ইন্টারনেট আমাদের জন্য ভালো না খারাপ?

আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন, বেশিরভাগ মানুষেরই মনোযোগ পড়ে আছে কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবে। টেকনোলোজির সূক্ষ্ম এক জালে জড়িয়ে গেছে আমাদের জীবন। এটা কি আমাদের জন্য ভালো, না খারাপ?

স্ক্রিনের দিকে এতোটা সময় তাকিয়ে থাকা কি আমাদের জন্য খারাপ নাকি ভালো? এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মাঝে দ্বিমত দেখা যায়। কেউ কেউ বলেন সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন গেমসের পেছনে সময় কাটানোয় আমাদের সামাজিক সম্পর্ক এবং ব্যক্তিত্বে ঘটছে অবনতি। কিন্তু এর বিপরীতেও মত দেন কেউ কেউ।

ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের নিউরোবায়লজিস্ট সুজান গ্রিনফিল্ড সাধারণত পারকিনসন্স এবং আলঝেইমার্স ডিজিজ নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি ইন্টারনেট এবং ভিডিও গেমস অতি ব্যবহারের বিপক্ষে। কিন্তু সমালোচকেরা বলেন তার এই ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি ভিত্তিহীন সব গবেষণায় বিশ্বাস করে জনসাধারণ এবং বিশেষ করে শিশু-কিশোরের পিতামাতার মনে ভুল ধারণা তৈরি করছেন।

সম্প্রতি দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তরুণেরা নিজেদের বন্ধুত্বের বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করার উদ্দেশ্যে। তবে এটা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক মাত্রায় কাজ করে।

গবেষণায় আরও দেখা যায় যারা সামাজিকতা এড়িয়ে চলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন, তাদের জীবনযাত্রা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যারা নিজেদের সামাজিক জীবন উন্নত করতে এটা ব্যবহার করেন তারা আবার সুফল পেয়ে থাকেন।

গ্রিনফিল্ড এটাও দাবি করেন যে ইন্টারনেট ব্যবহারে অটিজমের সুত্রপাত হতে পারে। সমালোচকেরা এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন অটিজম মস্তিষ্কের বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত একটি জটিলতা যা বাচ্চাদের মাঝে স্কুলে যাবার আগেই শনাক্ত করা যায়। এর সাথে ইন্টারনেট ব্যবহারের কোনো সম্পর্ক নেই।

গ্রিনফিল্ডের আরেকটি দাবি হলো, ভিডিও গেমস খেলা মানুষকে হিংস্র করে তোলে এবং মনোযোগের শক্তি কমিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে যথেষ্ট বিভ্রান্তি রয়েছে বিজ্ঞানীদের মাঝেও। কিছু কিছু গবেষণা বলে আগ্রাসী ধরণের ভিডিও গেমগুলো সাময়িকভাবে কারো মাঝে হিংস্র আচরণের উদ্রেক করতে পারে।

ইন্টারনেটে প্রচুর তথ্য মানুষের জন্য উন্মুক্ত। এতো তথ্যও মানুষের জন্য ভালো নয় বলে দাবি করেন গ্রিনফিল্ড। আর কিছু গবেষণায় আসলেই দেখা যায়, মানুষ মনে করে তারা বিভিন্ন তথ্য অনলাইনে দেখে নিতে পারবে। ফলে তারা এসব জিনিস মনে রাখতে আগ্রহী হয় না। তবে এটা আসলে খারাপ কিনা, তাও চিন্তার বিষয়। কারণ অপ্রয়োজনীয় তথ্য মনে না রেখে দরকারি বিষয়ে আমরা নিজেদের মস্তিষ্ক ব্যবহার করতে পারি।

এতে দেখা যাচ্ছে, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইন্টারনেটের প্রভাবের ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের রয়েছে মিশ্র মতামত। কিন্তু শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর যে টেকনোলোজির ব্যবহার আসলেই খারাপ ভূমিকা রাখছে তাতে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। স্ক্রিনের সামনে এতোটা সময় কাটানোর ফলে বাচ্চারা ঘরকুনো হয়ে পড়ছে, ফলে ওবেসিটিসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। অতিরিক্ত ভিডিও গেমস খেলার ফলে পড়াশোনায় ক্ষতি হতে পারে। এসব কারনে চীনে ইন্টারনেট অ্যাডিকশন একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।

ইন্টারনেটের অনেক উপকারী দিক আছে সত্যি। কিন্তু একটু অসাবধানতায় আমরাই পড়তে পারি ক্ষতির মুখে। এ কারণে আমাদের বিবেচনার ওপরেই নির্ভর করছে ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলাফল।

মূল: Here’s what science says about how digital technology REALLY affects our brains by Tanya Lewis, Business Insider



মন্তব্য চালু নেই