনার জন্যে তিনি নিজেকে পাল্টে ফেলতেন। তিনি আপনাকে আঁকড়ে ধরে আছেন, কারণ আপনি তার উপার্জনের উৎস। এটাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করবেন না প্লিজ।

এই সম্পর্কে নিজেকে বেঁধে রাখার আমি কোন কারণ দেখি না। আজ আপনার উপার্জন করার সামর্থ্য আছে, কাল যখন সেটা থাকবে না এই পরিবার কিন্তু আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা করবেন না। তাছাড়া আপু, যতক্ষণ আপনি অন্য কারো স্ত্রী, ততক্ষণ কেউ আর সাহস করে আপনার হাত ধরতে চাইবে না। তাই আমার মনে হয়, নিজেকে মুক্ত করে নেয়াই ভালো হবে। আর কিছু না হোক, অন্তত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন। আমরা মানুষ আপু, মানুষ হিসাবেই বেঁচে থাকি আসুন। মহামানবী হবার চেষ্টা করে নিজের কষ্ট না বাড়াই। (ছবি: প্রতীকী)



মন্তব্য চালু নেই