আরও মুনাফার সুযোগ করে দিতেই ফের বাড়লো রেন্টালের মেয়াদ!

বিদ্যুৎ ঘাটতির দোহাই দিয়ে ফের  বাড়লো রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ। তবে খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের আরও মুনাফার সুযোগ করে দিতেই ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

সচিবালয়ে বুধবার ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ভাড়াভিত্তিক চার কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়।

দ্রুত ঘাটতি মেটাতে স্বল্প মেয়াদের কথা বলে বর্তমান সরকারের গত মেয়াদের শুরুতে রেন্টাল-কুইকরেন্টাল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

কিন্তু উচ্চ মূল্যের কারণে শুরু থেকেই এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে সমালোচনা ছিল। এসব কেন্দ্রের জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। এর মাঝে অনেক কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হলে চুক্তি নবায়নের তদবির চলে। যুক্তি হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগ সেই ৫ বছর আগের ‘বিদ্যুৎ ঘাটতি’র কথাই বলছে। ইতোমধ্যে দশটির অধিক কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

নতুর মেয়াদ বাড়ানো চারটি কেন্দ্র হলো এগ্রিকোর ঘোড়াশাল ১৪৫ মেগাওয়াট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৮৫ মেগাওয়াট ও আশুগঞ্জ ৯৫ মেগাওয়াট এবং এনার্জি প্রিমার ফেঞ্চুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট। ঘোড়াশাল ও ফেঞ্চুগঞ্জ কেন্দ্রের মেয়াদ তিন বছর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জ কেন্দ্রের মেয়াদ এক বছর করে বাড়ছে। যদিও এ কেন্দ্রগুলোর চুক্তির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বিশেষ সুপারিশে কেন্দ্রগুলো চালু রাখা হয়েছে। এবার চুক্তি নবায়নের সুযোগ পেল কেন্দ্রগুলো।

বর্ধিত সময়ে পিডিবি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুৎ ৩ টাকা ২৬ পয়সায় কিনবে। পূর্ব চুক্তি অনুসারে ঘোড়াশাল ১৪৫ মেগাওয়াটের ট্যারিফ ছিল ৪ টাকা ৭৫ পয়সা, ফেঞ্চুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াটের ৪ টাকা ৬৫ পয়সা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৮৫ মেগাওয়াট ও আশুগঞ্জ ৯৫ মেগাওয়াট এর ট্যারিফ ছিল ইউনিট প্রতি ছিল ৪ টাকা ৮০ পয়সা। তবে গ্যাসভিত্তিক বেসরকারি খাতেরই দীর্ঘমেয়াদি কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ব্যয় ২ টাকা। আর সরকারি গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রে ব্যয় হয় ২ টাকারও কম।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি হওয়া উচিত। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমবে। সরকারের ভর্তুকি হ্রাস পাবে।’

এদিকে গ্যাস সঙ্কটে সাশ্রয়ী সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। নতুন কেন্দ্রে গ্যাস দিতে পারছে না পেট্রোবাংলা। এই অবস্থায় ভাড়াভিত্তিক ব্যয়বহুল কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর তথ্য মতে, আজ বুধবারও দুটি সরাকরি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয় গ্যাস স্বল্পতার কারণে। এগুলো হলো টঙ্গির ৫৫ মেগাওয়াট ও চট্টগ্রাম ৬০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৭০ মেগাওয়াট ও আশুগঞ্জ ৬০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের জন্য এগ্রিকোর সঙ্গে পিডিবির ২০১০ সালের ২৩ নভেম্বর চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পরে ২০১৩ সালে কেন্দ্র দুটির উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ মেগাওয়াট করে বাড়ানো হয়। কেন্দ্র দুটি যথাক্রমে ২০১১ সালের মার্চ ও মে মাসে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসে। চার বছর মেয়াদি এই প্লান্টের মেয়াদ চলতি বছর মার্চ ও মে মাসে শেষ হয়। পরবর্তী সময়ে উদ্যোক্তারা ৫ বছর চুক্তি নবায়নের জন্য আবেদন করে। পিডিবি এ দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করে। এই বাড়তি মেয়াদে এগ্রিকোকে ৪১২ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।

ঘোড়াশাল ১৪৫ মেগাওয়াটের কেন্দ্রের জন্য এগ্রিকোর সঙ্গে ২০১০ সালের মে মাসে চুক্তি করে পিডিবি। কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তিন বছর মেয়াদি কেন্দ্রটির সঙ্গে চুক্তি শেষ হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। কেন্দ্রটির জন্য বাড়তি তিন বছরে এগ্রিকোকে ৯৯৬ কোটি দেবে সরকার।

২০০৮ সালে চুক্তি করা ফেঞ্চুগঞ্জের ৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসে ২০১২ সালে। চলতি বছর এটিও মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ কেন্দ্রের জন্য বর্ধিত তিন বছরে এনার্জি প্রিমাকে ৩৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করবে সরকার।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র রয়েছে ৫৩টি। এর মধ্যে ১৬টিই রেন্টাল কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের কোনো কোনোটি দ্বিতীয় মেয়াদে এবং কোনো কোনোটি তৃতীয় মেয়াদে চুক্তি নবায়ন করেছে সরকার।

খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের আরও মুনাফার সুযোগ করে দিতেই ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ১২০ কোটি ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে বুধবার সরবরাহ করা হয়েছে ৯৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস।



মন্তব্য চালু নেই