ইলিশ বাজারে বৈশাখী হাওয়া

ইলিশের তাপে ক্রেতাদের গায়ে জ্বর

আর মাত্র কয়েকদিন পরেই বাঙালির অন্যতম প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ ১৪২৩। বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির ঐতিহ্য প্রকাশের প্রধান উৎসব এটি। পান্তা আর ইলিশ ছাড়া যেন এ উৎসব পূর্ণতাই পায় না। বর্ষবরণের এ দিনটিতে বাঙালির প্রধান আকর্ষণই পান্তা ইলিশ, কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজের সাথে বড় একটা ইলিশ মাছের মুঁড়ো দিয়ে নববর্ষের প্রথম দিনটা উদযাপন করতে চায় প্রত্যেকটি মানুষ।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাজারে ইলিশের চাহিদা অনিকগুন বেড়ে গেছে। অসাম্প্রদায়িক বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষকে সামনে রেখে ক্রেতা-বিক্রেতা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কে আগে কিনবে আর কে আগে বিক্রি করবে, ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে- প্রতিযোগিতা।

এদিকে, পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে আগে থেকেই বাজারে ইলিশের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়, কারো কারো ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ ইলিশ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। বেশি দামের কারণে ক্রেতাদের ঘুরতে হচ্ছে বিভিন্ন বাজার।

অন্যদিকে, দেড় কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের এক হালি (চারটি) ইলিশের দাম ২৭ হজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে শুক্রবার রাজধানীর খিলগাঁও, পরীবাগ, হাতিরপুর, যাত্রাবাড়ী, কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে বিভিন্ন চিত্র দেখা যায়। তবে বেশির ভাগ মানুষই ইলিশ মাছ কিনছেন। আবার দামের দিক দিয়ে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ আনছেন।

কারওয়ান বাজারের আরেক মৎস ব্যবসায়ী জানান, এ বছরের পহেলা বৈশাখ ১৪ এপ্রিলে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার। শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়ার কারণে বেশির ভাগ মানুষ ইলিশ কিনতে সকাল থেকে বাজারে ভিড় জমাচ্ছেন। বেশির ভাগ মানুষ ১ কেজি ওজনের ইলিশই বেশি কিনছেন বলে জানান তিনি।

মোখলেছ নামে এক মাছ ব্যবসায়ী তার অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে জানান, আজ সকালে এক ভদ্রলোকের কাছে এক হালি ইলিশ বিক্রি করেছেন ৩০ হাজার টাকা। তবে ইলিশগুলো একটু বড় হওয়াতে দাম বেশি পড়েছে। ভদ্র লোকও খুশির সাথে ইলিশগুলো ক্রয় করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাজারে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের দাম ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা। এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ ৫ থেকে ৭ হাজার ৫শ’ টাকা। ৭শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম ওজনের মাঝারি ইলিশ প্রতিটি ১ হাজার থেকে ১৪শ’ টাকায়, ছোট আকারের ৪শ’ থেকে ৬শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিটি ৭শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে আরেক মৎস্য ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, বৈশাখের কারণে বাজারে মাছের চাহিদা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে কিছু কিছু এলাকায় সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাজারে মাছের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে মাছ কম থাকায় এবং ক্রেতা বেশি হওয়ায় ইলিশের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। তবে তা ক্রেতাদের হাতের নাগালেই রয়েছে।

ক্রেতাদের দাবি, বৈশাখ মাস আসার আগেই নানা বাহনা দেখিয়ে মাছ ব্যবসায়ীরা ইলিশের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

রাজধানীর মানিক নগর থেকে কারওরান বাজারে মাছ কিনতে আসা এক বেসরকারি চাকরিজীবী সাখাওয়াত হোসেন জানান, পহেলা বৈশাখ তো বাঙালির জন্য একটি উৎসবের দিন। সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আনন্দ-বিনোদন পালন করবে এবং একে অন্যের বাসায় অথবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটু পান্তা ইলিশ খাবে। কিন্তু এ উৎসব আসলে কেন জানি হুহু করে ইলিশের দাম বেড়ে যায়। এতে করে অনেক মানুষের পান্তা ইলিশ বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। দাম বেশি হওয়াতে বিভিন্ন বাজার ঘুরে ঘুরে যাছাই বাছাই করে ইলিশ ক্রয় করতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই