ইউপি নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে চায় জাপা

দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভালোভাবে অংশ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে দলের শক্তিমত্তা জানান দিতে চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। নির্বাচনকে ঘিরে নিষ্ক্রিয় দলটি সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বেছে নিয়েছে আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে। এজন্য ইতোমধ্যে নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটি।

বুধ ও বৃহস্পতিবার এ দু’দিন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বনানীস্থ কার্যালয় থেকে প্রার্থীদের প্রতীক ও মনোনয়নপত্র বিতরণ করবেন। উল্লেখ্য, নতুন নিয়োগ পাওয়ার পর দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদারের জন্য এটিই প্রথম নির্বাচন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে আগামী ২২ মার্চ থেকে প্রথম দফায় ৭৫২টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ ফেব্রুয়ারি। আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। দলীয় প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করবেন।

এদিকে ইউপি নির্বাচন নিয়ে নানা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি। উপজেলা কমিটির মাধ্যমে জেলা কমিটি সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে। তবে তৃণমূল থেকে পাঠানো তালিকা নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সাল চিশতি বলেন, ‘আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। তবে প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেবেন জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার।’

আসন্ন ইউপি নির্বাচন পরিচালনার জন্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে আহ্বায়ক, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস.এম. ফয়সল চিশতীকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়।

গত ১৭ জানুয়ারি রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান, একই সঙ্গে জিএম কাদেরকে আহ্বায়ক ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপিকে সদস্য সচিব করে জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।

এর একদিন পরই ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন বাবলুসহ পার্টির একটি অংশ রওশন এরশাদের সঙ্গে তার বাসায় দফায় দফায় বৈঠক করেন। ওইদিন রাতেই এরশাদের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ঘোষণা দেয় রওশনপন্থিরা।

পরদিন (১৮ জানুয়ারি) রংপুর থেকে ফিরে রাজধানীর বনানীস্থ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারকে জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব ঘোষণা করেন এরশাদ।

দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, এ পরিবর্তন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে নতুন দায়িত্ব পাওয়া কো-চেয়ারম্যানের। এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে হবে এবারের ইউপি নির্বাচনে। সেইসঙ্গে দল শক্তিশালী করার সময় এখন। কারণ গত পৌর নির্বাচনে জাতীয় পার্টির যে ভরাডুবি হয়েছে সেই ব্যর্থতা কিছুটা হলেও এই নির্বাচনে লাঘব হবে।

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘এই নির্বাচনকে আমরা খুব গুরুত্ব দিচ্ছি। জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সারাদেশের মানুষের মধ্যে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আশার সঞ্চার হয়েছে। আমরা এই নির্বাচনে সতর্কভাবে অংশ নিতে চাই। এর মাধ্যমে পার্টি শক্তিশালী হোক, সেই বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। আশা করি, এই নির্বাচনের মাধ্যমে পার্টি ঘুরে দাঁড়াবে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একটি শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি জেলা ও উপজেলা কমিটির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা ও জটিলতা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করবে।’

প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে আগামী ২২ মার্চ থেকে ৭৫২টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২ মার্চ।

দ্বিতীয় ধাপে ৭১০টি ইউনিয়ন পরিষদের ৩১ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ৭১১টি ইউনিয়ন পরিষদের ২৩ এপ্রিল, চতুর্থ ধাপে ৭২৮টি ইউনিয়ন পরিষদের ৭ মে, পঞ্চম ধাপে ৭১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের ২৮ মে ও ষষ্ঠ ধাপে ৬৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৪ জুন।



মন্তব্য চালু নেই