ইচ্ছে করতো ঘর থেকে বের না হই : হিলারি

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই গত কয়েক মাস ধরেই বিশ্বের আলোচিত ঘটনা হিসেবে ছিল মার্কিন নির্বাচন। আর সে নির্বাচনের দুটি প্রধান চরিত্র ছিলেন হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের আগে বড় সব গণমাধ্যমসহ বিশ্বজোড়া ভক্ত, সমর্থকদের কাছে পছন্দের প্রার্থী ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হওয়ার খুব কাছাকাছি গিয়েও জিততে পারেননি তিনি।

হিলারি সমর্থকরা এখনো সে পরাজয় হজম করতে পারছেন না। কেউ কেউ এত আবেগ নিয়ে এ নির্বাচনী দৌঁড়ে অংশ নিয়েছিলেন যে সারাজীবন তাদের স্মৃতিতে গাঁথা থাকবে এটি। কষ্টকর পরাজয়ের ব্যাপারটি দাগ কাটবে প্রতিনিয়ত। হিলারি সমর্থক ও ট্রাম্পের সমালোচকদের একটা অংশ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে আসছে। পুলিশের সাথে মারামারি হয়েছে অনেক শহরে। নির্বাচনী ফলাফলের প্রায় এক সপ্তাহ পরেও ভক্ত-সমর্থকরা তার পরাজয় মেনে নিতে পারছে না।

জয়ের খুব কাছে গিয়েও যে হারতে হলো, জনপ্রিয় ভোটে অনেক এগিয়ে থেকেও যে পরাজয় মেনে নিতে হল- এক্ষেত্রে হিলারির অনুভূতিটা কেমন? যে নারী তার তিনদশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারটি একটি বড় পরাজয় দিয়ে শেষ করলেন তার অনুভূতিটা কেমন?

নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পরে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন। সে বক্তৃতায় তিনি জানান নির্বাচনে ‘পরাজয় মেনে নেয়াটা সহজ ছিল না।’

বুধবার রাতে ‘চিলড্রেনস ডিফেন্স ফান্ড’ নামে একটি দাতব্য সংস্থায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন হিলারি। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে এমন কিছু মুহূর্ত এসেছে যখন ইচ্ছে করতো কোন একটা বই ও আমাদের কুকুরগুলো নিয়ে গুটিয়ে থাকি, ঘর থেকে বের না হই।’

জীবনে যে পর্যন্ত আসতে পেরেছেন সেটার পুরোটা দেখতে পারলে তার মা ডরোথি রডহ্যাম অনেক আনন্দিত হতেন বলে জানান। ২০১১ সালে মারা যাওয়া ডরোথি রডহ্যাম ব্রোকেন ফ্যামিলিতে জন্ম নিয়ে কীভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন, তিনটি মেয়েকে লালনপালন করেন তার সংগ্রামকে স্মরণ করেন হিলারি।

ডরোথি রডহ্যাম শৈশবে দাদা-দাদির বাসায় থাকতে যান। দাদা-দাদির কাছ থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। ক্যালিফোর্নিয়ার পথে যাত্রা করা সেই ট্রেনটিতে ডরোথি রডহ্যামের মাথায় কি ঘুরপাক খাচ্ছিল, তার হৃদয়ে কতটা রক্তক্ষরণ হচ্ছিল সেটা স্মরণ করে হিলারি বলেন-“আমি স্বপ্ন দেখি আমি তার কাছে যাই, পাশে গিয়ে বসি, আমার হাতে তার হাতটি নিয়ে বলি, ‘এদিকে তাকাও এবং আমার কথা শোনো। তোমাকে বাঁচতে হবে। তোমার বিয়ে-সংসার হবে, তিনটি মেয়ে হবে।” এগুলো বলতে গিয়ে গলা আর্দ্র হয়ে যাচ্ছিল হিলারির। তারপরও বলে যান-‘মা, এটা হয়তো কল্পনা করাও কঠিন কিন্তু তোমার মেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হবে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে এবং সে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৬২ মিলিয়ন ভোট জিতবে।’

হিলারি তার পেশাজীবন শুরু করেছিলেন শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের ইন্টার্ন হিসেবে। তিনি কোথায় গিয়ে শেষ করলেন সেটা সবার জানা। বুধবার রাতে শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতার মাধ্যমে মানুষের মুখোমুখি আসেন প্রায় এক সপ্তাহ পর।

সূত্র: সিএনএন



মন্তব্য চালু নেই