আরথ্রাইটিস নিয়েও ইতিবাচক থাকার উপায়

আরথ্রাইটিস হলে জয়েন্টে ব্যথা হয় এবং শক্ত হয়ে যায়, তখন একটা চায়ের কাপ তুলতেও সমস্যা হয়। ফলে আবেগিয় প্রভাব পড়ে মনের উপর। সেজন্যই আরথ্রাইটিসের সাথে সাথে স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি ও ডিপ্রেশনেও ভোগার সম্ভাবনা থাকে। আপনি যদি আপনার শারীরিক লক্ষণ ও আবেগের সম্পর্কের বিষয়ে বুঝতে পারেন তাহলে আরথ্রাইটিস নিয়েও আশাবাদী থাকার উপায় জানাটা জরুরী। চলুন তাহলে জেনে নিই এমন কিছু নিয়ম যার ফলে আরথ্রাইটিস থাকা সত্ত্বেও ইতিবাচক থাকতে পারেন আপনি।

আরথ্রাইটিস, স্ট্রেস এবং আপনার মুড :

আরথ্রাইটিস নামক জার্নালে ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায় যে, আরথ্রাইটিসে আক্রান্তরা ডিপ্রেশনে ভোগার ঝুঁকিতে থাকেন। গবেষকেরা দেখেছেন যে, অষ্টিওআরথ্রাইটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে যাদের জয়েন্ট প্রতিস্থাপনের অপারেশন করার প্রয়োজন হয়, যাদের ১টি জয়েন্টে ব্যথা থাকে তাদের তুলনায় যাদের ৬ টি বা তার চেয়েও বেশি জয়েন্টের ব্যথা থাকে তারা ডিপ্রেশনে ভোগে। জয়েন্ট আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিপ্রেশনের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

সমস্যার একটি অংশ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা যার পাশাপাশি স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি ও ডিপ্রেশনের লক্ষণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। আরথ্রাইটিসে আক্রান্তদের মানসিক ক্ষমতা সীমিত হতে থাকে।

নিউ ইয়র্ক সিটির মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের ইন্টেগ্রেটিভ পেইন ম্যানেজমেন্টের ডাইরেক্টর, এমডি হুমেন ড্যানেশ, বলেন, “যখন একজন মানুষ স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে যেমন- একটি কৌটার মুখ খুলতে সমস্যায় পড়ে তখন তা তার জন্য খুবই হতাশাজনক হয় এবং কিছু মানুষ তাদের এই সীমাবদ্ধতার কারণে বিষণ্ণতায় ভোগে”। তিনি আরো বলেন, “আরথ্রাইটিস নিজে ডিপ্রেশন সৃষ্টি করেনা, কিন্তু আরথ্রাইটিসের ফলে যে কাজের সীমাবদ্ধতা তৈরি হয় তার ফলে হয়”।

আরথ্রাইটিসের ফলে সৃষ্ট স্ট্রেস দূর করার উপায় :

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, দৈনন্দিন কাজ সারতেই সংগ্রাম করা এবং অন্য কারো সাহায্যের উপর নির্ভর করা ইত্যাদি শারীরিক ও মানসিকভাবে আরথ্রাইটিসের অবস্থাকে খারাপ করে তুলে। আরথ্রাইটিস সম্পর্কিত ডিপ্রেশন কমাতে এবং স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটির মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে এই ৩ টি পদক্ষেপ।

১। নড়াচড়া করুন

আমেরিকান কলেজ অফ রিউমাটোলজির মতে, নিয়মিত ব্যায়াম করা যেমন- হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো ইত্যাদির ফলে ব্যথা কমে এবং মেজাজের উন্নতি ঘটে। শারীরিক সক্রিয়তা আরথ্রাইটিসের লক্ষণের উন্নতির সাথে সাথে স্ট্রেসের মাত্রা কমতেও সাহায্য করে। আমেরিকার অ্যাংজাইটি এন্ড ডিপ্রেশন এসোসিয়েশনের মতে, শারীরিক সক্রিয়তার ফলে স্ট্রেস কমতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম অ্যাংজাইটি ও ডিপ্রেশন দূর করতে ঔষধের মতোই কাজ করে।

২। শিথিলায়নের অনুশীলন করুন

মেডিটেশন বা ইয়োগা করলে তা আপনাকে শিথিল হতে সাহায্য করবে। যা আরথ্রাইটিসের সাথে সম্পর্কিত অ্যাংজাইটি ও ডিপ্রেশনের মোকাবেলা করতেও সাহায্য করবে।

৩। বন্ধুত্ব

ভালো সামাজিক যোগাযোগ আরথ্রাইটিসের সমস্যা মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। পরিবার ও বন্ধুদের সাহচর্যে থাকলে মন ভালো থাকে, কথা বলতে পারেন এবং সাহায্য ও নিতে পারেন।

৪। পর্যাপ্ত ঘুম

রাতের ঘুম ভালো হলে মেজাজ ভালো থাকে এবং জয়েন্টের ব্যথা কমতেও সাহায্য করে। ২০১৫ এর অক্টোবরে আরথ্রাইটিস কেয়ার এন্ড রিসার্চ নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় যে, যারা হাঁটুর অষ্টিওআরথ্রাইটিসে আক্রান্ত তাদের ব্যথা বৃদ্ধি পায় যদি তারা ইনসমনিয়ায় ভোগেন।

৫। ইতিবাচকতা

ড্যানেশ বলেন, “কৃতজ্ঞ হোন এবং আপনি কি পারছেন না তার প্রতি নয় বরং আপনি কি করতে পারছেন তার প্রতি নজর দিন। যদি এটা করা আপনার জন্য কঠিন হয় তাহলে আপনার অনুভূতি নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন অথবা একজন থেরাপিস্ট এর সাহায্য নিন”।



মন্তব্য চালু নেই