ইতালি প্রবাসী ব্যবসায়ীর কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা, আত্মগোপনে প্রতারক চক্র

এম.এ.আয়াত উল্যা, স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী : নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর পূর্ব লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের ইতালি প্রবাসীর এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মাসাতের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশ্ববর্তী ফতেপুর গ্রামের মো. লকিয়ত উল্ল্যা তার ছেলে আনোয়ার হোসেন ও স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।  মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী মো. রহমত উল্যা।

অভিযোগ সূত্র ও ভুক্তভোগী রহমত উল্যা আওয়ার নিউজ বিডি’কে জানান, রহমত উল্যাহ মহসিন, বাবুল, মাহমুদ উল্যাহ, কাদের, আবুল হাশেম, মমিন উল্যা, লকিয়ত উল্যা, বাচ্চু মিয়া, অজি উল্যাহ ও তিনি নিজে সহ ইতালীতে ১৯৯৭ সালে আইনগতভাবে রেজিষ্ট্রেশনকৃত সুচিয়েতার মাধ্যমে একটি দোকানঘর নিয়ে বিজুত্তোরিয়ার (আল-আমিন কো-অপারেটিভ নামে) ব্যবসার কার্যক্রম শুরু করেন। দীর্ঘ ৩ বছর ব্যবসা করার পর বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে নোয়াখালী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ফতেপুর গ্রামের মৃত আছমত উল্যাহ ছেলে মো. লকিয়ত উল্ল্যা ও তার ছেলে আনোয়ার হোসেনের সহায়তায় আমাদের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সামান্য মালপত্র দিয়ে ব্যবসা থেকে বের করে দেয়। পরে দোকান ও দোকানের বাকী মালামাল বিক্রি করে আমাকে ও ব্যবসার অপর শেয়ারদারদেরকে টাকা বুূঝিয়ে দিবে। তবে উল্লেখ্য আত্মসাতকারীরা আমার নিকট আত্মীয়স্বজন হওয়ায় তাদের সাথে কোন প্রকার চুক্তিপত্র হয়নি।

অপরদিকে, ইতালীতে নাগরিকত্ব জটিলতার কারণে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক কাজে কোন চুক্তিপত্র হয় না। তারা দোকান বিক্রির কথা বলে দোকানটি ২০১৩ সাল পর্যন্ত পরিচালনা করে। একপর্যায়ে ২০১৩ সালে ওই দোকানটি একটি চায়না কোম্পানীর কাছে চার লক্ষ ইউরো বাংলাদেশী টাকায় চার কোটি টাকারও বেশি দামে বিক্রি করে দেয়। আমি ও আমার স্ত্রীর বড় ভাই রহমত উল্যাহ মহসিন ব্যবসার ৩টি শেয়ারের মালিক হই। ওই ৩ শেয়ারের মূল্য এক লক্ষ বিশ হাজার ইউরো বাংলাদেশী টাকায় এক কোটি বিশ লক্ষেরও বেশি। আমি ও আমার স্ত্রীর বড় ভাই আমাদের পাওনা টাকা লকিয়ত উল্ল্যার কাছ থেকে ফেরত চাইলে সে বিভিন্ন তারিখ দিয়ে সময় ক্ষেপন করতে থাকে।

একপর্যায়ে সে মোবাইল ফোনে জানায়, ২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসে বাংলাদেশে এসে আমাদের পাওনা টাকা দিয়ে দিবে। তার কথা বিশ্বাস করে বাংলাদেশের আসার অপেক্ষায় করে ধৈর্য্য ধরে থাকি।

ইতিমধ্যে, আমরা বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ খবর নিয়ে জানিতে পারি, লকিয়ত উল্ল্যার বিরুদ্ধে ইতালীতে প্রতারনার অভিযোগে ১৫-২০টি মামলায় দায়ের করা হয়। চলতি বছর ২৫ জানুয়ারী লকিয়ত উল্ল্যা দেশে আসে। ২৭ জানুয়ারী আমি এলাকার কাউন্সিলরসহ অভিযোগে বর্ণিত স্বাক্ষীদেরকে নিয়ে তার বাড়ীতে যাই। তখন সে তার স্ত্রী উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে বলে ৫ ফেব্রুয়ারি আমার পাওনা এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা ফেরৎত দিবে। আমি তার কথা বিশ্বাস করে ফিরে আসি। কিন্তু ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে আমি সাক্ষীদেরকে নিয়ে তার বাড়ীতে গেলে বাসায় তালা দিয়ে বন্ধ দেখতে পাই।

পরে আশপাশের লোকজনের সাথে আলাপ করলে জানতে পারি, লকিয়ত উল্ল্যা, তার ছেলে ও স্ত্রী একটি প্রতারক চক্র। প্রতারণা থেকে বাচঁতে বাসায় তালা দিয়ে পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপন করে। পরে বিষয়টি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করলে তাহারা স্থানীয়ভাবে প্রতারকদের সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ জানতে পারি লকিয়ত উল্ল্যা ও স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ঢাকায় অজ্ঞাতনামা স্থানে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দুইটিও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

ভুক্তভোগী রহমত উল্যা জানান, প্রতারকচক্র ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হত্যা হুমকি দিয়ে আসছে। এ পরিস্থিতিতে একদিকে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা রয়েছেন।

অন্যদিকে, তার ব্যবসার ৩টি শেয়ারের টাকা হারানোর আতংকে দিশেহারা হয়ে আছেন। তাই তিনি আর কোনো উপায় না দেখে জীবনের নিরাপত্তা ও ব্যবসার এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা ফিরে পেতে আইনী সহযোগিতায় জেলা পুলিশ সুপার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। একই সাথে তিনি বিষয়টি নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে অবহিত করে তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই