ইন্দোনেশিয়ার মানসিক রোগীদের কারাগার

ইন্দোনেশিয়ায় যারা মানসিক রোগী তারা বিভিন্নভাবে নিজের পরিবারের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়। পরিবারের সদস্যরা কখনো আবার বোঝা মনে করে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেয় মানসিক হাসপাতালে। তবে যেখানে তাদের পাঠানো হয় সেটা মানসিক হাসপাতাল, নাকি মানসিক রোগিদের কারাগার সেটা খতিয়ে দেখে না কেউ। এই মানসিক রোগিদের কারাগারে তাদের জন্য কতটুকু নিরাপদ তা হয়তো জানা থাকে না অধিকাংশেরই।

সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, সুস্থ হওয়ার জন্য যাদের মানসিক হাসপাতালে পাঠানো সেখানেই তারা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পরে। বিশেষ করে মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। কারণ প্রতিনিয়ত তাদের হাত-পা শেকলে বেধে করা হয় যৌন নির্যাতন।

2016_03_21_16_58_43_UYDyNrnDpD1aXONwgwClBBFIEhLK7z_original

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, পুরো ইন্দোনেশিয়া জুড়ে এমন ৫৭ হাজার মানসিক রোগী আছে যাদের সবার অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, কারাগারের ভেতর থাকা কয়েদিরাও এদের চেয়ে ভালো জীবনযাপন করে। ইন্দোনেশিয়ার এমন কয়টি মানসিক রোগিদের কারাগার আছে যেখানকার চিত্র এক কথায় হৃদয়বিদারক। একটি অন্ধকার ঘরের মেঝেতে শেকল দিয়ে বেধে রাখা হয় মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলা মানুষদের।

ইন্দোনেশিয়ার ভাষায় মানসকি রোগী রাখার এই কারাগারকে পাসোং বলা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই ধরণের মানসিক রোগিদের কারাগার নিষিদ্ধ করা হয় সেই ১৯৭৭ সালে। মানসিক কারাগারের বদলে ভারসম্যহীন ওই সব রোগীকে রাখার জন্য তৈরি করা হতো মানসিক হাসপাতাল। যেখানে তারা চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পাবে থাকার সুবিধা।

2016_03_21_16_58_38_NrwotfTy0DkKrLQB2xuDilQQS9VD8r_original

তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মানসিক রোগিদের কারগার নিষিদ্ধ হলেও ইন্দোনেশিয়ায় এখনও এই কারাগার দেখা যায়। সম্প্রতি দেশটির এমন একটি কারাগার থেকে ১৭৫ জন মানসিক রোগীকে উদ্ধার করা হয়। আর এ নিয়ে এ বছর প্রায় দু’শ জনের মতো মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে উদ্ধার করা হলো। উদ্ধারকারীরা সেখানকার চিত্র দেখে পুরোই হতভম্ব। তারা মনে করেন, মানসিক রোগীদের সমাজের অভিশাপ বলে গন্য করা হয় আর এ জন্য তাদের সভ্য সমাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। ফলে তারা সুস্থ হওয়ার চেয়ে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পরে।

ইন্দোনেশীয় মেন্টাল হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ইয়েনি রোজা জামোয়েন্তি বলেন, ‘আপনি যদি জাভার কোনজায়গায় পাথর নিক্ষেপ করেন তাহলে সেই আঘাত সরাসরি পাসোং এ আঘাত আনবে। তাই দেশটির এই পাসোংগুলো এতটা প্রভাবশালী। এখানে এমন অনেক মানসিক রোগী আছে যারা একযুগ পার করে দিয়েছে একটি অন্ধকার ঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায়।

২৪ বছরের ইসমায়া তিন সপ্তাহ হলো পসোং এ এসেছে। তার ভাষ্যমতে, ‘ আমাকে এখানে হাতে পায়ে শেকল দিয়ে বেধে রাখা হয়। এই শেকলগুলো দিয়ে সাধারণত আমরা কুকুর বেধে রাখি। আমি যতই এখান থেকে পালাতে চেষ্টা করি আমার হাত-পায়ের শেকল ততোই শক্ত করে বেধে দেয়া হয়’। এমনকি বাথরুমে যাওয়ার জন্যও আমাকে অনুমতি নিতে হয়’।

2016_03_21_16_58_44_ohdWbVYu1KDZX9Rli0oSOgDOOokG9e_original

২৫০ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশটিতে মাত্র ৪৮ টি মানসিক হাসপাতাল আছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এদিকে এই বিষয় নিয়ে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। তারা আরো জানায়, প্রত্যেক নাগরিকেরই স্বাধীনভাবে চলার স্বাধীনতা আছে। দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী এবং কোনো দিক দিয়ে এর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়।

তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে পাসোং বিরোধী পুলিশ এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা এখান থেকে পালানোর চেষ্টা করছে তাদেরকে উদ্ধার করে মানসিক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই অভিযানের পরও এখন পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন পাসোং’এ ১৮ হাজারেরও বেশি মানসিক রোগী আছে। তবে পুলিশের উপস্থিতিতেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হিমসিম খাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে দেশটিকে আন্তর্জাতিক সহায়তা দেবে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে জানানো হয়।



মন্তব্য চালু নেই