আশিয়ান সিটি প্রকল্পের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা

রাজধানীর উত্তরখান, দক্ষিণখান, বেরাইদ, বরুয়া ও বাথুয়া মৌজার আশিয়ান সিটির প্রকল্প বৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

সেই সঙ্গে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদনের শুনানি না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। এই সময়ের মধ্যে আশিয়ান সিটির এই প্রকল্পের কোনো প্রকার বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না এবং প্লট বিক্রি ও কোনো ক্রেতার কাছ থেকে অর্থগ্রহণও করা যাবে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান মৌজায় আশিয়ান ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের আশিয়ান সিটির প্রকল্প (দক্ষিণখান, আশকোনা ও শিয়ালকাটা) অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় বাতিল করেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিটকারী বেলা ও রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করেন।

২০১৪ সালে ১৬ জানুয়ারি এই প্রকল্পটি বাতিল ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে ওই প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া ছাড়পত্র বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক, বিচারপতি নাইমা হায়দার ও কাজী রেজা-উল হকের বৃহত্তর বেঞ্চ ১৬ আগস্ট আশিয়ান সিটির প্রকল্প বৈধ ঘোষণা করা হয়।

আদালতে আশিয়ান সিটির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম।

এর আগে ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিতে আশিয়ান সিটির করা আবেদন স্থগিত না করে আপিলে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এরপর গত ২৫ মে আশিয়ান সিটিকে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের অনুমতি দেয় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ।

গত বছরের ১৬ জানুয়ারি বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে আশিয়ান সিটি প্রকল্প অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে আশিয়ান ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করেন।

এই প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ, নিজেরা করি এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর রিট করে।

এতে বলা হয়, আশিয়ান সিটি ৪৩ দশমিক ১১ একর জমির জন্য অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু ২৩০ দশমিক ৪৬ একর জমিতে কাজ করছে। যে জমি ভরাট করছে, তা প্লাবনভূমি।

প্রাথমিক শুনানির পর ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আশিয়ান সিটি আবাসন প্রকল্পের মাটি ভরাট, বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্লট বিক্রি বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে রাজউকসহ বিবাদীদের নির্দেশ দেন।

পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া আশিয়ান সিটির অবস্থানগত ছাড়পত্র, এর নবায়ন, রাজউকের অনুমোদন এবং পরিবেশ অধিদফতরের ৫০ লাখ টাকা জরিমানা হ্রাস করে পাঁচ লাখ টাকা করা নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আদেশ স্থগিত করা হয়। রুলে ওই প্রকল্পকে পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া অবস্থানগত ছাড়পত্র ও এর নবায়ন, মন্ত্রণালয় থেকে জরিমানা হ্রাস এবং রাজউকের দেওয়া অনুমোদন কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

জলাশয় ভরাটের অভিযোগে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আশিয়ান সিটিকে করা অধিদফতরের ৫০ লাখ টাকা জরিমানা কমিয়ে পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করে।

তবে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ তা নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তি করতে পক্ষগুলোকে নির্দেশ দেন।

পরে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চে রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। একপর্যায়ে রিট আবেদনকারী পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৩ জুন প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন। এ বেঞ্চে রুলের ওপর ওই বছরের ৩ অক্টোবর শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে আদালত রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। পরে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি আশিয়ান সিটির প্রকল্প অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।



মন্তব্য চালু নেই