ইউপি নির্বাচন: অভিযোগ নিষ্পত্তি না করেই গেজেট প্রকাশ!

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের অভিযোগের নিষ্পত্তি না করেই ফলাফলে গেজেট প্রকাশের কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।

ইসি সূত্রে জানা যায়, বুধবার (৬ এপ্রিল) থেকে পর্যায়ক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ শুরু হচ্ছে। গেজেট প্রকাশিত হলে অভিযোগের বিষয়ে কমিশনের আর কিছু করার থাকবে না।

অথচ প্রথম দুই ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, কেন্দ্রদখল, ভোটকারচুপি, সহিংসতাসহ হাজারও অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দাখিল করেছেন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিধি অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত কমিশন বিশেষ ক্ষমতা বলে যে কোনো অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। এমনকি তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ইউপির নির্বাচন বাতিল করতে পারে কমিশন। কিন্তু গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলে, এমন অনিয়মের তদন্তের সুযোগ আর থাকে না।

নির্বাচন কমিশনের উপসচিব শাসুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আইনে বলা আছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা। প্রথম ধাপে যে সব ইউপির ফল ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলোর গেজেট প্রকাশের কাজ চলছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

ইসি সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপের ৭১২টি ইউপির বেসরকারি ফলাফল কমিশনে এসে পৌঁছেছে। কমিশনারদের স্বাক্ষর শেষে বুধবার এগুলো গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য সরকারি ছাপাখানায় পাঠানো হবে। ক্রমান্বয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের সব ইউপির ফল গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইউপি নির্বাচনের অনিয়মের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা অভিযোগ দায়ের করেছেন। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, কমিশন বিশেষ ক্ষমতাবলে এগুলি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারতো। এতে কমিশনের স্বচ্ছতা ও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়তো।

তিনি বলেন, গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলে বা ফল পরিবর্তন হয়, এমন অভিযোগের তদন্ত করার সুযোগ থাকে না। কিন্তু নির্বাচনী অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটগ্রহণের পর বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দল ও প্রার্থীরা নানা অনিয়মের অভিযোগ কমিশনে দাখিল করে। এতে কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। এসব ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে গেজেট প্রকাশ বন্ধ ও পুনঃভোটের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু কমিশন এসব অভিযোগের বিষয়ে কান দেয়নি।

গত ২২ মার্চ ৭১২টি ইউপিতে ও ৩১ মার্চ ৬৩৯টি ইউপিতে সহিংসতা ও নানা অনিয়মের মধ্যে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ দুই ধাপে সহিংসতায় ৪০ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক।



মন্তব্য চালু নেই