ইসি গঠনে ‘এখনই’ আইন করতে রাজি আ. লীগ

সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ‘এখনই’ নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করতে রাজি বলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে এই আলোচনায় অংশ নেয়।

বঙ্গভবনের দরবার হলে দেড় ঘণ্টার এই সংলাপের পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের সামনে আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

আওয়ামী লীগের প্রস্তাবগুলো রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রস্তাবে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সম্ভব হলে এখনই একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন অথবা অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে।

‘সময় স্বল্পতার কারণে আগামী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সময় যাতে এর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে এখন থেকেই সে উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়।’

সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে। এ বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু ইসি গঠনের আইন এতোদিনেও না হওয়ায় গতবারের মত এবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ‌্যমে নতুন কমিশন গঠনের এই উদ‌্যোগ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

এর আগে সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ‌্যে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয়পার্টিসহ কয়েকটি দল চলতি সংসদেই ইসি গঠনের বিল তোলার প্রস্তাব করেছে। অন‌্যদিকে বিএনপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বর্তমান সংসদকে ‘জনপ্রতিনিধিত্বহীন’ আখ‌্যায়িত করে ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, ভবিষ্যতে নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক হোক এটা সরকার বা আওয়ামী লীগ চায় না।

“তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যা উপযুক্ত মনে করবেন, সে প্রক্রিয়ায় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতির গৃহীত যে কোনো ন্যায়সঙ্গত উদ্যোগের প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন থাকবে’।”

নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে আওয়ামী লীগ ই-ভোটিং চালুর প্রস্তাব করেছে বলেও রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জানান।

আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে বিরাজমান সকল বিধিবিধানের সাথে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ই-ভোটিং’ এর প্রবর্তন করা হোক।’

জয়নাল আবেদীন বলেন, আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলকে ধন্যবাদ জানান।

“তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ। অবাধ নির্বাচনে সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।”

সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে বলেও রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন।

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবুল মাল আবদুল মুহিত, এইচ টি ইমাম, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মোহাম্মদ জমির।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন খসরু, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও ছিলেন প্রতিনিধি দলে।

সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা মধ্য দিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ।

ইসির নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ‌্যে চার দফায় মোট ২৩টি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির আলোচনা শেষ হয়েছে। পঞ্চম দফায় আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে রাষ্ট্রপতি সংলাপের আমন্ত্রণ জানাবেন বলে বঙ্গভবন থেকে জানানো হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই