ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চায় জেএমবি-চরমপন্থিরাও

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আছে জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও চরমপন্থি সদস্যরাও। তারা ওই ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়ন নিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

পুলিশের তালিকাভুক্ত এসব জেএমবি ও চরমপন্থি সদস্যদের অনেকেই ইতোমধ্যেই দলীয় প্রধান ও স্থানীয় নেতারাসহ নিজের ছবি দিয়ে পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার টাঙ্গিয়েছেন। যাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। জামিনে থেকে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে শোডাউন ছাড়াও বিভিন্নভাবে প্রচার চালাচ্ছেন।

এক সময় রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে চিহ্নিত বাগমারা উপজেলা ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় নিয়ে গঠিত। এ উপজেলাতে বইছে নির্বাচনী হওয়া। বাগমারার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ছিল এক সময় জেএমবি ও চরমপন্থি অধ্যুষিত এলাকা।

১৯৯৬ সালে যোগিপাড়াতে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যানকে গলাকেটে হত্যা করার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন সর্বহারা পার্টি। আর ২০০৪ সালে গোয়ালকান্দির পলাশী গ্রামে এক যুবককে গলাকেটে হত্যা করে আত্মপ্রকাশ করে সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের শক্ত নেতৃত্বে এই ইউনিয়নগুলো জেএমবি ও চরমপন্থি মুক্ত হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রমতে, উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছেন জঙ্গি সংগঠন জেএমবির এক সময়ের শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাইয়ের অন্যতম সহযোগী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন মুহুরি। পুলিশের তালিকাভুক্ত এই জেএমবি ক্যাডারের বিরুদ্ধে হত্যা ও সন্ত্রাসী কার্মকাণ্ডের ডজনখানেক মামলা রয়েছে। একাধিকবার তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছেন। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মামুন মুহুরির নিজ গ্রাম পলাশিতে বাংলাভাইয়ের নেতৃত্বে একজনকে গলাকেটে হত্যার মাধ্যমে জেএমবির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল।

সে সময় মামুন মুহুরি ইউপি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক থাকলেও জেএমবিতে যোগ দিয়ে বাংলাভাইয়ের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তিনি এবারে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এছাড়াও এ ইউনিয়নে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চান উপজেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী এবং জামায়াত নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ খান। এর মধ্যে জেএমবিকে সহযোগিতা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে আব্দুল মজিদ খানের বিরুদ্ধেও।

অপরদিকে, এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান তিনজন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আব্বাস আলী মোল্লা, ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন সরকার ও সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম। এদের মধ্যে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পার্টি থেকে যোগ দেয়া আলমগীর হোসেনের নাম চরমপন্থি সংগঠন সর্বহারা দলের সদস্য হিসেবে পুলিশের তালিকায় রয়েছে। চরমপন্থিদের হাতে নিহত সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির নেতা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছোটভাই তিনি।

উপজেলার হামিরকুৎসা ইউনিয়নে এবার জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন চান বাংলাভাইয়ের আরেক অন্যতম সহযোগী মাহাতাব উদ্দিন খামারু। সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির নেতা মোহাম্মাদ আলী খামারুর ছেলে মাহাতাব উদ্দিন খামারুর বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। একাধিকবার গ্রেপ্তার এই জেএমবি ক্যাডার জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরে ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন।

অপরদিকে এ ইউনিয়নে বিএনপি থেকে রাশেদুল হক ফিরোজ, বর্তমান চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ পাঁচকড়ি, আলতাব মাহমুদ, আওয়ামী লীগ থেকে আব্দুল বারি, সোলাইমান আলী ও আনোয়ার হোসেন দলীয় মনোনয়ন চান। এদের মধ্যে জেএমবির হাতে নির্যাতিত আব্দুল বারির নাম পুলিশের চরমপন্থিদের তালিকায় রয়েছে।

ঝিকড়া ইউনিয়নে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চান বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান রতন। একাধিক মামলার আসামি ও জেএমবির অন্যতম সদস্য হিসেবে রতন গোপন বৈঠক করার সময় দুই বার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এছাড়াও এখানে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চান ইউনিয়ন জামায়াতের আমির ইব্রাহীম হোসেন। তার বিরুদ্ধেও জেএমবি ক্যাডারদের সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও এখনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান আব্দুল হামিদ, আবুল কালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম। এদের মধ্যে রফিকুল ইসলামের নাম পুলিশের চরমপন্থীদের তালিকায় রয়েছে এবং হত্যাসহ দুইটি মামলার আসামি।

যোগিপাড়া ইউনিয়নে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চান এনামুল হক, আরিফুল ইসলাম রনি, আজিজুর রহমান ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের স্ত্রী লিপিআরা বেগম। এদের মধ্যে পুলিশের খাতায় চরমপন্থী হিসেবে আরিফুল ইসলাম রনির নাম রয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তদবির চালাচ্ছেন সাইদুল রহমান, মোস্তফা কামাল, শামসুর রহমান শেখ ও মাজেদুর হক সোহান।

এদিকে, মাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান সাবেক চেয়ারম্যান আকবর হোসেন, আসকান আলী ও রেজাউল ইসলাম। এদের মধ্যে এক সময় চরমপন্থীদের সহযোগিতা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে আসকান আলীর বিরুদ্ধে। অপরদিকে, এ ইউনিয়নে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চান রফিকুল ইসলাম, মোজ্জাম্মেল হক ও আসলাম উদ্দিন।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, জেএমবি ও চমরপন্থিদের তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের অধিকাংশই জামিনে এলাকায় রয়েছেন। এদের অনেকেই বিভিন্ন দলের ছত্রছায়ায় থেকে এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। তবে তাদের উপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি রয়েছে।

এ ব্যাপারে বাগমারা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, তালিকাভুক্ত জেএমবি ও চরমপন্থিসহ বিতর্কিতরা যেন দলীয় মনোনয়ন না পান সে ব্যাপারে সজাগ রয়েছে বিএনপি। আর জামায়াত থেকে যে দুজন বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছেন তাদের দলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। প্রকাশ্য তারা দলে যোগ দিলে তাদের ব্যাপারে ভেবে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু বলেন, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের নেতৃত্বে এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ শান্তির জনপদে পরিণত হয়েছে। এখন আর জেএমবি বা চরমপন্থিদের কোনো অস্তিত্ব নেই।

সান্টু বলে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকাভূক্ত কোনো সন্ত্রাসী বা বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যেন দলীয় মনোনয়ন না পায় সেদিকে নজর রাখা হয়েছে। দলের ক্লিন ইমেজের ত্যাগী নেতারাই মনোনয়ন পাবেন বলে জানান তিনি। বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই