ইসরায়েল সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী

ভারত ও ইসরায়েলের সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী আজ থেকে তাঁর ঐতিহাসিক ইসরায়েল সফর শুরু করেছেন।

এই প্রথম ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টের মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতা ইসরায়েলে গেলেন, আর এই সফরে মি. মুখার্জী সে দেশের পার্লামেন্ট ক্নেসেটেও ভাষণ দেবেন।

এই একই সফরে একটা দিন ফিলিস্তিনকেও বরাদ্দ করে ভারত যদিও তার পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছে, পর্যবেক্ষকরা বলছেন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করার ক্ষেত্রে ভারতের যে আর কোনও দ্বিধাই নেই রাষ্ট্রপতির সফর তারই প্রমাণ।

আরব লীগের বাইরে বিশ্বের প্রথম যে দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তারা ভারত। ফিলিস্তিনি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসের আরাফতের সঙ্গেও ভারতীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতা ছিল সুবিদিত।

কিন্তু ১৯৯২তে ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই প্রতিরক্ষা-কৃষি-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি থেকে শুরু করে জঙ্গী দমন নানা ক্ষেত্রেই দুই দেশের সহযোগিতা বেড়েছে – আর অন্যদিকে ধীরে ধীরে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে ভারত-ফিলিস্তিনের সম্পর্কে।

এ বছরের গোড়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভোটাভুটিতেও প্রথমবারের মতো বিরত থেকেছে ভারত। আর এমন এক পটভূমিতেই মঙ্গলবার ইসরায়েলে তাঁর সফর শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি (ইস্ট) অনিল ওয়াধওয়া-র কথায়, ‘ভারত ও ইসরায়েল উভয় দেশই তাদের জন্মলগ্ন থেকে মানবসভ্যতা ও ইতিহাসে স্থায়ী দাগ রেখে গেছে। ভিন্ন পথে হলেও দুদেশের স্বাধীনতাও প্রায় একই সঙ্গে, আর তাদের দেশগঠন আর গণতন্ত্রের পথে যাত্রাও শুরু একই সময়ে। এই দুই দেশই তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রতিরক্ষা, সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক খাতে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ওপর ভীষণ গুরুত্ব দিচ্ছে।’

জেরুসালেমে আজ রাষ্ট্রপতি মুখার্জী দেখা করছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-র সঙ্গে, কাল তাঁর বৈঠক সে দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। সফরে দুই দেশের মধ্যে অজস্র সমঝোতা স্বাক্ষরিত হবে বলেও কথা রয়েছে।

ইসরায়েলে তিনি কাটাচ্ছেন প্রায় তিনদিন, সেখানে ফিলিস্তিনে ছিলেন মাত্র একটা দিন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব বা মুখপাত্র বেণু রাজামণি বলছিলেন প্রথম কোনও ভারতীয় নেতা হিসেবে এই দেশগুলোতে এক ঐতিহাসিক সফরে যেতে পেরে রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত আনন্দিত।

‘ব্যক্তিগতভাবেও তাঁর আগে কখনও ওই অঞ্চলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। ইসরায়েলের পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়া বা সে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় ছাড়াও হিব্রু ইউনিভার্সিটি তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেটে ভূষিত করবে’, জানান মি রাজামণি।

পর্যবেক্ষকরাও বলছেন রাষ্ট্রপতির এই সফর কোনও রুটিন বিদেশযাত্রা নয়, বরং ভারত-ইসরায়েল সম্পর্কেই একটা পাকাপাকি সিলমোহর।

২০০৩ সালে তদানীন্তন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারন যখন প্রথম ভারত-সফরে আসেন, তখনও দিল্লিতে ছিল একটি বিজেপি সরকার।

ভারত-ইসরায়েল সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ বিজেতা উন্যিয়াল মনে করেন এর পর দশ বছরের কংগ্রেস আমলেও সেই সম্পর্কের ক্রমশ উন্নতি হয়েছে – কিন্তু তখন ভারত সেটা খুব ফলাও করে প্রচার করতে চাইত না।

মি উন্যিয়ালের মতে, ‘প্রতিরক্ষা থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বিভিন্ন খাতে দুদেশের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা নিয়ে দিল্লির নতুন সরকার কিন্তু কোনও রাখঢাকে বিশ্বাসী নয়। তারা মনে করে ভারত ও ইসরায়েল উভয় দেশই ইসলামী সন্ত্রাসের শিকার ও একযোগেই তারা তা মোকাবিলা করতে পারে।’

‘গড়পড়তা ভারতীয়রাও ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল, ভারতীয় ভূখন্ডে তারা অনেকে যে হিন্দুরাষ্ট্রের কথা বলেন ইসরায়েলিদের রাষ্ট্রভাবনার সঙ্গেও তার মিল আছে। ফলে ইহুদী রাষ্ট্রের ব্যাপারটা ইউরোপীয়দের বোধগম্য না-হলেও ভারতীয়রা ঠিকই বোঝেন’, বলছিলেন মি উন্যিয়াল।

কাগজে কলমে ভারত অবশ্য পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের দাবি থেকে এখনও সরছে না।

কিন্তু দিল্লি আর তেল আবিব যেভাবে ক্রমশ আরও কাছাকাছি আসছে – তাতে এটা স্পষ্ট যে ফিলিস্তিনিদের দৃষ্টিতে ভারত তাদের আর সেই পুরনো ভরসার জায়গায় নেই।বিবিসি বাংলা



মন্তব্য চালু নেই