ইন্দোনেশিয়ায় সমুদ্রের তলায় ৫০০০ বছরেরও বেশি পুরনো বিষ্ণু মন্দির! রহস্যটা কী?

হিন্দু ধর্মের ইতিহাস ১২ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। একটা সময় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ছাড়িয়ে কম্বোডিয়াতে বিস্তার ঘটেছিল হিন্দু ধর্মের। তৎকালীন এক বিষ্ণু মন্দিরেরই সন্ধান মিলেছে বালির সমুদ্রের তলায়।

image (4)

ইন্দোনেশিয়ার বালির উপকূল ঘেঁষা পেমুটেরান গ্রাম। এখানেই সমুদ্রের তলায় খোঁজ মিলেছিল এক প্রাচীন বিষ্ণু মন্দিরের। পদ্মের উপর বসে থাকা বিষ্ণুর মূর্তিও পাওয়া গিয়েছে এখানে। শুধু তাই নয়, ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তিও রয়েছে এখানকার জলের তলায়। সেইসঙ্গে রয়েছে এক বুদ্ধ মন্দির। পুরো এলাকাটাকেই ঘিরে রেখেছে এক পাথরের দেওয়াল। যা দেখে মনে হতেই পারে এখানে একটা সময় বিশাল বাগানও ছিল। জলের তলায় থাকা এই বিষ্ণু এবং বুদ্ধ মন্দির দর্শন করতে ডুবরির পোশাক পরেই নামতে হয়। বর্তমানে এলাকাটিতে স্কুবা ডাইভিং চালু করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। ফি বছরই প্রচুর সংখ্যক পর্যটক ভীড় জমাচ্ছেন সমুদ্রের তলায় এই বিষ্ণু মন্দির দেখতে।

image (5)

 

একটা সময় ইন্দোনেশিয়া ছিল হিন্দু ধর্মে প্রভাবিত। ফলে সেখানে প্রাচীন হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি বা মন্দির পাওয়া খুব একটা অত্যাশ্চর্য বিষয় নয়। কিন্তু, জলের তলায় বিষ্ণু মন্দির এবং তার গায়ে গা লাগিয়ে বুদ্ধ মন্দির থাকাটা কি খুব স্বাভাবিক? এই প্রশ্ন বিশ্বজুড়ে উঠেছিল। ২০০৫ সালে বালি উপকূলের যে পেমুটেরান গ্রামের সমুদ্রের তলায় বিষ্ণু মন্দির এবং বুদ্ধ মন্দিরের খোঁজ মিলেছিল সেখানে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না বলেই অনেকে দাবি করতে থাকেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ইতিহাসবিদরা ছুঁটেছিলেন পেমুটেরানে। ভারত থেকেও হিন্দু ধর্ম নিয়ে গবেষণাকারীর দল পৌঁছেছিলেন সেখানে। ইন্দোনেশিয়া সরকারও সরকারিভাবে তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেদেশের পুরাতত্ত্ব বিভাগও তদন্তে নামে।

image (3)

দেখা যায় গোটা ঘটনাই সাজানো। সমুদ্রের তলায় ৫ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো বিষ্ণু মন্দির এবং বুদ্ধ মন্দির পাওয়া গিয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছিল, তা সঠিক নয়। জানা যায়, ‘পরিবেশ রক্ষা’ সংক্রান্ত এক প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে পেমুটেরান গ্রামে সমুদ্রের তলায় একটি ‘রিফ গার্ডেন’ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যেহেতু ইন্দোনেশিয়ায় হিন্দু ধর্মের একটা প্রভাব রয়েছে, সেটাকে কাজে লাগাতেই বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাচীন বিষ্ণু মূর্তি এবং বুদ্ধ মূর্তি সংগ্রহ করে আনা হয়। কিছু দেবদেবীর মূর্তি প্রাচীন মূর্তির মতো দেখতে করে বানিয়েও নেওয়া হয়। এমনকী, সমুদ্রের তলায় মন্দির ও পাথুরে বাগান যে বসবে, তার সবটাই জলের উপরে তৈরি করা হয়। এরপর অত্যন্ত দক্ষ স্কুবা ডাইভারদের দিয়ে এগুলি জলের তলায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে মূর্তি, মন্দির এবং পাথুরে বাগানকে স্থাপন করা হয়। দু’ধাপে এই ‘রিফ গার্ডেন’ জলের তলায় তৈরি করা হয় বলে স্বীকার করে নেন ক্রিস ব্রাউন নামে এক অস্ট্রেলিয়ান। কারণ এই ব্রাউনেরই মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল ‘রিফ গার্ডেন’। সমুদ্রের ২৯ ফিট গভীরে এর জন্য আড়াই হাজার স্কোয়ার মিটার জায়গাকে চিহ্নিতও করা হয়েছিল। পর্যটক টানতে তাই ৫ হাজার বছরের বেশি পুরনো মন্দিরের গল্প প্রচার করেছিলেন এই প্রকল্পের পিছনে থাকা মাথারা।

image (6)

ভিডিও:



মন্তব্য চালু নেই